সাম্প্রতিক সময়ে দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি স্লোগান —”সব শালারা বাটপার, আর্মি হবে ঠিকাদার”। এই স্লোগানটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আলোচনা ও বিতর্ক চলছে। সচিবালয়ের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যখন এই স্লোগানটি দেন, তখন এটি নিয়ে বেশ কিছু ভুল ধারণা তৈরি হয়। অনেকেই মনে করেন, এই স্লোগানটি তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এবং অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ছিল। তবে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, স্লোগানটির উদ্দেশ্য ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।
আরও পড়ুন: জাবির নবীন শিক্ষার্থীর মাঝে দেড় হাজার কপি কুরআন বিতরণ
এই স্লোগানটি মূলত দুর্নীতি এবং প্রশাসনের বিরুদ্ধে ছিল, এবং এটি কোনোভাবেই নাহিদ ইসলাম বা অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে ছিল না। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি রাকিব হাসান এই বিষয়ে পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন যে, এই স্লোগানটি ফ্যাসিবাদী আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে ছিল। তিনি আরও বলেন, গত ছয় বছর ধরে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি এবং প্রকল্পটির মেয়াদ চারবার বাড়ানোর পরেও কাজ শেষ করা হয়নি। বরং, ঠিকাদাররা নিজেদের পকেট ভারি করতে পুকুর চুরি করেছে, যা দেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
রাকিব হাসান আরও বলেছেন, “আমরা এই স্লোগানটি দিয়েছিলাম, যাতে দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারের বদলে সেনাবাহিনীর কাছে প্রকল্পটি হস্তান্তরের দাবি জানানো হয়। আমাদের দাবি ছিল, সেনাবাহিনী যাতে এই কাজটি শুরু করে, কারণ তারা প্রকল্পের কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম।” তিনি স্পষ্টভাবে জানান, এই স্লোগানটি কোনোভাবেই নাহিদ ইসলাম বা অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে নয়, বরং এটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছিল।
আরও পড়ুন: প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পর বেরোবির হলের মসজিদে মাইকে আযান
এদিকে, আন্দোলনের মুখপাত্র তৌসিব মাহমুদ সোহান দাবি করেছেন, “ফেসবুকের কিছু পেজে এই বিষয়টি ভুলভাবে প্রচার করা হচ্ছে।” তার মতে, এই স্লোগান এবং আন্দোলনকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে কিছু স্বৈরাচারী দালাল ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করছে। তিনি আরো বলেন, “আমরা তাদের স্পষ্টভাবে বলতে চাই, তারা আমাদের ঐক্যরে ফাটল ধরাতে পারবেন না। আমরা দেশের স্বার্থে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলবো।”
এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ এই স্লোগানটি মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি প্রকল্পের দুর্নীতি এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতার বিরুদ্ধে ছিল। আন্দোলনকারীরা দাবি করেছেন, সেনাবাহিনী এই প্রকল্পটি হাতে নিলে তারা তা দ্রুত এবং সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে। গত ছয় বছরে এই প্রকল্পের কাজ যতটা এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল, তা হয়নি। বরং, প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অর্থ এবং সময় সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়নি, যা দেশের সাধারণ জনগণের জন্য ক্ষতিকর।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের পাঁচ দফা দাবি নিয়ে গত ১৩ নভেম্বর গণপদযাত্রা শুরু করেন, যার মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা। তবে, শিক্ষাসচিবের সঙ্গে দেখা না হওয়ায় তারা সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এরপর তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন, এবং পরে একটি প্রতিনিধিদল সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে।
আরও পড়ুন: ২১ বছর পর ঢাবির হলে মাইকে আযান: আবেগে আপ্লুত শিক্ষার্থীরা
বৈঠক শুরুর আগে শিক্ষার্থীরা “সব শালারা বাটপার, আর্মি হবে ঠিকাদার” স্লোগান দেন। এই ঘটনা দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং তা নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তবে, আন্দোলনকারীরা বলেছেন, তাদের উদ্দেশ্য ছিল প্রশাসনের দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো, না যে তারা সরকারের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছেন।
এই ঘটনার মাধ্যমে আরও একবার স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার এবং প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে সামাজিক মিডিয়া এবং স্লোগান ব্যবহার করছেন। তবে, এখানে ভুল ব্যাখ্যা এবং রাজনৈতিক মহলের পক্ষ থেকে ষড়যন্ত্রের অভিযোগও উঠেছে। আন্দোলনকারীরা নিশ্চিত করেছেন যে, তাদের উদ্দেশ্য ছিল সরকারের বিরুদ্ধে নয়, বরং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন এবং স্লোগানটি বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেছে। এটি সবার কাছে একটি বার্তা দিচ্ছে যে, শিক্ষার্থীরা যদি তাদের অধিকার নিয়ে সচেতন হয় এবং সঠিক পথে প্রতিবাদ জানায়, তবে তা দেশের উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
1 thought on “‘সব শালারা বাটপার, আর্মি হবে ঠিকাদার’ স্লোগানটির আসল উদ্দেশ্য কী ছিল?”