প্রতি বছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশের রুপালি ইলিশ রফতানির পাশাপাশি ‘উপহার’ হিসেবেও যাচ্ছিল ভারতে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এবার ইলিশ রফতানি নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ভারতের ইলিশ রফতানি বন্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে করে আসন্ন দুর্গাপূজায় ইলিশ সংকট তৈরি হয়েছে পশ্চিমবাংলায়। ইলিশ মাছ খাওয়া নিয়ে সংশয়ে ভারতীয় জনগণ। তবে এ অনিশ্চয়তার মধ্যেও কিছুটা আশার আলো দেখা গিয়েছে। ফিস ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি ভারতীয় রপ্তানি প্রতিষ্ঠান ইলিশ রপ্তানির জন্য আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কাছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের ১০ সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাধারণত সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ পাঠানো হয়। তবে এ বছর রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের কারণে ইলিশ রফতানি হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে ইলিশ পাঠানোর প্রথা ছিল, কিন্তু বর্তমানে সরকার পরিবর্তনের ফলে সেই প্রক্রিয়া থমকে গেছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশী সমর্থকরা বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন ভারতীয় ভক্তদের বিরুদ্ধে
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ৩ সেপ্টেম্বর জানান, দেশের চাহিদা মেটানোর আগে ইলিশ রফতানি করা হবে না। দেশের মানুষ ইলিশ না পেয়ে বিদেশে রফতানি করা হবে, সেটা হতে পারে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এই পরিস্থিতিতে ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৯৬ সাল থেকে ভারতে বাংলাদেশের ইলিশ আমদানি হয়ে আসছে। প্রতি বছর পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ আমদানি করা হয়। ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার ভারতে ইলিশ রফতানি বন্ধ করে দেয় এবং এরপর থেকে আমদানির আবেদন সত্ত্বেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে ২০১৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত দুর্গাপূজা উপলক্ষে শুভেচ্ছা হিসেবে কিছু পরিমাণ ইলিশ রফতানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
চিঠিতে সংগঠনটি লিখেছে,
অত্যন্ত বিনয় এবং শ্রদ্ধার সাথে আপনাকে (পররাষ্ট্র উপদেষ্টা) জানানো যাচ্ছে যে, আমরা ১৯৯৬ সাল থেকে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ মাছ আমদানি করে আসছি। প্রতি বছর আমরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশনের মাধ্যমে প্রায় ৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ আমদানি করি।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরায় বাংলাদেশের ইলিশের অনেক চাহিদা রয়েছে। তাই দুর্গাপূজায় ইলিশ রফতানির অনুমতি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়,
দুর্ভাগ্যবশত, ২০১২ সালের জুলাইয়ে হঠাৎ করেই বাংলাদেশ সরকার ইলিশ মাছের রফতানি নিষিদ্ধ করে। এরপর থেকে আমরা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার জন্য তাদের কাছে চিঠি দিয়েছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
চিঠিতে বলা হয়,
এমন পরিস্থিতিতে আমরা আপনার (পররাষ্ট্র উপদেষ্টা) সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি এবং দুর্গাপূজার জন্য ইলিশ মাছ রফতানির অনুমতি দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। কারণ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং ত্রিপুরায় বাংলাদেশের ইলিশের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
চিঠিতে বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার আশাবাদও প্রকাশ করা হয়েছে।