বর্তমান সময়ে মোবাইল ডেটা দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়ার সমস্যা প্রায় সকলেরই। প্রতিদিনের ব্যবহার অনুযায়ী ডেটা প্ল্যানের দাম ক্রমাগত বেড়ে চলেছে, যা অনেকের জন্যই উদ্বেগের কারণ। তবে কিছু সহজ কৌশল অনুসরণ করলে আপনি সীমিত ডেটায়ও সারাক্ষণ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।
ব্যবহারে কৌশলী হন
প্রথমেই জানতে হবে, কোন অ্যাপ কতটা ডেটা খরচ করছে। আপনার ফোনের সেটিংসে গিয়ে আপনি এই তথ্য পেতে পারেন। যেসব অ্যাপ বেশি ডেটা ব্যয় করে, তাদের ব্যবহার কমিয়ে আনুন। এটি আপনার ডেটা খরচ কমানোর অন্যতম কৌশল। স্মার্টফোনের সেটিংসে গিয়ে ডেটা ব্যবহারের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। এই তথ্যের ভিত্তিতে আপনি নির্ধারণ করতে পারবেন কোন অ্যাপগুলি আপনার ডেটা দ্রুত শেষ করছে এবং সেগুলোর ব্যবহার সীমিত করতে পারবেন।
ব্যাকগ্রাউন্ড ডেটা নিয়ন্ত্রণ
অনেক অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে ডেটা খরচ করে থাকে, যা আপনি জানতেও পারেন না। এই সমস্যা সমাধানে দুইটি কার্যকর পদ্ধতি রয়েছে:
- ব্যাকগ্রাউন্ড ডেটা ইউসেজ বন্ধ রাখা: প্রতিটি অ্যাপের জন্য আলাদা করে ব্যাকগ্রাউন্ড ডেটা ইউসেজ বন্ধ রাখতে পারেন। এটি করতে হলে আপনার ফোনের অ্যাপ সেটিংসে গিয়ে প্রতিটি অ্যাপের জন্য এই অপশনটি বন্ধ করতে হবে।
- ডেটা সেভার অপশন সচল করা: আপনার ফোনের সেটিংসে গিয়ে ডেটা সেভার অপশন চালু করতে পারেন। এটি ব্যাকগ্রাউন্ডে চলমান অ্যাপগুলোর ডেটা ব্যবহার সীমিত করে, ফলে ডেটা খরচ কমে যায়।
আরও পড়ুন: VPN কি, জেনে নিন ব্যবহারের সম্পূর্ণ গাইড: সুবিধা, ঝুঁকি এবং আইনি দিক
ডাউনলোড থেকে বিরত থাকুন
ইন্টারনেট ডেটা সাশ্রয়ের জন্য হাই-কোয়ালিটি ভিডিও দেখা বা ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউটিউব বা ফেসবুকে হাই-কোয়ালিটি ভিডিও স্ট্রিমিং করলে ডেটা দ্রুত ফুরিয়ে যায়। এই সমস্যার সমাধানে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
- ডাউনলোড এড়িয়ে চলুন: হাই-কোয়ালিটি ভিডিও এবং মিউজিক ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকুন। ডাউনলোডের পরিবর্তে স্ট্রিমিং করুন এবং সেটাও লো কোয়ালিটিতে।
- লো কোয়ালিটি স্ট্রিমিং: প্রতিটি অ্যাপে লো কোয়ালিটি স্ট্রিমিং অপশন থাকে। ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এবং ফেসবুকে এই অপশনটি ব্যবহার করে আপনি ডেটা সাশ্রয় করতে পারেন। ভিডিওর সেটিংসে গিয়ে রেজোলিউশন কমিয়ে দিন, যা ডেটা খরচ কমাবে।
অফলাইন মোড ব্যবহার করুন
যখন ইন্টারনেটের প্রয়োজন নেই, তখন অফলাইন মোড ব্যবহার করা অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। বিশেষ করে গুগল ম্যাপসের মত অ্যাপগুলোতে অফলাইন মোডের সুবিধা রয়েছে, যা আপনাকে ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই ম্যাপ ব্যবহার করতে দেয়। গুগল ম্যাপসের অফলাইন ফিচারটি ব্যবহার করে আপনি আগে থেকেই যেকোনো এলাকার ম্যাপ ডাউনলোড করে রাখতে পারেন। এটি বিশেষভাবে উপকারী যখন আপনি এমন স্থানে যাচ্ছেন যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ দুর্বল বা অনুপস্থিত।
গুগল ম্যাপসের অফলাইন ম্যাপ ডাউনলোড করার পদ্ধতি:
- গুগল ম্যাপস অ্যাপ খুলুন।
- আপনার প্রোফাইল ছবিতে ট্যাপ করুন।
- “অফলাইন ম্যাপস” অপশনে যান।
- “নিজস্ব ম্যাপ নির্বাচন করুন” অপশনে ট্যাপ করুন।
- ম্যাপের উপর নির্দিষ্ট এলাকা নির্বাচন করে ডাউনলোড করুন।
এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর, আপনি ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই ম্যাপ ব্যবহার করতে পারবেন। তবে মনে রাখবেন, অফলাইনে থাকাকালীন আপনি রিয়েল-টাইম ট্রাফিক তথ্য পাবেন না। এছাড়া, আপনার ডাউনলোড করা ম্যাপগুলি নিয়মিত আপডেট করতে হবে যাতে সর্বশেষ তথ্য পাওয়া যায়।অফলাইন মোডের এই সুবিধাগুলি ব্যবহার করে আপনি ডেটা সাশ্রয় করতে পারবেন এবং ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে পারবেন।
নিজস্ব ডেটা লিমিট সেট করুন
স্মার্টফোনের সেটিংসে ডেটা লিমিট সুবিধা রয়েছে, যা আপনার ডেটা ব্যবহারের উপর নজর রাখতে সাহায্য করে। এই ফিচারটি একবার সেটআপ করলে, যখন আপনার ডেটা শেষের দিকে আসবে বা লিমিট ফুরিয়ে যাবে, তখন ফোন আপনাকে অ্যালার্ট দেবে। এটি আপনাকে ডেটা খরচ সম্পর্কে সচেতন থাকতে সাহায্য করে এবং অপ্রত্যাশিত ডেটা ফুরিয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে রক্ষা করে।
ডেটা লিমিট সেট করার পদ্ধতি:
- আপনার ফোনের সেটিংসে যান।
- “নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট” বা “ডেটা ইউসেজ” অপশন নির্বাচন করুন।
- “ডেটা লিমিট” বা “ডেটা ওয়ার্নিং” অপশনে প্রবেশ করুন।
- আপনার মাসিক ডেটা প্ল্যান অনুযায়ী একটি লিমিট নির্ধারণ করুন।
- ওয়ার্নিং লেভেল সেট করুন যাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ ডেটা ব্যবহারের পর আপনাকে অ্যালার্ট দেওয়া হয়।
এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনি আপনার ডেটা ব্যবহারে আরও সচেতন হতে পারবেন এবং ডেটা সাশ্রয় করতে পারবেন। এটি বিশেষভাবে উপকারী যখন আপনি সীমিত ডেটা প্ল্যান ব্যবহার করছেন এবং অতিরিক্ত খরচ এড়াতে চান।
অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ মুছে ফেলুন এবং ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করুন
স্মার্টফোনে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ থাকলে তা মুছে ফেলা অত্যন্ত জরুরি। এটি শুধু ইন্টারনেট সাশ্রয় করে না, বরং ফোনের স্টোরেজও খালি রাখে। অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলি ব্যাকগ্রাউন্ডে ডেটা খরচ করতে পারে, যা আপনার ডেটা প্যাকেজ দ্রুত শেষ করে দিতে পারে। তাই যেসব অ্যাপ আপনার জন্য প্রয়োজনীয় নয়, সেগুলি মুছে ফেলুন।
ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করুন:যখনই সুযোগ পাবেন, ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। অনেক পাবলিক প্লেস, যেমন ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট, এবং শপিং মল, ফ্রি ওয়াইফাই সুবিধা প্রদান করে। ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করলে আপনার মোবাইল ডেটা খরচ হবে না এবং আপনি ইন্টারনেটের সুবিধা নিতে পারবেন। তবে, পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহারের সময় নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখুন এবং সংবেদনশীল তথ্য আদান-প্রদান এড়িয়ে চলুন।
উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে আপনি সীমিত ডেটায়ও সারাক্ষণ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন এবং হুটহাট ডেটা ফুরিয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগতে হবে না।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন