Dhaka Capitals VS Sylhet Strikers: জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এক রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৬ রানে হারিয়ে নিজেদের টুর্নামেন্টে টিকে থাকার সম্ভাবনা জিইয়ে রাখলো ঢাকা ক্যাপিটালস।
শাকিব খানের মালিকানাধীন এই দলটি টানা ছয় ম্যাচে হারের পর অবশেষে তাদের দ্বিতীয় জয় তুলে নিল। তবে এই জয় সত্ত্বেও, প্লে-অফে যাওয়ার জন্য ঢাকার সামনে এখনও অনেক সমীকরণ বাকি।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
ঢাকার শক্তিশালী ব্যাটিং প্রদর্শনী
টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা ক্যাপিটালস। ওপেনার তানজিদ তামিম ভালো শুরু করলেও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন। ১৬ বলে ২২ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এরপর নামিবিয়ার ব্যাটার জেপি কোৎজে (৮ বলে ৯) এবং মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (৭ বলে ৪) দ্রুত আউট হয়ে যান। তবে চতুর্থ উইকেটে সাব্বির রহমান ও লিটন দাস মিলে ইনিংস মেরামতের কাজ করেন।
লিটন দাস ছিলেন ঢাকার ইনিংসের প্রাণভোমরা। তার ৪৮ বলে ৭০ রানের ঝোড়ো ইনিংসে ছিল ৪টি চার এবং সমান সংখ্যক ছক্কা। সাব্বির রহমানের সঙ্গে তার ৩৮ বলে ৪২ রানের জুটি ঢাকার স্কোরকে স্থিতিশীল করে। সাব্বির ২১ বলে ২৪ রান করে আউট হন।
আরও পড়ুন: মহিদুল ইসলাম অঙ্কন: ১৮ বলে ফিফটি, বাংলাদেশের দ্রুততম রেকর্ড গড়া তারকা
পঞ্চম উইকেটে থিসারা পেরেরার সঙ্গে লিটনের বিধ্বংসী জুটি ঢাকার স্কোরকে বড় পুঁজি গড়তে সাহায্য করে। মাত্র ২৮ বলে তারা যোগ করেন ৮১ রান। লিটন আউট হওয়ার আগে তার ঝোড়ো ইনিংসে ঢাকার স্কোর পৌঁছে যায় নিরাপদ জায়গায়। থিসারা পেরেরা শেষ মুহূর্তে ১৭ বলে ৩৭ রান করেন, যেখানে ছিল ৩টি চার ও সমান সংখ্যক ছক্কা। নির্ধারিত ২০ ওভারে ঢাকা ক্যাপিটালস তুলতে সক্ষম হয় ১৯৬ রান।
সিলেটের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য তাড়া
১৯৭ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সিলেট স্ট্রাইকার্সের শুরুটা ছিল হতাশাজনক। ওপেনার জর্জ মুনসে মাত্র ৫ বলে ৩ রান করে মোসাদ্দেক হোসেনের বলে বোল্ড হয়ে যান। অপর ওপেনার জাকির হাসানও সুবিধা করতে পারেননি; তিনি মোস্তাফিজুর রহমানের শিকার হন মাত্র ৭ বলে ৮ রান করে।
পাওয়ার প্লেতে সিলেট সংগ্রহ করে মাত্র ৩৭ রান, যা তাদের চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়। এরপর রনি তালুকদার ও অ্যারন জোন্স দলের হাল ধরেন। রনি তার স্বভাবসুলভ আগ্রাসী ব্যাটিং চালিয়ে ফিফটি পূর্ণ করেন মাত্র ৩৩ বলে। তবে অ্যারন জোন্স টি-টোয়েন্টি মেজাজে খেলতে ব্যর্থ হন এবং শেষ পর্যন্ত থিসারা পেরেরার বলে আকাশে ক্যাচ তুলে দিয়ে আউট হন। তার ইনিংস ছিল ৩২ বলে মাত্র ৩৬ রানের।
শেষ ছয় ওভারে সিলেটের প্রয়োজন ছিল ৮৩ রান, যা ম্যাচকে ঢাকার দিকে হেলে দেয়। তবে রনি তালুকদার একপ্রান্ত ধরে লড়াই চালিয়ে যান এবং শেষ পর্যন্ত তিনি আউট হন ৪৪ বলে ৯ বাউন্ডারিতে সাজানো ৬৮ রানের ইনিংসে।
Dhaka Capitals VS Sylhet Strikers: শেষ ওভারের নাটকীয়তা
শেষ দুই ওভারে সিলেটের প্রয়োজন ছিল ৪০ রান। তখনই ঝড় তোলেন জাকের আলী এবং আরিফুল হক। মুকিদুল ইসলামের করা উনিশতম ওভারে তারা মিলে সংগ্রহ করেন ১৭ রান, যেখানে আরিফুল শেষ বলটি চার মারেন।
শেষ ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে বল তুলে দেন ঢাকার অধিনায়ক থিসারা পেরেরা। সিলেটের প্রয়োজন ছিল তখনও ২৩ রান। প্রথম বলেই সামিউল্লাহ শিনওয়ারি ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন। দ্বিতীয় বল ওয়াইড হলেও পরবর্তী বলেই চার মারেন তিনি। তখন শেষ চার বলে দরকার ছিল মাত্র ১২ রান।
এই চাপের মুহূর্তেও মাথা ঠান্ডা রেখে বল করেন মোস্তাফিজ। তৃতীয় বলে সিঙ্গেল নেওয়ার পর পরবর্তী দুই ডেলিভারিতে সিলেট হারায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট—আরিফুল হক এবং সুমন খান। আরিফুল করেন ঝোড়ো গতিতে খেলা একটি ইনিংস; মাত্র ১৩ বলে তিনি করেন ২৯ রান। তবে তার আউট হওয়া ম্যাচ থেকে কার্যত সিলেটকে ছিটকে দেয়।
আরও পড়ুন: রংপুর রাইডার্স বনাম ঢাকা ক্যাপিটালস: কোথায় শক্তি, কোথায় দুর্বলতা? কে জিতবে?
শেষ বলটি চার মারলেও তা যথেষ্ট হয়নি সিলেটের জন্য, এবং ঢাকা ক্যাপিটালস জয় তুলে নেয় মাত্র ছয় রানের ব্যবধানে।
ঢাকার সম্ভাবনা এখনও জীবিত
এই জয়ে ঢাকা ক্যাপিটালস তাদের টুর্নামেন্টে টিকে থাকার ক্ষীণ আশা বাঁচিয়ে রাখলো। তারা এখন পর্যন্ত নয় ম্যাচ খেলে দুই জয় পেয়েছে এবং হাতে রয়েছে আরও তিনটি ম্যাচ। এই তিনটি ম্যাচ জিতলে এবং অন্যান্য দলগুলোর ফলাফল তাদের পক্ষে গেলে তারা প্লে-অফে জায়গা করে নিতে পারে।
অন্যদিকে, টানা তৃতীয় ম্যাচে হেরে চাপে পড়েছে সিলেট স্ট্রাইকার্স। আট ম্যাচে তাদের জয় মাত্র দুটি, যা তাদের প্লে-অফ নিশ্চিত করার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ম্যাচের প্রধান পারফর্মাররা
- ঢাকা ক্যাপিটালস:
- লিটন দাস: ৪৮ বলে ৭০ রান (৪ চার, ৪ ছক্কা)
- থিসারা পেরেরা: ১৭ বলে ৩৭ রান (৩ চার, ৩ ছক্কা) এবং বল হাতে দুই উইকেট
- মোস্তাফিজুর রহমান: শেষ ওভারে দুর্দান্ত বোলিংসহ মোট দুই উইকেট
- সিলেট স্ট্রাইকার্স:
- রনি তালুকদার: ৪৪ বলে ৬৮ রান (৯ বাউন্ডারি)
- আরিফুল হক: মাত্র ১৩ বলে ঝোড়ো গতিতে করা গুরুত্বপূর্ণ ২৯ রান
শেষ কথা
“Dhaka Capitals vs Sylhet Strikers” ম্যাচটি ছিল একটি উত্তেজনায় ভরা টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা যেখানে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জয়-পরাজয়ের হিসাব পরিষ্কার ছিল না। ঢাকার এই জয় তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে এবং টুর্নামেন্টে নতুন করে লড়াই করার প্রেরণা যোগাবে। অন্যদিকে, সিলেট স্ট্রাইকার্সকে এখন নিজেদের ভুলগুলো শুধরে নিয়ে পরবর্তী ম্যাচগুলোতে ঘুরে দাঁড়াতে হবে, নচেত প্লে-অফ থেকে ছিটকে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হবে।
এই ম্যাচটি শুধু “Dhaka Capitals vs Sylhet Strikers” প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি অধ্যায় নয়, বরং এটি প্রমাণ করে যে ক্রিকেট মাঠে শেষ বল পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ!
1 thought on “Dhaka Capitals VS Sylhet Strikers- রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে সিলেটকে হারিয়ে টিকে রইলো ঢাকা”