রক্তে শর্করা বেশি থাকুক বা না থাকুক, চিনি ছাড়া চা খাওয়া যেন এখন একটা হুজুকে পরিণত হয়েছে। স্বাস্থ্য সচেতন, শরীরচর্চা করেন যারা, তাদের ডায়েটেও চিনি বাদ। কিন্তু, লবণ দিয়ে চা খেলে কী হয় জানেন? খেয়ে দেখেছেন কখনও? রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার জন্য চায়ে বিভিন্ন ধরনের মশলা, যেমন— গোলমরিচ, ছোট এলাচ, লবঙ্গ, দারচিনি কিংবা তেজপাতা দেওয়ার রীতি আগেও ছিল। সেসব মশলার অনেক গুণও রয়েছে। তবে, চায়ে লবণ দিয়ে খাওয়ার কথা এর আগে বোধ হয় অনেকেই শোনেননি।
চা বাঙালির জীবনে এক অপরিহার্য পানীয়। সকালের শুরু হোক বা বিকেলের আড্ডা, চা ছাড়া যেন অসম্পূর্ণ। তবে চায়ে চিনির পরিবর্তে লবণ মেশানোর প্রচলন অনেকের কাছে নতুন মনে হতে পারে। এই নিবন্ধে আমরা লবণ দিয়ে চা খেলে কী হয়? লবণ দিয়ে চা খাওয়ার উপকারিতা এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে আলোচনা করব।
আরও পড়ুন : সেক্সে রসুনের উপকারিতা কি এবং খাওয়ার নিয়ম
লবণ দিয়ে চা খাওয়ার উপকারিতা
লবণ দিয়ে চা খাওয়ার প্রচলন নতুন নয়। অষ্টম শতাব্দীর চীনা পাণ্ডুলিপিতেও এই প্রথার উল্লেখ আছে। লবণ চা পানের কিছু উপকারিতা হলো:
- **গলা ব্যথা ও সর্দি উপশম**: লবণ চা গলা ব্যথা এবং সর্দি-কাশির উপশমে সাহায্য করে। পরিবর্তনশীল মৌসুমে সর্দি ও কাশি প্রায়ই হয়ে থাকে। এই সময়ে চায়ে একটু লবণ মেশানো উপকারী হতে পারে। এটি ইমিউনিটি বৃদ্ধি করতে এবং রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- **হজম শক্তি বৃদ্ধি**: লবণ খাবার হজমে সাহায্য করে, এমন উৎসেচকের ক্ষরণ বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। নতুন বছরের উৎসবে অতিরিক্ত খাওয়ার পর হজমের গোলমাল হতে পারে। বারবার মেডিসিন না নিয়ে, চায়ে একটু লবণ মিশিয়ে পান করলে হজমে সাহায্য পাওয়া যায়। লবণ হজমের উৎসেচক উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক।
- **ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ**: গরমে ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে খণিজ বেরিয়ে যায়। লবণ চা শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। গরমের দিনে ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে বিভিন্ন খনিজ উপাদান হারায়। কেবল পানি পান করে শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখা সম্ভব নয়। ডিহাইড্রেশনের সমস্যায় লবণ উপকারী হতে পারে। একটু গরম চায়ে লবণ মিশিয়ে পান করলে এটি উপশম করতে পারে।
আরও পড়ুন : বেশি হাসা, দ্রুত কথা বলা, অল্পতেই রেগে আগুন- এমন সব আচরণের কী মানে?
সম্ভাব্য ঝুঁকি
যদিও লবণ চা কিছু উপকার প্রদান করে, তবে এর অতিরিক্ত গ্রহণ কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- **উচ্চ রক্তচাপ**: অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ উচ্চ রক্তচাপের জন্য দায়ী।
- **হৃদরোগ ও কিডনি রোগ**: বেশি লবণ গ্রহণ হৃদরোগ, গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার, স্থূলতা, অস্টিওপরোসিস এবং কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
- **শিশুদের জন্য অনুপযুক্ত**: শিশুদের লবণ খাওয়া ঠিক নয় কারণ তাদের কিডনি পুনর্গঠিত থাকে না বিধায় তারা লবণ হজম ও শোষণ করতে পারে না।
সুপারিশ
লবণ চা পানের আগে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মনে রাখা উচিত:
- – প্রতিদিনের লবণ গ্রহণের পরিমাণ ২ হাজার ৪০০ মিলিগ্রামের মধ্যে সীমিত রাখতে হবে, যা ৬ গ্রাম বা ১ চা চামচের সমান।
- – বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী দিনে ৫ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়।
- – যদি কোনো ইনফেকশন বা গুরুতর রোগ থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া লবণ চা পান করা উচিত নয়।
সাধারণ কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
মানুষ কি চায়ে লবণ দেয়?
– হ্যাঁ, কিছু সংস্কৃতিতে চায়ে লবণ দেওয়ার প্রচলন আছে।
লবণ দিয়ে চা কি ক্ষতিকর?
– সাধারণত লবণ দিয়ে চা পান করা ক্ষতিকর নয়, তবে অতিরিক্ত লবণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
দুধ চা লবণ দিয়ে তৈরি হয় কেন?
– কিছু অঞ্চলে দুধ চা লবণ দিয়ে তৈরি হয়, এটি সেই অঞ্চলের ঐতিহ্য বা স্বাদের পছন্দের কারণে হতে পারে[12].
লবণ চা কি পেটের জন্য ভালো?
– লবণ চা পেটের গ্যাস কমাতে এবং হজমে সাহায্য করতে পারে।
লবণ গরম পানির কাজ কি?
– লবণ গরম পানি গার্গল করলে গলা ব্যথা এবং সর্দি উপশমে সাহায্য করে।
নোনতা চা আছে?
– হ্যাঁ, নোনতা চা বিশেষ কিছু অঞ্চলে প্রচলিত এবং এটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
চা খাওয়ার পর ড্রাই ফ্রুট খাওয়া যাবে কি?
– হ্যাঁ, চা খাওয়ার পর ড্রাই ফ্রুট খাওয়া যাবে।
লবণ দিয়ে চা কিভাবে বানায়?
– লবণ দিয়ে চা বানানোর পদ্ধতি সংস্কৃতি ভেদে ভিন্ন হতে পারে, সাধারণত চা তৈরির সময় সামান্য লবণ মিশিয়ে দেওয়া হয়।
লবণ দিয়ে চা খাওয়া কি ভালো?
– লবণ দিয়ে চা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বা খারাপ তা ব্যবহৃত লবণের পরিমাণ এবং ব্যক্তির স্বাস্থ্য অবস্থা উপর নির্ভর করে।
দুধ চায়ে লবণ খেলে কি ক্ষতি হয়?
– দুধ চায়ে লবণ খেলে সাধারণত ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়নি, তবে এটি স্বাদের দিক থেকে অপ্রচলিত।
সব মিলিয়ে, লবণ চা পান করা যেতে পারে কিন্তু মাত্রাজ্ঞান সহকারে। স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন |
1 thought on “লবণ দিয়ে চা খেলে কী হয় জানেন?”