আইসিসি উইমেন’স অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে আবারও ব্যাটিং দুর্বলতার শিকার হয়ে সেমি-ফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ হলো বাংলাদেশের। গতবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত উড়ন্ত পারফরম্যান্সে তাদের ৮ উইকেটে পরাজিত করেছে, এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযান সুপার সিক্স পর্বেই শেষ হয়ে গেল।
সেমি-ফাইনালে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশকে এই ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিল না, কিন্তু দলের ব্যাটিং পারফরম্যান্সে সেই তাগিদও দেখা যায়নি।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
বাংলাদেশ বনাম ভারত: ম্যাচের পরিণতি
মালয়েশিয়ার কুয়ালা লামপুরে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচটি ছিল সুপার সিক্স পর্বে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ। টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশ ২০ ওভার খেলে মাত্র ৬৪ রান সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। দলের প্রতিটি ব্যাটারই ভারতের বোলারদের সামনে এক এক করে ফিরে আসেন। ম্যাচের শুরু থেকেই ভরাডুবি শুরু হয় এবং একের পর এক উইকেট পতনের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ কখনোই ম্যাচে ফিরে আসতে পারেনি।
ভারত তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে মাত্র ৭.১ ওভারে ৬৬ রান করে জয় লাভ করে, যা আরও প্রমাণ করে দেয় ভারতের বর্তমান শক্তির সামর্থ্য। ৮ উইকেটে এই পরাজয়ের ফলে বাংলাদেশের সেমি-ফাইনালের সুযোগ শেষ হয়ে যায় এবং ভারতের সেরা চারের টিকিট নিশ্চিত হয়ে যায়।
বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়
বাংলাদেশের ব্যাটিং শুরু থেকেই দুর্বল ছিল। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম উইকেট আসে মাত্র তৃতীয় বলেই। মোসাম্মত ঈভা দ্রুত আউট হন, তারপর সাদিয়া ইসলাম রান আউট হয়ে ফিরে যান। চতুর্থ ওভারে ফাহমিদা ছোঁয়া বোল্ড হয়ে ফিরে যান। পাওয়ার প্লে-এ বাংলাদেশ মাত্র ১৬ রান করতে পেরেছিল, যা তাদের ব্যাটিং বিপর্যয়ের প্রথম ইঙ্গিত ছিল।
আরও পড়ুন: দুর্বার রাজশাহী বনাম রংপুর রাইডার্স: নতুন কেলেঙ্কারির মধ্যে নাটকীয় জয় রাজশাহীর
তবে সুমাইয়া আক্তার এবং জান্নাতুল মাওয়া কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। তারা ৪১ বল খেলে ৩১ রান যোগ করেন, তবে সেই জুটি আর বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। সুমাইয়া আক্তার ২৯ বলে ২১ রান করে অপরাজিত ছিলেন, যা দলের একমাত্র উল্লেখযোগ্য স্কোর ছিল। তার ব্যাট থেকে একমাত্র বাউন্ডারিটি আসে। অন্যদের মধ্যে কেউই ৭ রানের বেশি করতে পারেননি, ফলে বাংলাদেশ তাদের ইনিংসে ৬৪ রানে আটকে যায়।
ভারতের বিধ্বংসী ব্যাটিং
যতটা ব্যর্থ ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং, ঠিক ততটাই দুর্দান্ত ছিল ভারতের ব্যাটিং। ছোট রান তাড়ায় ভারত একদম সময় নেননি। ভারতীয় অধিনায়ক গোঙ্গারি তৃষা তাদের ইনিংস শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন। নিশিতা আক্তারের প্রথম ওভারে তৃষা তিনটি বাউন্ডারি মারেন, এবং পরে পাওয়ার প্লে-এ আনিসা আক্তারও ৪টি চার হজম করেন। ভারতের ব্যাটিং অনেক স্বাচ্ছন্দ্যে চলছিল, এবং তারা লক্ষ্য সহজেই অর্জন করে নেয়।
তৃষা ৮টি বাউন্ডারি দিয়ে ৩১ বল খেলে ৪০ রান করেন। পরে জান্নাতুলের বলেও একটি বাউন্ডারি মেরে ম্যাচ শেষ করেন নিকি প্রাসাদ। ভারতের এই পারফরম্যান্স বাংলাদেশের জন্য এক বড় শিক্ষা হয়ে থাকবে। তাদের ব্যাটিং দুর্বলতা এই ম্যাচে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছিল, আর ভারতের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের কাছে বাংলাদেশের প্রতিরোধ ছিল একেবারে অপ্রতুল।
বাংলাদেশ বনাম ভারত: পরবর্তী ম্যাচে বাংলাদেশের লক্ষ্য
বাংলাদেশের পরাজয় নিশ্চিত করে দিল সুপার সিক্সের প্রথম গ্রুপে দুই সেমি-ফাইনালিস্ট দল। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া এখন সেমি-ফাইনালে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র ২ পয়েন্ট নিয়ে শেষ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে। তাদের আশা ছিল ভারতকে হারিয়ে সেমি-ফাইনালের পথ উন্মুক্ত করবে, কিন্তু সেই আশা আজ ফুরিয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: সিলেট স্ট্রাইকার্স বনাম ফরচুন বরিশাল: সিলেটকে বিদায় করে শেষ চারে বরিশাল
প্রথম দুই ম্যাচেও বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল হতাশাজনক। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে কিছুটা উন্নতির ছাপ দেখা গিয়েছিল, তবে এক ম্যাচ পরই পুরানো চিত্র ফিরে আসে। যদি তারা তাদের ব্যাটিংয়ের উন্নতি না ঘটাতে পারে, তবে পরবর্তী ম্যাচগুলোতে তাদের জন্য আরও বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।
ভারতের বোলিং: একটি পরিপূর্ণ পারফরম্যান্স
ভারতের বোলিংও ছিল দারুণ কার্যকরী। ভেয়ষ্ণাবি শার্মা এই ম্যাচে তিনটি উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটিংকে আরো কঠিন করে তুলেছিলেন। তার বিধ্বংসী স্পিনে বাংলাদেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটারই আউট হন। জোশিথা, আয়ুশি এবং পারুনিকা সবাই গুরুত্বপূর্ণ উইকেট পেতে সমর্থ হন। ভারতের বোলিং পারফরম্যান্স যে দলটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯: ২০ ওভারে ৬৪/৮ (ছোঁয়া ২, ঈভা ২, সাদিয়া ইসলাম ৫, সুবর্ণা ৫, আফিয়া ৭, জান্নাতুল ১৪, সুমাইয়া ২১*, সাদিয়া আক্তার ০, নিশিতা ৬; শাবনাম ২-০-৭-১, জোশিথা ৩-১-৬-১, আয়ুশি ৪-০-১৫-০, পারুনিকা ৪-০-১২-০, ভেয়ষ্ণাবি ৪-০-১৫-৩, মিথিলা ১-০-৩-০, তৃষা ২-০-৬-১)
ভারত অনূর্ধ্ব-১৯: ৭.১ ওভারে ৬৬/২ (তৃষা ৪০, কামালিনি ৩, সানিকা ১১*, নিকি ৫*; নিশিতা ১-০-১৩-০, আনিসা ৩-০-২৯-১, ছোঁয়া ১-০-৫-০, হাবিবা ২-০-১৫-১, জান্নাতুল ০.১-০-৪-০)
ফল: ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দল ৮ উইকেটে জয়ী
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: ভেয়ষ্ণাবি শার্মা
শেষ কথা
“বাংলাদেশ বনাম ভারত” এই ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় শিক্ষা হয়ে থাকবে। তারা যদি তাদের ব্যাটিংয়ের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে না পারে, তবে ভবিষ্যতে আরও কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে। ভারতের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ও বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয় একত্রিত হয়ে ম্যাচের পরিণতি নির্ধারণ করেছে।
বাংলাদেশ এখনও সেমি-ফাইনাল খেলার সুযোগ হারিয়েছে, তবে তারা এখনো টুর্নামেন্টের শেষ ম্যাচে জয়লাভের চেষ্টা করবে। এই ম্যাচের পারফরম্যান্স তাদের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়ক হতে পারে, তবে তাদের জন্য এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কি তাদের ব্যাটিং ক্ষমতাকে নতুন করে আবিষ্কার করতে পারবে?