২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক টালমাটাল দিন। ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দীর্ঘ দেড় দশকের ক্ষমতা আর কূটনৈতিক কৌশলের অভিজ্ঞতা—সব কিছু যেন মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে।
তারপর থেকে শুরু হয় এক অজানা যাত্রা, যার গন্তব্য আজও অনির্দিষ্ট।
প্রথমে তাকে দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়ার খবর শোনা গেলেও, এখন শোনা যাচ্ছে—সেখানেও আর তিনি নেই।
তবে প্রশ্ন থেকে যায়—শেখ হাসিনা এখন কোথায়? ভারত কি আর রাখতে চাইছে না? যুক্তরাজ্য কেন আশ্রয় দিল না? আর তার ভবিষ্যৎ কি পুরোপুরি অনিশ্চয়তার ছায়ায় ঢাকা পড়ে গেল?
আরো পড়ুন: বসে না থেকে ত্রই apps দিয়ে 300 টাকা ইনকাম করুন .কাজ করা খুব সোজা
দিল্লিতে আশ্রয়: সত্য, না গুজব?
দেশত্যাগের পর শেখ হাসিনা কোথায় গেলেন—এই প্রশ্নটি প্রথম থেকেই ঘুরপাক খাচ্ছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে।
প্রথমদিকে নানা প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লিতে আশ্রয় নিয়েছেন। কোনো নিশ্চিত সরকারি ঘোষণা না থাকলেও, সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এই খবর ছড়াতে থাকে।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই দাবির সত্যতা নিয়ে নতুন প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।
ভারতীয় কূটনৈতিক সূত্রগুলো এখন বলছে—দিল্লিতে শেখ হাসিনার অবস্থান ভারত সরকারের জন্য অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছিল।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করে দিল্লির নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক মহলে ‘দ্বিধা’ আর ‘চাপ’—এই দুইয়ের সমান্তরাল চলা শুরু হয়।
তাই ধারণা করা হচ্ছে, তাকে হয়তো দিল্লি থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে অন্য কোনো সুরক্ষিত স্থানে।
এমন অবস্থায় প্রশ্নটা আরও জোরালো—শেখ হাসিনা এখন আদৌ দিল্লিতে আছেন কি না? নাকি গন্তব্য পাল্টে গেছে, আর আমরা জানতেও পারিনি?
আরও পড়ুন
সরিয়ে নেওয়া হয়েছে কোথায়?
শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে যখন দিল্লিতে চাপ বাড়তে থাকে, তখন কূটনৈতিক সূত্রগুলো নতুন এক তথ্য জানায়—তাকে নাকি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে দিল্লি থেকে।
বিশ্বস্ত কিছু সূত্রের দাবি, ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের অধীনস্থ একটি নিরাপদ ও গোপন স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে।
এই ধরনের স্থানে সাধারণত গোপন সামরিক তৎপরতা চলে, যেখানে অসামরিক ব্যক্তিদের প্রবেশ বা উপস্থিতি অত্যন্ত সীমিত এবং কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।
তবে সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো—ভারত সরকার এই তথ্য প্রকাশ্যে স্বীকারও করছে না, আবার অস্বীকারও করছে না।
সরকারি স্তরে এ নিয়ে কোনো বিবৃতি নেই। এমনকি ভারতীয় গণমাধ্যম, যারা সাধারণত রাজনৈতিক ঘটনা নিয়ে সরব থাকে, তারাও এখানে অস্বাভাবিক সংযম ও নীরবতা দেখাচ্ছে।
এই নীরবতার ভেতরেই যেন লুকিয়ে আছে আরও গভীর এক রহস্য।
প্রশ্ন উঠছে—
- তাকে গোপন রাখার পেছনে কী রয়েছে ভারতীয় অভ্যন্তরীণ নীতির প্রভাব?
- তাকে কোথায় এবং কী কারণে রাখা হয়েছে?
- এই ‘নিরাপত্তা’ আসলে কতটা রাজনৈতিক?
ভারতের দ্বিধা: কূটনৈতিক চাপ ও নীতিগত সংকট
শেখ হাসিনার আশ্রয় ভারতের জন্য কেবল একটি মানবিক ইস্যু নয়—এটি হয়ে উঠেছে এক জটিল কূটনৈতিক ভারসাম্যের প্রশ্ন।
যদিও তিনি ভারতের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র, তবুও অভ্যুত্থান-পীড়িত এক দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয় গ্রহণ রাজনৈতিকভাবে মোটেই সুবিধাজনক নয়।
দক্ষিণ এশিয়ার ভঙ্গুর সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বাস্তবতায়, শেখ হাসিনাকে স্থায়ীভাবে আশ্রয় দিলে ভারতকে নানা দিক থেকে চাপের মুখে পড়তে হবে—
একদিকে বাংলাদেশের নতুন সরকার, অন্যদিকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর প্রতিক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের নজর।
এই দ্বিধার ফলেই, কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে—
ভারত সরকার তাকে তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সেটি যেন সরাসরি ‘অস্বীকৃতি’ না হয়, আবার অতিরিক্ত দায়ভারও ভারতকে না নিতে হয়—এমন একটি মধ্যপন্থা খোঁজা হচ্ছে।
কিন্তু এখানেই তৈরি হয়েছে নতুন জটিলতা।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন নীতি, রাজনৈতিক আশ্রয়ের নৈতিকতা, এবং গ্রহণযোগ্য দেশ খুঁজে পাওয়া—সব কিছুতেই জট।
যুক্তরাজ্য প্রত্যাখ্যান করল, এখন কোথায়?
শেখ হাসিনার আশ্রয়প্রাপ্তির সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে প্রথমেই যে নামটি সামনে এসেছিল, তা হলো যুক্তরাজ্য—একটি দেশ যা বহুবার বিতর্কিত নেতাদের মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় দিয়েছে।
কিন্তু হিন্দুস্তান টাইমস-এর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—
শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যে যেতে চেয়েছিলেন, তবে লন্ডন সরকার স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
এই প্রত্যাখ্যান কেবল শেখ হাসিনার নয়, বরং ভারত ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যেও এক নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
এই পরিস্থিতিতে আরও একবার সামনে আসে প্রশ্ন—তিনি এবার যাবেন কোথায়?
কিছু সূত্র ইঙ্গিত দিচ্ছে, তাকে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ, মালয়েশিয়া, কিংবা কানাডার মতো অপেক্ষাকৃত নিরপেক্ষ দেশে পাঠানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে এ পর্যন্ত কোনো দেশই সরকারিভাবে তাকে আশ্রয় দেওয়ার ঘোষণা দেয়নি।
আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে এ ধরনের অনিশ্চয়তা নতুন নয়, তবে একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, যিনি দীর্ঘদিন দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন—তার ক্ষেত্রে এই নীরবতা একটু বেশিই কষ্টদায়ক ও চিন্তার বিষয়।
শেষ কথা: কোথায় সেই ঠিকানা?
শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থান যেমন অজানা, তেমনি অনিশ্চিত তার ভবিষ্যৎও।
দিল্লি নয়, লন্ডন নয়—এখন তিনি কোথায়? আর কি কখনও ফিরবেন দেশের রাজনীতিতে?
এ প্রশ্নগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে কূটনৈতিক মহলে, সাধারণ মানুষের আলোচনায়, এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ার অলিগলিতে।
এক সময়ের শক্তিশালী এক নেত্রী আজ কোথায়? তার গল্প কি এখানেই শেষ? না কি সামনে অপেক্ষা করছে আরও এক নতুন অধ্যায়?
➡️ আপনার মতামত দিন:
শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিণতি নিয়ে আপনি কী ভাবছেন?
কমেন্টে লিখুন আপনার মতামত।
1 thought on “দিল্লিতে নেই শেখ হাসিনা: তার অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা…”