ভারত বনাম ইংল্যান্ড: পুনেতে অনুষ্ঠিত চতুর্থ টি-২০ ম্যাচে ভারত ইংল্যান্ডকে ১৫ রানে পরাজিত করে পাঁচ ম্যাচের সিরিজের বিজয় নিশ্চিত করেছে। ভারতীয় দলের শক্তিশালী পারফরম্যান্স এবং ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ব্যর্থতার ফলে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়।
এই জয় ভারতের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের বিশ্বকাপের প্রস্তুতির একটি মাইলফলক। এমনকি ভারতের জন্য এটি একটি আত্মবিশ্বাসী মুহূর্ত ছিল, যেখানে হারশিত রানা কনকাশন সাব হিসেবে মাঠে নেমে ৩৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও জিতেন। এই ম্যাচে ভারতীয় দল ১৮১/৯ থেকে ইংল্যান্ডকে ১৬৬ রানে অলআউট করে জয় পায়।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

ম্যাচের শুরু এবং ভারতের ব্যাটিং
ভারতীয় দলের জন্য এই ম্যাচের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে ভারতীয় দল শুরুর ধাক্কায় পড়েছিল। দলীয় ১২ রানে সাকিব মাহমুদের বলে সঞ্জু স্যামসন, তিলক ভার্মা এবং সূর্যকুমার যাদব আউট হয়ে যান। এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেটের পতন ঘটিয়ে ইংল্যান্ড ভারতীয় ব্যাটিংকে চাপে ফেলেছিল।
তবে এরপর ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে রিঙ্কু সিং ও অভিষেক শর্মা ধীরে ধীরে দলের পরিস্থিতি সামলান। অভিষেক শর্মা ২৯ রান করে আউট হলেও, রিঙ্কু সিং ৩০ রান করে আউট হন, এবং ভারতের ইনিংসের ভিত্তি গড়ে দেন হার্দিক পান্ডিয়া ও শিবম দুবে।
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়া বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা: অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা
আরও পড়ুন
হার্দিক পান্ডিয়া ছিলেন সত্যিই বিধ্বংসী। ৪ চার ও ৪ ছক্কায় ৩০ বলে ৫৩ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস খেলেন। তবে তার আউট হওয়া এবং ম্যাচের ১৮তম ওভারে তিনি ফিরে আসার পর ভারতের ব্যাটিং লাইন আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। শিবম দুবে ৩৪ বলে ৫৩ রান করে শেষ বলে রান আউট হন, কিন্তু ভারতের সংগ্রহ তখন ১৮১ রানে পৌঁছেছে।
ইংল্যান্ডের ব্যাটিং শুরু এবং চাপে পড়া
১৮২ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ইংল্যান্ড শুরুতে দারুণ মেজাজে ছিল। পাওয়ারপ্লের প্রথম কয়েকটি ওভার থেকেই ইংল্যান্ডের ওপেনাররা দুর্দান্ত ব্যাটিং করছিলেন। বেন ডাকেট এবং জস বাটলারের মধ্যে ভালো একটি পার্টনারশিপ গড়ে ওঠে। পাওয়ারপ্লে শেষ হওয়ার পর ৬২ রান চলে আসে, তবে বেন ডাকেটের আউট হওয়ার পর ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ধীরে ধীরে সমস্যায় পড়তে শুরু করে।
পাওয়ারপ্লের পর ইংল্যান্ডের মিডল অর্ডারে দ্রুত পতন ঘটে। সপ্তম ওভারে অক্ষর প্যাটেল ফিল সল্টকে আউট করেন এবং পরবর্তী ওভারে আউট হন অধিনায়ক জস বাটলারও। পরে, বিপদ সামলাতে এসে লিয়াম লিভিংস্টোনও বেশি সময় মাঠে থাকতে পারেননি। মাত্র ১৩ বল খেলে ৯ রান করে হারশিত রানা তাকে আউট করেন।
আরও পড়ুন: ফ্রি টাকা ইনকাম বিকাশে পেমেন্ট: সহজ উপায়ে আয় করুন
এরপর হ্যারি ব্রুক এক প্রান্তে লড়াই চালিয়ে যান। তিনি ৫ চার ও ২ ছক্কায় ২৫ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন। কিন্তু অর্ধশতক করার পরেই ভারুন চক্রবর্তীর বলে আউট হয়ে যান। ব্রুকের বিদায়ের পর ইংল্যান্ড আর কোন লড়াই করতে পারেনি।
পরবর্তী কয়েকটি আউট ইংল্যান্ডের ব্যাটিংকে আরও দুর্বল করে দেয়। ব্রাইডন কার্স, জ্যাকব বেথেল এবং জফরা আর্চাররা পরপর আউট হয়ে যান। ইংল্যান্ডের স্কোর ১৬৬ রানে পৌঁছানোর আগেই তারা অলআউট হয়ে যায়।
হারশিত রানার কনকাশন সাব পারফরম্যান্স
হারশিত রানা আজকের ম্যাচে কনকাশন সাব হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন, এবং তিনি দুর্দান্ত বোলিং করে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ ভেঙে দেন। ৩৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে তিনি ম্যাচ সেরা খেলোয়াড় হন। তার বোলিং ছিল ভারতীয় দলের জন্য সত্যিই একটি আশীর্বাদ, কারণ যখন ইংল্যান্ড একটি বড় লক্ষ্য তাড়াতে মরিয়া ছিল, তখন তার সঠিক পরিকল্পনা এবং আক্রমণ ইংল্যান্ডের ব্যাটিংকে ব্যর্থ করে দেয়।
রানা দলের জন্য একটি বড় উপহার হয়ে দাঁড়ান, বিশেষ করে যখন একের পর এক ইংল্যান্ডের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানরা আউট হয়ে যাচ্ছিল। তাঁর বোলিং ছিল নিয়ন্ত্রিত এবং পরিকল্পিত, যা ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।


ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট
এই ম্যাচের প্রধান টার্নিং পয়েন্ট ছিল হারশিত রানার বোলিং। কনকাশন সাব হিসেবে প্রথমবার মাঠে নেমে তিনি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়ে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন। তার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ভারতের জন্য খুবই মাইলফলক হয়ে দাঁড়ায়, বিশেষ করে যেহেতু তার বোলিং ব্যাটিং ইউনিটের পরবর্তী পারফরম্যান্সকে আরও শক্তিশালী করে।
ভারতের বোলিং আক্রমণ ছিল দুর্দান্ত, যার মধ্যে অর্শদীপ সিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ মৃত্যুর ওভার ছিল। এদিকে, মহম্মদ শামি ও রবী বিশ্নোইয়ের দুর্দান্ত স্পেলও ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলেছিল।
ভারতীয় দলের কৌশল
ভারতীয় দলের কোচ রাহুল দ্রাবিড় ম্যাচ শেষে বলেন, “আমরা জানতাম ইংল্যান্ড একটি শক্তিশালী দল, কিন্তু আমাদের পরিকল্পনা ছিল শক্তিশালী। আমাদের বোলিং ইউনিট এবং ব্যাটিং পারফরম্যান্স একত্রে আমাদের জয় এনে দিয়েছে।”
ভারতীয় দলের এই কৌশল খুবই সঠিক ছিল। প্রথমে ব্যাটিং করার পর তারা গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে জয় পেয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত ১৮১ রানে শেষ করে ইংল্যান্ডের পক্ষে একটি কঠিন লক্ষ্য তৈরি করে। তাদের বোলিং ছিল এতটাই শক্তিশালী, যে ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা তা সামলাতে পারেনি।
সিরিজ জয় এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
এই জয় ভারতের জন্য বিশাল এক অর্জন, কারণ তারা ৩-১ লিড নিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে। ভারতের খেলোয়াড়রা এখন আরও আত্মবিশ্বাসী এবং তারা বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে চলছে। তাদের এই পারফরম্যান্স বিশ্বকাপের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, ইংল্যান্ড দলের জন্য এটি একটি হারানো সুযোগ ছিল। যদিও তারা বেশ কিছু ইতিবাচক মুহূর্ত পেয়েছে, কিন্তু তারা তাদের পরিকল্পনায় কিছু ভুল করেছে এবং পরবর্তী ম্যাচে তাদের আরো ভালো খেলার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
সমাপ্তি
ভারত এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে এই ম্যাচটি ছিল এক উত্তেজনাপূর্ণ লড়াই। ভারতের দুর্দান্ত বোলিং, শক্তিশালী ব্যাটিং এবং সঠিক কৌশল তাদের জয় নিশ্চিত করেছে। হারশিত রানার কনকাশন সাব হিসেবে মাঠে নেমে ৩ উইকেট নেওয়া ছিল একটি দারুণ ঘটনা এবং ভারতীয় দলের জন্য এটি একটি বড় মুহূর্ত।
এটি শুধুমাত্র ভারতের জন্য একটি সিরিজ জয় নয়, বরং তাদের বিশ্বকাপ প্রস্তুতিরও একটি বড় পদক্ষেপ। ভারতের এই জয় এক নতুন দিগন্তের দিকে নিয়ে যাবে, এবং ইংল্যান্ড তাদের শক্তি পরীক্ষা করে আগামী ম্যাচগুলিতে ফিরে আসার চেষ্টা করবে।