কেন কখন ও কিভাবে শুরু মঙ্গল শোভাযাত্রার, জেনে নিন ইতিহাস

বাংলা নববর্ষ, বাঙালির জীবনে এক অনন্য উৎসবের নাম। এই দিনটি বাঙালির জীবনে নতুনের আগমন, পুরনোকে বিদায় জানানোর এক অনুষ্ঠান। এই উৎসবের অঙ্গ হিসেবে প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে আয়োজিত হয় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। এই শোভাযাত্রা নতুন বছরের প্রথম দিনে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের আয়োজনে বের হয়ে থাকে। এই শোভাযাত্রা বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিচয়, সেক্যুলারিজম, এবং ঐক্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এই মঙ্গল শোভাযাত্রার শুরু কেন, কখন এবং কিভাবে হলো, এর পেছনের ইতিহাস কী? আসুন, এই ব্লগ পোস্টে আমরা মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস জানার চেষ্টা করি।

শোভাযাত্রা অর্থ

শোভাযাত্রা বাংলা শব্দ যার অর্থ হলো একটি উৎসবমুখর প্রক্রিয়া বা র‍্যালি। এটি সাধারণত কোনো বিশেষ উপলক্ষে আনন্দ ও উদযাপনের প্রতীক হিসেবে আয়োজিত হয়। শোভাযাত্রা শব্দটি সাধারণত সুখ, সমৃদ্ধি, এবং মঙ্গলের প্রত্যাশায় বের করা হয়ে থাকে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

আরও পড়ুন : নতুন বছরের শুভেচ্ছা স্ট্যাটাস 2024, মেসেজ, কবিতা ও বাণী

মঙ্গল শোভাযাত্রা যে অভিধায় পরিচিত

মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরুর পেছনের ইতিহাস শুধুমাত্র একটি উৎসবের আয়োজন নয়, বরং এটি বাঙালির সাংস্কৃতিক প্রতিবাদের এক অনন্য প্রকাশ। ১৯৮৯ সালে প্রথম এই শোভাযাত্রার সূচনা হয়, যখন দেশ সামরিক শাসনের অধীনে ছিল এবং বাঙালির মনে এক গভীর অসন্তোষ ও প্রতিবাদের ভাব বিরাজ করছিল।

এই শোভাযাত্রা শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে, যেখানে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা মিলে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিবাদের আয়োজন করেন। এই শোভাযাত্রার মাধ্যমে তারা অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান এবং মঙ্গলের কামনা করেন এবং বাঙালির সেক্যুলার পরিচয় এবং ঐক্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত।

মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস

মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস শুরু হয় ১৯৮৯ সালে, যখন বাংলাদেশ সামরিক শাসনের অধীনে ছিল এবং দেশে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এই সময়ে ঢাকায় একটি গণঅভ্যুত্থান ঘটে এবং অনেক মানুষ, যেমন নূর হোসেন, নিহত হন। এর প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজন করেন। এই শোভাযাত্রা এখন প্রতি বছর বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে পালিত হয় এবং এটি শান্তি, ঐক্য এবং মন্দের বিতাড়নের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়।

আরও পড়ুন

এই শোভাযাত্রা বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে পালিত হয় এবং এটি বাঙালির সম্প্রীতি, নতুন শুরু, এবং অশুভ শক্তির বিনাশের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রা বিভিন্ন মাসকট, সরাচিত্র, মুখোশ এবং মোটিফের মাধ্যমে আবহমান বাংলার লোকজ ঐতিহ্যকে তুলে ধরে।

আরও পড়ুন : বেশি হাসা, দ্রুত কথা বলা, অল্পতেই রেগে আগুন- এমন সব আচরণের কী মানে?

মঙ্গল শোভাযাত্রা বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা এবং ধর্মের মানুষের জন্য উন্মুক্ত এবং এটি সবাইকে একপ্ল্যাটফর্মে আনার চেষ্টা করে। এই শোভাযাত্রা বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো এবং মঙ্গল কামনায় আয়োজন করা হয়।

পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা ইউনেস্কো

২০১৬ সালে ইউনেস্কো মঙ্গল শোভাযাত্রাকে মানবতার অমূল্য অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং এটিকে অমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে। এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং ঐতিহ্যকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরে[1].

মঙ্গল শোভাযাত্রা কেন করা হয়

মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হয় বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে সকলের মঙ্গল কামনা করে। এটি বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিচয়, সেক্যুলারিজম, এবং ঐক্যের প্রতীক হিসেবে পালিত হয়। এই শোভাযাত্রা মাধ্যমে বাঙালিরা তাদের সামাজিক প্রথা, রীতি এবং উৎসবের মাধ্যমে একতা এবং শান্তির বার্তা প্রচার করে থাকেন।

সব মিলিয়ে, মঙ্গল শোভাযাত্রা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের এক অপরিহার্য অংশ এবং এটি প্রতি বছর বাঙালির জীবনে নতুন বছরের শুরুতে এক নতুন আশা এবং উদ্যমের সঞ্চার করে।

Juger Alo Google News   যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

1 thought on “কেন কখন ও কিভাবে শুরু মঙ্গল শোভাযাত্রার, জেনে নিন ইতিহাস”

Leave a Comment