বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ও উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিম ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন।
দীর্ঘ ১৯ বছরের ক্যারিয়ারের পর ৩৭ বছর বয়সী এই তারকা আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক আবেগঘন বার্তায় তাঁর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
একজন নিবেদিতপ্রাণ ক্রিকেটারের বিদায়
২০০৬ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া মুশফিক বাংলাদেশের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
তিনি সব সময় দলের প্রয়োজনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, কঠিন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ২৭৪টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ৯টি সেঞ্চুরি ও ৪৯টি ফিফটির মাধ্যমে ৭৭৯৫ রান সংগ্রহ করেছেন।
আরও পড়ুন
আরো পড়ুন: চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০২৫: পাকিস্তানকে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা ভারতের, নিচ্ছে বাড়তি সুবিধাও
অবসরের ঘোষণা: আবেগঘন বার্তা
মুশফিক তাঁর অবসরের ঘোষণায় বলেন:
"আমি আজ ওয়ানডে ফরম্যাট থেকে অবসর ঘোষণা করছি। সবকিছুর জন্য আলহামদুলিল্লাহ। বৈশ্বিক পর্যায়ে আমাদের অর্জন সীমিত হতে পারে, তবে একটি বিষয় নিশ্চিত, যখনই আমি আমার দেশের জন্য মাঠে নেমেছি, নিষ্ঠা ও সততার সাথে ১০০ ভাগের বেশি দিয়েছি।"
তিনি আরও বলেন,
"গত কয়েক সপ্তাহ আমার জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল, এবং আমি বুঝতে পেরেছি যে এটাই আমার নিয়তি।"
এই ঘোষণার সময় মুশফিক পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতও উদ্ধৃত করেন:
"ওয়া তুইজ্জু মান তাশা' ওয়া তুযিলু মান তাশা"– অর্থাৎ, "তিনিই যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন।"


অবসরের কারণ: সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ও সিদ্ধান্ত
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রানের মধ্যে ছিলেন না মুশফিক। ২০২৩ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৭৩ রান করার পর টানা ছয় ইনিংসে তিনি একটিও ফিফটি করতে পারেননি।
সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুই ইনিংসে ০ ও ২ রান করার পর তাঁর ফর্ম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তাঁর ও মাহমুদউল্লাহর ক্যারিয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলার আগেই তিনি নিজেই বিদায় নিলেন।
আরো পড়ুন: ২০২৫ সালে মাসে ৫ হাজার ডলার প্যাসিভ ইনকাম অর্জন করার ৭ উপায়
এক মহাযুগের সমাপ্তি: মুশফিকের ওয়ানডে ক্যারিয়ার
২০০৬ সালে ওয়ানডেতে অভিষেকের পর থেকে মুশফিক বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারের অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন। তাঁর অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ দল অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ জিতেছে।
মুশফিকুর রহিম-এর পরিসংখ্যান:
- মোট ম্যাচ: ২৭৪
- মোট রান: ৭৭৯৫
- গড়: ৩৬.৪২
- সর্বোচ্চ স্কোর: ১৪৪*
- সেঞ্চুরি: ৯
- ফিফটি: ৪৯
- অধিনায়কত্ব: ২০১১-২০১৪ (৩৬টি ম্যাচ)
মুশফিকের ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত
✅ ২০০৭ বিশ্বকাপ: ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ে ৫৬ রানের ইনিংস।
✅ ২০১১ বিশ্বকাপ: ভারতের বিপক্ষে দুর্দান্ত ফিফটি।
✅ ২০১৮ এশিয়া কাপ: এক পায়ে দাঁড়িয়ে আফগানিস্তানকে হারানো ১৪৪ রানের ইনিংস।
✅ ২০১৯ বিশ্বকাপ: অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১০২ রানের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি।
বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া
মুশফিকের অবসর নিয়ে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। কেউ কেউ বলছেন, তাঁর বিদায় আরও সম্মানজনকভাবে হওয়া উচিত ছিল, আবার কেউ মনে করছেন, এটি সময়োচিত সিদ্ধান্ত।
ক্রিকেট বিশ্লেষক হার্শা ভোগলে বলেছেন:
"মুশফিক এমন একজন খেলোয়াড়, যিনি কখনোই সহজে হার মানেননি। তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।"
বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেন:
"আমি মুশফিককে চিনি, সে সব সময় দলের জন্য খেলেছে। তার মতো নিবেদিতপ্রাণ ক্রিকেটার পাওয়া কঠিন।"
ভক্তদের প্রতিক্রিয়া: আবেগঘন বিদায়
মুশফিকুর রহিমের অবসরের ঘোষণার পর ক্রিকেটপ্রেমীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।
একজন ভক্ত লিখেছেন:
"বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য আজ একটি দুঃখের দিন। আমাদের মিস্টার ডিপেন্ডেবলকে ওয়ানডেতে আর দেখতে পাব না!"
আরেকজন লিখেছেন:
"মুশফিক শুধু একজন খেলোয়াড় নয়, তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতিচ্ছবি। তার অবসর মেনে নেওয়া কঠিন।"


ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: টেস্ট ক্রিকেটের ওপর মনোযোগ
ওয়ানডে থেকে বিদায় নিলেও মুশফিক টেস্ট ক্রিকেট চালিয়ে যাবেন। বাংলাদেশ দলের অন্যতম অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান টেস্ট ফরম্যাটে নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চান।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) জানিয়েছে, তারা মুশফিকের অভিজ্ঞতা ব্যবহার করতে চায় ভবিষ্যতে কোনো প্রশিক্ষণ বা মেন্টরশিপ প্রোগ্রামে। বিসিবির এক কর্তা বলেন:
"মুশফিকের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে আমরা হারাতে চাই না। ভবিষ্যতে তাকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যেতে পারে।"
উপসংহার
মুশফিকুর রহিমের ওয়ানডে থেকে অবসর নেওয়া বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সমাপ্তি। তিনি দীর্ঘদিন দলের জন্য নিবেদিতভাবে খেলেছেন এবং অনেক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছেন।
ভক্তরা হয়তো তাকে ৫০ ওভারের ফরম্যাটে আর দেখতে পাবেন না, তবে টেস্ট ক্রিকেটে তিনি এখনো অবদান রাখতে পারবেন। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে তার নাম সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।
আপনার প্রিয় মুশফিকের মুহূর্ত কোনটি? তার অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনার মতামত কী? কমেন্টে জানান!