ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে রংপুরের সাধারণ ছাত্র-জনতা একটি বড় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। তারা দাবি করছে, অন্তর্বর্তী সরকারে উত্তরাঞ্চল থেকে একজন উপদেষ্টা নিয়োগ করতে হবে। বুধবার (১৩ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রংপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা লালবাগের সামনে জড়ো হন এবং সেখান থেকে মিছিল নিয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে মডার্ন মোড়ে পৌঁছান।
এরপর সাড়ে ১২টার দিকে এই শিক্ষার্থীরা ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে মডার্ন মোড়ে বসে পড়েন। এসময় তারা স্লোগান দিতে শুরু করেন এবং বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুরের কয়েকজন নেতৃবৃন্দ। তাদের মধ্যে ছিলেন ইমরান আহমেদ, আশফাক আহমেদ, নাহিদ হাসান খন্দকার, ইমতিয়াজ আহমেদ, ইয়াসির আরাফাত, সাইফুল ইসলাম এবং শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।
আরও পড়ুন: রংপুরের এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে ২০ যমজ শিশু
বক্তারা তাদের বক্তব্যে অভিযোগ করেন
অন্তর্বর্তী সরকার রংপুর ও রাজশাহী বিভাগসহ উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে বৈষম্য করছে। তারা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ১৩ জন উপদেষ্টা রয়েছেন, কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো একজনও উত্তরাঞ্চল থেকে নিযুক্ত হয়নি, সবকটি উপদেষ্টা চট্টগ্রাম বিভাগের। এর ফলে আঞ্চলিক বৈষম্য আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন আন্দোলনকারীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ইমরান আহমেদ বলেন, “রংপুর হচ্ছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সূতিকাগার। আবু সাঈদের রক্তের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল এই গণ-অভ্যুত্থান। ১০ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রংপুরে এসে বলেছিলেন, রংপুর হবে দেশের অন্যতম সেরা জেলা, এক নম্বর হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত রংপুরের জনগণের কথা বলার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের একটিও উপদেষ্টা নেই।” তিনি আরও বলেন, “আবু সাঈদের জন্মভূমি রংপুরকে চরম অবহেলা করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।”
আরও পড়ুন: রংপুর মাতাচ্ছে ‘অনন্যার রসগোল্লা চা’: চায়ের নতুন অধ্যায় শুরু
এসময় বক্তারা উত্তরাঞ্চল এর যোগ্য ব্যক্তিদের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা করার দাবি জানান। তারা বিশেষভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনের নাম উল্লেখ করেন এবং তাকে উপদেষ্টা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। আন্দোলনকারীরা স্লোগান দেন, ‘বৈষম্য বন্ধ করো’, ‘আখতার হোসেনকে উপদেষ্টা হিসেবে দেখতে চাই’, ‘উত্তরের চাহিদা পূরণ করো’।
প্রায় এক ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির পর বিক্ষোভকারীরা সড়ক থেকে সরে যান, তবে তারা পরবর্তী সময়ে আরো বড় আন্দোলন গড়ার হুমকি দেন। তারা বলেন, “যদি আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া হয়, তবে আমরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধসহ রংপুর বিভাগকে অচল করে দেওয়ার মতো কর্মসূচি ঘোষণা করব।”
বিক্ষোভকারীরা তাদের বক্তব্যে উত্তরবঙ্গের ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে তিনটি প্রধান দাবি উত্থাপন করেন:
১. সুষম উন্নয়ন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি প্রণয়ন: উত্তরবঙ্গের দুটি বিভাগের (রংপুর এবং রাজশাহী) থেকে কমপক্ষে দুইজন করে মোট চারজন উপদেষ্টা নিয়োগ করা হোক।
২. আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণ: সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈষম্য না করা এবং প্রতিটি উপদেষ্টার কার্যক্রমের অগ্রগতি সাপ্তাহিকভাবে জনসমক্ষে প্রকাশ করা।
৩. বৈষম্যবিরোধী পরামর্শ: বিতর্কিত ব্যক্তিদের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বক্তারা দাবি করেন, “নীতিমালা প্রণয়নে উত্তরবঙ্গের বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।”
এদিনের প্রতিবাদে যোগ দেন রংপুর ও আশপাশের অঞ্চলের শিক্ষার্থী, যুবক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। তারা সকলেই দাবি জানান যে, অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তের মধ্যে উত্তরবঙ্গের মানুষের সঠিক প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে।
এই আন্দোলনটি নতুন মাত্রায় উত্তাল হয়ে উঠেছিল। রংপুর শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আসা শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে একটি বড় মিছিল গঠন করেন। শহরের প্রধান সড়ক দিয়ে তারা মিছিল নিয়ে অগ্রসর হন এবং পরে মডার্ন মোড়ে গিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে বসে পড়েন। একে একে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী সেখানে উপস্থিত হন এবং বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন।
আরও পড়ুন: চাহিদা অনুযায়ী আলুবীজ পাচ্ছেন না রংপুরের কৃষক
উল্লেখ্য, এই বিক্ষোভটি নতুন নয়, এর আগে সোমবার ও মঙ্গলবার বিকেলে শিক্ষার্থীরা আখতার হোসেনকে উপদেষ্টা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে শহরের প্রেসক্লাব মোড়ে সড়ক অবরোধ করে। সেসময়ও তারা স্লোগান দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যান এবং তাদের দাবি না মানা হলে পরবর্তী সময়ে আরো বড় আন্দোলনের ডাক দেন।
এদিকে, উত্তরাঞ্চল তথা রংপুর অঞ্চলের ছাত্রদের এই আন্দোলন শুধু সরকারের কাছে নয়, গোটা দেশবাসীর কাছে তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের এক চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, এই আন্দোলনের মাধ্যমে তারা শুধু নিজেদের ন্যায্য দাবি পূরণের জন্য নয়, বরং পুরো উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন এবং ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছেন।
আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনোরকম প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি, তবে স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে। এখন দেখতে হবে, আন্দোলনকারীদের দাবি কীভাবে বিবেচনা করা হয় এবং সরকারের পক্ষ থেকে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
1 thought on “উত্তরাঞ্চল থেকে উপদেষ্টা নিয়োগের দাবিতে উত্তাল রংপুর: মহাসড়ক অবরোধ”