বিগত ৫০ বছর সময়সীমা ধরে পরিচালিত অন্তত ২৫টি গবেষণার সম্মিলিত ফলাফল বলছে, কীটনাশকের কারণে পুরুষের শুক্রাণু কমছে । এই গবেষণা মূলত ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকেরা করেছেন। তাঁরা দাবি করেছেন, তাদের গবেষণাই এই খাতে সবচেয়ে বেশি সিস্টেমেটিক রিভিউয়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। এর অর্থ হলো—এই গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফলের সঙ্গে দ্বিমত করার সুযোগ সামান্যই।
গবেষণার ফলাফলের বিষয়ে গবেষক দলের প্রধান ও যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের বোস্টনের নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বিভাগের গবেষক লরেন এলিস বলেন, ‘কীটনাশক আমাদের পরিবেশের প্রায় সর্বত্রই ব্যবহৃত হয় এবং এ কারণে সেগুলো মানুষের শুক্রাণুর পরিমাণ ও প্রজনন স্বাস্থ্যকে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে তা বোঝা জরুরি।’ তিনি আরও বলেন, ‘কীটনাশক জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগজনক বিষয়।’
এলিস ও তাঁর সহযোগীরা এশিয়া, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং ইউরোপের অন্তত ১ হাজার ৭৭৪ জন পুরুষের ওপর গবেষণা চালান। তাদের প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর বিভিন্ন ফসফেটের বিভিন্ন জৈব সার এবং মিথাইল কার্বামেটের বিভিন্ন যৌগ কী প্রভাব ফেলে তা জানার চেষ্টা করেন। ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এসব কীটনাশক বিভিন্ন এনজাইম সৃষ্টিতে বাধা দেয় এবং অ্যাসিটাইলকোলিনের মতো বিভিন্ন নিউরোট্রান্সমিটার বা স্নায়বিক বার্তাবাহকের (বিভিন্ন হরমোন) ধ্বংসের কারণ। এই অ্যাসিটাইলকোলিন মানুষের পেশি ও মস্তিষ্কের গঠন ও পরিচালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন কর।
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারি বিশেষজ্ঞ ও অণুজীববিজ্ঞানের শিক্ষক মেলিসা পেরি বলেন, ‘বড় বা ছোট আকারের গবেষণা কোনো বিষয়ই না। বাস্তবতা হলো—কীটনাশকের সঙ্গে পুরুষের শুক্রাণু কমে যাওয়ার বিষয়টি ক্রমেই বাড়ছে।’ তবে এই গবেষণা থেকে জানা যায়নি যে, কীটনাশকের কারণে শুক্রাণুর গুণগত মানে কোনো পরিবর্তন আসে কিনা।
আরও পড়ুন: কমে যাচ্ছে পুরুষের শুক্রাণু : ভয়ঙ্কর তথ্য গবেষণার
২০২২ সালে পরিচালিত এক গবেষণা থেকে দেখা গেছে, ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের শুক্রাণুর পরিমাণ প্রায় ৫১ শতাংশ কমেছে। আগে যেখানে তাদের প্রতি মিলিলিটার বীর্যে শুক্রাণুর পরিমাণ ছিল ১০ কোটি ১২ লাখ সেখানে তা কমে নেমে এসেছে মাত্র ৪ কোটি ৯০ লাখে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে এই পরিমাণ শুক্রাণুও স্বাভাবিক।