খুলনা টাইগার্স বনাম চিটাগং কিংস: বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) এর চলতি আসরে একের পর এক উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে দলগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে মাঠে নামছে, আর প্রতিটি ম্যাচ যেন যেন স্নায়ুযুদ্ধের মতো।
গতকাল যে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হলো তা ছিল সেমিফাইনাল, যেখানে খুলনা টাইগার্স ও চিটাগং কিংসের মধ্যে মুখোমুখি হওয়া নিয়ে দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে ছিল। এই ম্যাচে খুলনা টাইগার্স প্রথমে ব্যাটিং করে ১৬৩ রান সংগ্রহ করে, তবে শেষ মুহূর্তে চিটাগং কিংস যেন তাদের জয় নিশ্চিত করে ফেলে, আর শেষ বলেই ৪ মেরে ফাইনালে জায়গা করে নেয়।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
খুলনার উদ্বোধনী ব্যাটিং: শুরুটা ছিল ধীর, কিন্তু শেষ মুহূর্তে হেটমায়ার যেভাবে ম্যাচটি পাল্টে দিলেন
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে খুলনা টাইগার্সের শুরুটা ছিল খুবই কম্পমান। পাওয়ারপ্লের মধ্যে মাত্র ৪ ওভার শেষে ১১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল তারা।
ওপেনার মেহেদী হাসান মিরাজ এবং অ্যালেক্স রস আউট হয়ে যান, এবং দলের মধ্যে চাপ পড়েছিল বেশ। কিন্তু মোহাম্মদ নাঈম একদম শেষ পর্যন্ত স্ট্রাইকে ছিলেন, এবং তার ব্যাটে বাউন্ডারি আর চার ছক্কার মধ্যে খেলতে চেয়েছিলেন। ১৯ রানের মধ্যে চারটি বাউন্ডারি মারলেও, পাওয়ারপ্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে খুলনা রান করেছে মাত্র ৩০।
আরও পড়ুন: বসে না থেকে ত্রই apps দিয়ে 300 টাকা ইনকাম করুন .কাজ করা খুব সোজা
আরও পড়ুন
এরপর খেলার গতি কিছুটা পাল্টাতে থাকে। শিমরন হেটমায়ার ছিলেন দলের জন্য সবচেয়ে বড় আস্থার জায়গা। যদিও শুরুতে তিনি ২১ বলে মাত্র ২২ রান করেছিলেন, তবে পরে তিনি একেবারে অন্য রকম এক ইনিংস খেলেন। ৩৩ বলে ৬৬ রান করেন, যার মধ্যে শেষ ১০ বলেই ৪১ রান আসে। এর ফলে খুলনা টাইগার্স ইনিংসে একটি বড় মাইলফলক স্পর্শ করে।
১৭তম ওভারে খালেদ আহমেদের বল থেকে আসে ২৩ রান, এবং এরপরের ২ বলে হেটমায়ার দুইটি ছক্কা মেরে ইনিংসকে আরও রঙিন করে তোলেন। একটির ছক্কা মিড অনের ওপর দিয়ে গ্যালারিতে গিয়ে আছড়ে পড়ে। হেটমায়ারের এই ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শেষ ৪ ওভারে খুলনার স্কোর একেবারে বদলে যায় এবং সেক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য।
চিটাগং কিংসের ব্যাটিং: শুরুতে বিপর্যয়, কিন্তু হাল ছাড়েননি নাফি ও তালাত
খুলনা টাইগার্সের দেওয়া ১৬৩ রানের লক্ষ্য সামনে রেখে চিটাগং কিংস ব্যাট করতে নেমেছিল। শুরুটা তাদের জন্য ছিল খুবই খারাপ, মাত্র ৩৫ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। তবে এরপর খেলার মেজাজ বদলায়। পাকিস্তানি দুই ব্যাটসম্যান খাজা নাফি এবং হোসেন তালাত তামাম চাপের মধ্যে একে অপরের সঙ্গে দুর্দান্ত জুটি গড়েন।
১৩ তম ওভারে ২৫ বল থেকে ৪০ রান করে তালাত আউট হয়ে যান, কিন্তু তার আউট হওয়ার আগেই নাফি-তালাতের এই জুটি ৪২ বলের মধ্যে ৭০ রান জড়িয়েছিলেন। নাফি ৪৬ বলে ৩ ছক্কা ও ৪ চারে ৫৭ রান করে দলের খেলা বাঁচান। তবে যখন জুটি ভেঙে যায়, তখন চিটাগংয়ের স্কোর ১১৩/২ থেকে ১৩০/৭ হয়ে যায় এবং পরবর্তী সময়ে চিটাগং কিংসের জন্য খেলা কঠিন হয়ে যায়।
শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তা: আলিস আল ইসলাম ও আরাফাত সানির অবিশ্বাস্য কমব্যাক
যতটা বিপর্যয়ে ছিল চিটাগং, শেষ মুহূর্তে দুই বোলার আলিস আল ইসলাম এবং আরাফাত সানি যেন তাদের দলের কাছে আশার প্রদীপ হয়ে ওঠেন। শেষ ওভারে যখন ১৫ রানের প্রয়োজন ছিল, তখন চিটাগং কিংস দারুণভাবে এই রানটি সংগ্রহ করে ফাইনালে জায়গা করে নেয়।
আরও পড়ুন: রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবল ক্লাব: 2025 এর ভবিষ্যৎ, ইতিহাস ও ঐতিহ্য
অতীতে তারা যেসব ম্যাচে হেরে গিয়েছিল, সেগুলোকে পিছনে রেখে চিটাগং কিংস মাঠে ঝলক দেখাতে থাকে। ১১৩/৭ অবস্থায়, তারা শেষ ওভারে ১৫ রান নিয়ে ম্যাচটি জয়লাভ করে এবং খুলনাকে ২ উইকেটে পরাজিত করে ফাইনালে পৌঁছে যায়।
শেষ কথা: খুলনার বড় সুযোগ হারানো
এটি ছিল এক অবিশ্বাস্য ম্যাচ যেখানে চিটাগং কিংসের ব্যাটসম্যানরা কিছু নাটকীয় মুহূর্তে খুলনার বোলারদের দুর্বল করে ফেলে। প্রথম দিকে খুলনার বোলাররা ভালো খেললেও, শেষ মুহূর্তে হেটমায়ার আর নাভির ব্যাটিং পদ্ধতি চিটাগংয়ের জয়ের পক্ষে বেশ সাহায্য করেছিল। খুলনার জন্য এটি ছিল একটি বড় সুযোগ হারানো, তবে পুরো বিপিএলেই তারা একটা ভিন্নধর্মী দলের প্রতিযোগিতা উপস্থাপন করেছে।
শেষ পর্যন্ত চিটাগং কিংসের জয়ের মধ্য দিয়ে তারা ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে। এই ম্যাচটির পরে, দলের জন্য সেরা খেলোয়াড় হিসেবে হেটমায়ারই নিজের স্থান তৈরি করেছেন, আর চিটাগং কিংসের নাটকীয় জয়ে এ কথা বলা চলে যে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট কখনোই শেষ হওয়ার পরিপূর্ণ সময় নয়, যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে অবিশ্বাস্য কিছু!