ইলন মাস্কের স্পেসএক্স কোম্পানির স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে! গ্রাম-গঞ্জ, পাহাড়-জঙ্গল, এমনকি যেখানে সাধারণ মোবাইল নেটওয়ার্কও ঠিকমতো কাজ করে না, সেখানেও এখন লাইটনিং স্পিড ইন্টারনেট পাবেন।
আপনি যদি ভাবেন, “আমার এলাকায় তো ভালো ইন্টারনেট নেই, স্টারলিংক নিলে কি সত্যিই কাজ করবে?” – তাহলে এই গাইড আপনার জন্যই। আজকে আমরা জানবো:
✅ স্টারলিংক কি?
✅ কত গতি পাবেন, কত টাকা খরচ?
✅ কিভাবে ঘরে বসেই স্টারলিংক সংযোগ নেবেন?
✅ সেটআপ করা কি কঠিন?
✅ ফাইবার/মোবাইল নেটওয়ার্কের চেয়ে ভালো কি?
চলুন, শুরু করা যাক!
আরো পড়ুন: বসে না থেকে ত্রই apps দিয়ে 300 টাকা ইনকাম করুন .কাজ করা খুব সোজা
স্টারলিংক কি? (What is Starlink in Bangla?)
স্টারলিংক হলো একটি স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা, যা মহাকাশে থাকা হাজার হাজার ছোট ছোট স্যাটেলাইটের মাধ্যমে কাজ করে। সাধারণ ইন্টারনেটের মতো এখানে কোনো টাওয়ার বা ফাইবার কেবলের দরকার হয় না। আপনার বাড়ির ছাদে বা খোলা জায়গায় একটি ছোট ডিশ (অ্যান্টেনা) বসালেই চলবে!
❓কেন স্টারলিংক নেবেন?
- গ্রামে-গঞ্জে যেখানে ইন্টারনেট নেই, সেখানে হাই-স্পিড ইন্টারনেট পাবেন।
- ফাইবার অপটিকের চেয়ে দ্রুত (কিছু ক্ষেত্রে)।
- বৃষ্টি-ঝড়েও সংযোগ থাকে (সাধারণ স্যাটেলাইটের চেয়ে ভালো)।
- সেলফ-ইন্সটল – কেউ বাড়িতে এসে লাগিয়ে দেবে না, আপনি নিজেই পারবেন।
➡️ স্টারলিংক ইন্টারনেটের সুবিধা (Benefits of Starlink Internet)
✅ উচ্চগতির ইন্টারনেট (সর্বোচ্চ 300 Mbps)
✅ প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যবহারযোগ্য (যেখানে ফাইবার বা মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই)
✅ সহজ ইনস্টলেশন (বাসায় বসেই সেটআপ করা যায়)
✅ আনলিমিটেড ডেটা (কোনো ফেয়ার ইউজেজ পলিসি নেই)
✅ মাল্টি-ইউজার সাপোর্ট (একটি সংযোগ দিয়ে একাধিক ব্যবহারকারী)
আরও পড়ুন
➡️ স্টারলিংক ইন্টারনেটের কভারেজ ও স্পিড (Coverage & Speed)
- গতি: 50 Mbps থেকে 300 Mbps পর্যন্ত
- কভারেজ: পুরো বাংলাদেশ (বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় কার্যকর)
- সিগন্যাল রেঞ্জ: 20-50 মিটার (গ্রামে 50-60 মিটার পর্যন্ত)
➡️ আপনার কি স্টারলিংক নেওয়া উচিত?
- যদি আপনার এলাকায় ইন্টারনেট স্লো/নেই → হ্যাঁ!
- যদি ফাইবার/৪জি ভালো কাজ করে → প্রয়োজন নেই।
আরও পড়ুন: মোবাইল দিয়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা ইনকাম: বিকাশ, নগদ বা রকেটে পেমেন্ট
স্টারলিংক ইন্টারনেট খরচ কত? (Starlink Price in Bangladesh 2025)
বহুল প্রতিক্ষিত স্টারলিংক স্যাটেলাইট বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করলেও সবার মনে একটাই প্রশ্ন স্টারলিংক ইন্টারনেট খরচ কত পড়বে, সবার হাতের নাগালে থাকবো তো? স্টারলিংক নিতে আপনাকে ২ ধরনের খরচ দিতে হবে:
এককালীন খরচ (Hardware Cost)
- স্টারলিংক কিট (ডিশ + রাউটার): ৪৭,০০০ টাকা (একবারের জন্য)
মাসিক খরচ (Subscription Plan)
প্যাকেজের নাম | গতি | মাসিক খরচ |
---|---|---|
রেসিডেন্সিয়াল | 50-300 Mbps | 6,000 টাকা |
রেসিডেন্সিয়াল লাইট | 20-100 Mbps | 4,200 টাকা |
✔️ নোট: বর্তমানে বাংলাদেশে শুধু রেসিডেন্সিয়াল প্যাকেজই পাওয়া যাচ্ছে।
আরো পড়ুন: মাসে ২০ হাজার টাকা আয় করার উপায় খুঁজছেন? রইলো ১০টি পরীক্ষিত সহজ পথ


কিভাবে ঘরে বসেই স্টারলিংক সংযোগ নেবেন
আপনি কি গ্রামের বাড়ি বা শহরের বাইরের এলাকায় থাকেন, যেখানে ইন্টারনেটের স্পিড শুন্য? তাহলে আপনার জন্যই এসেছে স্টারলিংক – স্যাটেলাইট ইন্টারনেট, যা পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় কাজ করে! আর মজার বিষয় হলো, এখন আপনি ঘরে বসেই স্টারলিংক সংযোগ নিতে পারেন। দেখে নিন কিভাবে:
✅ স্টেপ ১: অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যান
➡️ প্রথমে www.starlink.com এ যান।
সেখানে “Order Now” বাটনে ক্লিক করুন।
✅ স্টেপ ২: আপনার লোকেশন দিন
➡️ আপনার বাড়ির ঠিকানা টাইপ করুন।
সাথেসাথে জানিয়ে দেওয়া হবে – আপনার এলাকায় সার্ভিস আছে কি না।
✅ স্টেপ ৩: পেমেন্ট করুন
➡️ প্রাথমিক খরচ:
- ডিভাইস সেট: ৳৪৭,০০০
- ১ মাসের সাবস্ক্রিপশন: ৳৬,০০০
ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড বা অনলাইন পেমেন্ট মাধ্যম ব্যবহার করে পেমেন্ট সম্পন্ন করুন।
✅ স্টেপ ৪: ঘরে বসেই কিট বুঝে নিন
➡️ পেমেন্টের ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে আপনার বাড়িতে পৌঁছে যাবে স্টারলিংক কিট –
যার মধ্যে থাকবে:
- স্ট্যান্ড
সবকিছু আপনি নিজেই সহজে ইনস্টল করতে পারবেন! - ডিস (ডিশ)
- রাউটার


স্টারলিংক ইনস্টলেশন: নিজে নিজে লাগানো যায়?
হ্যাঁ! স্টারলিংক ডিশ লাগানো সেলফি তোলার চেয়েও সহজ! দেখুন কিভাবে:
- ডিশটি খোলা জায়গায় রাখুন (ছাদ, বারান্দা, বাগান – যেখানে আকাশ ভালো দেখা যায়)।
- পাওয়ার কানেক্ট করুন (সাধারণ প্লাগ-ইন)।
- রাউটার ওয়াই-ফাই অন করুন।
- স্টারলিংক অ্যাপ ডাউনলোড করুন (অ্যাপ দিয়ে ডিশ অটো-অ্যাডজাস্ট হবে)।
✅ কোনো টেকনিশিয়ান লাগবে না!
আরও পড়ুন: মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করার উপায়: রইলো সেরা ৮ পদ্ধতি
স্টারলিংক vs ফাইবার vs মোবাইল ইন্টারনেট: কোনটা ভালো?
ফিচার | স্টারলিংক | ফাইবার | মোবাইল ডাটা |
---|---|---|---|
স্পিড | 50-300 Mbps | 100-1000 Mbps | 5-50 Mbps |
লেটেন্সি | 20-40 ms | 5-10 ms | 30-100 ms |
ইন্সটলেশন | সহজ (নিজে লাগান) | টেকনিশিয়ান লাগে | নো-সেটআপ |
এলাকা | গ্রাম-শহর সবখানে | শুধু শহরে | সবখানে (সিগন্যাল ডিপেন্ড করে) |
❓কাদের জন্য স্টারলিংক ভালো?
- গ্রামের মানুষ (যেখানে ফাইবার নেই)
- রিমোট ওয়ার্কার/ফ্রিল্যান্সার (স্টেবল ইন্টারনেট চাই)
- ইউটিউবার/গেমার (কনসিস্টেন্ট স্পিড দরকার)
স্টারলিংক ইন্টারনেট বাংলাদেশে কেন গুরুত্বপূর্ণ?
- ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সহায়ক
- গ্রামীণ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ই-কমার্স এর উন্নতি
- ইন্টারনেট বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকি কম (স্যাটেলাইট ভিত্তিক হওয়ায়)
- বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ (স্মার্ট ভিলেজ, রিমোট ওয়ার্ক সুবিধা)
➡️ মনে রাখবেন:
- বর্তমানে শুধু রেসিডেন্সিয়াল প্যাকেজই বাংলাদেশে অনুমোদিত।
- রোমিং (ভ্রাম্যমাণ) সেবা এখনও চালু হয়নি।
- ভবিষ্যতে স্থানীয় গেটওয়ে স্থাপনের পর সেবা আরও উন্নত হবে।
স্টারলিংক সম্পর্কে আপনাদের জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তর (FAQ)
Q1. স্টারলিংক কি বৃষ্টিতে কাজ করবে?
হ্যাঁ, তবে ভারী বৃষ্টি/ঝড়ে সাময়িক স্লো হতে পারে।
Q2. একাধিক ডিভাইস কানেক্ট করা যাবে?
হ্যাঁ! ৫০+ ডিভাইস একসাথে কানেক্ট করতে পারবেন।
Q3. মাসিক বিল কি বাড়বে?
না, ফিক্সড ৬,০০০ টাকা (আনলিমিটেড ডেটা)।
Q4. ডিভাইস নষ্ট হলে কি করব?
স্টারলিংক ওয়ারেন্টি সার্ভিস দেয় (অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ক্লেইম করুন)।
Q5. স্টারলিংক কি 5জি সংযুক্ত?
না, স্টারলিংক 5জি সংযুক্ত নয়। স্টারলিংক হলো একটি স্যাটেলাইট ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা যা পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা হাজার হাজার লো-আর্থ-অরবিট (LEO) স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সরবরাহ করে। এটি মোবাইল নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করে না এবং আলাদাভাবে কাজ করে।
Q6. স্টারলিংকের সাথে কিভাবে ভালো কানেকশন পাওয়া যায়?
স্টারলিংকের ভালো কানেকশন পেতে হলে নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখা দরকারঃ
* ডিশটি খোলা আকাশের নিচে স্থাপন করতে হবে, যেন কোনো গাছ, ভবন বা অন্য কিছু দ্বারা ব্লক না হয়।
* নিয়মিত ডিশ আপডেট চেক করা ও সফটওয়্যার হালনাগাদ রাখা।
* ডিসিকে স্থির এবং কম কম্পনযুক্ত জায়গায় বসানো।
* Starlink অ্যাপ ব্যবহার করে obstruction (বাধা) চেক করা।
Q7. স্টারলিংক এর সংকেত গঠন কেমন?
স্টারলিংকের সিগন্যাল গঠন লো-আর্থ-অরবিট স্যাটেলাইট থেকে সরাসরি ব্যবহারকারীর ডিশে আসে। এই স্যাটেলাইটগুলো একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে একটি মেশ নেটওয়ার্ক তৈরি করে এবং ব্যবহারকারীর অবস্থান অনুযায়ী কাছাকাছি স্যাটেলাইট থেকে সিগন্যাল পাঠায়, ফলে ল্যাটেন্সি কম হয় এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেট পাওয়া যায়।
Q8. সাধারণ ইন্টারনেট থেকে স্টারলিংকের পার্থক্য কী?
স্টারলিংক এবং সাধারণ ইন্টারনেট (যেমন DSL, Fiber, 4G/5G) এর মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্যঃ
* সংযোগ মাধ্যম: সাধারণ ইন্টারনেট সাধারণত তার বা মোবাইল টাওয়ার ব্যবহার করে, কিন্তু স্টারলিংক স্যাটেলাইট ভিত্তিক।
* কভারেজ: স্টারলিংক পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় সংযোগ দিতে পারে, যেখানে সাধারণ ইন্টারনেট সীমিত।
* স্থাপন খরচ: স্টারলিংকের প্রাথমিক ডিভাইস সেটআপ খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি।
* ল্যাটেন্সি ও স্পিড: স্টারলিংক লো ল্যাটেন্সি ও উচ্চ স্পিড দিতে সক্ষম, বিশেষ করে গ্রামীণ বা দূরবর্তী এলাকায়।
শেষ কথাঃ বাংলাদেশে স্টারলিংকের ভবিষ্যৎ
স্টারলিংক শুধু ইন্টারনেট দেবে না, ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপান্তরে বড় ভূমিকা রাখবে:
- গ্রামে অনলাইন ক্লাস, টেলিমেডিসিন চালু হবে।
- ই-কমার্স, ফ্রিল্যান্সিং বাড়বে।
- জরুরি যোগাযোগ (বন্যা-ঘূর্ণিঝড়ে) নির্ভরযোগ্য থাকবে।
➡️ স্টারলিংক শুধু ইন্টারনেট নয়, গ্রামীণ বাংলাদেশের ডিজিটাল বিপ্লব!
কমেন্টে জানান, আপনি স্টারলিংক নিতে চান? নাকি অন্য অপশন দেখছেন?
শেয়ার করুন – আপনার গ্রামের বন্ধু-পরিবারকে জানান এই সুযোগের কথা!