শীতের মরসুম আসতে চলেছে, আর এই সময় শিশুদের যত্ন নেওয়া আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিশেষত যখন দিনের তাপমাত্রা উষ্ণ থাকে এবং রাতের বেলা তাপমাত্রা হঠাৎ কমে যায়, তখন শিশুর জন্য শীতকাল হতে পারে একটি কঠিন সময়। বড়রা হয়তো ঠান্ডা বা গরম পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে, কিন্তু শিশুদের জন্য এই সময়টা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তাই শীতে শিশুর যত্নের জন্য কিছু বিশেষ সতর্কতা এবং পরামর্শ মেনে চলা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: গরম পানি পান করলে কী হয়? গরম পানি খাওয়ার উপকারিত ক্ষতিকর দিক
১ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর যত্ন
শীতে শিশুর প্রথম বছরের যত্ন সবচেয়ে বেশি জরুরি। শিশুকে শীতের কারণে ঠান্ডা থেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
শিশুকে উষ্ণ রাখা: শিশুকে ঠান্ডা পরিবেশে রাখা যাবে না। শীতকালে শিশুদের সাধারণত উষ্ণ রাখতে হবে, তবে এক্ষেত্রে বাড়তি গরমও নয়, কারণ অতিরিক্ত গরম শিশুর শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। স্যাঁতসেঁতে বা ঠান্ডা ঘরে শিশুকে রাখা যাবে না। গরম কাপড় পরানোর সময় নিশ্চিত করুন যে তা খুব মোটা বা আঁটসাঁট নয়, কারণ শিশুদের শরীরে ঘামাচি বা ফুসকুড়ি হয়ে যেতে পারে।
বুকের দুধ: শিশুকে বুকের দুধ নিয়মিত খাওয়াতে হবে। বুকের দুধ শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং তাদের শীতকালীন অসুখ থেকে সুরক্ষা দেয়। যদি ফিডারে দুধ খাওয়ান, তবে অল্প গরম দুধ দিন এবং ঘুমানোর সময় ঠান্ডা দুধ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
গোসলের পর সাবধানতা: শীতকালে শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। গোসলের পর বেবি লোশন ব্যবহার করা প্রয়োজন। তবে তেলজাতীয় কিছু ব্যবহার করবেন না, কারণ এটি শিশুর ত্বকে র্যাশ বা ফুসকুড়ি তৈরি করতে পারে।
মাদুর বা ম্যাট: শিশুকে হামাগুড়ি দেওয়ার জন্য কখনও ঠান্ডা মেঝে ব্যবহার করবেন না। যদিও কার্পেট ব্যবহার করা নিরাপদ নয়, তবে মাদুর বা ম্যাট ব্যবহার করলে শিশু ঠান্ডা থেকে সুরক্ষিত থাকবে।
আরও পড়ুন: মুরগির হাড় চিবানো আসলেই কি ভালো? ৯৯% মানুষ জানে না
১ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুর যত্ন
শিশু যখন ১ বছর বয়সের পর একটু বড় হয়, তখন তারা বিভিন্ন খেলাধুলা ও দৌড়াদৌড়ি করতে শুরু করে। এই বয়সে তাদের শরীর অনেক বেশি সক্রিয় থাকে এবং তারা আরও বেশি গরম কাপড় পরতে পছন্দ করে না। তবে তাদের শীতকালীন যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
গরম কাপড় পরানোর প্রয়োজন: শিশুরা শীতকালে সাধারণত খেলাধুলা ও দৌড়াদৌড়ি করে থাকে। তবে সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় বা বিকেলে খেলার সময় তাদের গরম কাপড় পরানো উচিত যাতে তারা ঠান্ডা অনুভব না করে।
ত্বকের যত্ন: শীতে শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে, তাই তাদের ত্বকের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখা উচিত। নিয়মিত লোশন ব্যবহার করতে হবে যাতে ত্বক শুষ্ক না হয়ে যায়। শীতকালে শরীরের বিশেষ যত্ন নেয়া উচিত যাতে ত্বক বা শরীরের কোন ধরনের ক্ষতি না হয়।
শীতকালীন খাবার: শীতকালে শিশুকে বেশি করে শীতকালীন ফলমূল যেমন কমলা, বরই ইত্যাদি খাওয়ান। এসব খাবার শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং তাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
শীতকালীন শাকসবজি ও ফলের গুরুত্ব
শীতকালে শিশুদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে শাকসবজি এবং ফলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কমলা, লেবু, পালংশাক, লালশাক, শীতকালীন গাজর এসব খাবার শিশুদের শরীরের শক্তি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
শিশুর ডায়েটে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলমূল যেমন কমলা, বরই, আনারস ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সহায়ক এবং শীতকালে শিশুদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
শীতের শুরুতে বাড়তি সতর্কতা
শীতের শুরুর সময়ে এবং রোদ উঠলে, মাঝেমধ্যে শিশুর লেপ, তোশক, কম্বল, চাদর ইত্যাদি রোদে দিতে হবে। এইসব জিনিসগুলি রোদে দিলে এগুলো আরও উষ্ণ থাকে এবং শিশুকে ঠান্ডা থেকে সুরক্ষা প্রদান করে।
আরও পড়ুন: কিডনি সুস্থ রাখতে চাইলে এই ৭ ফল খান: কিডনি সুরক্ষার সহজ উপায়
শীতের শুরুতে বা শেষে এসব পরিষ্কার করার মাধ্যমে ধুলাবালি ও ময়লা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ধুলাবালি শিশুদের শ্বাসনালীতে প্রবেশ করলে তাদের শ্বাসকষ্ট হতে পারে, তাই বাড়ির প্রতিটি জায়গা পরিষ্কার রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুদের জন্য শীতকালীন পোশাকের সঠিক নির্বাচন
শীতকালীন পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিশুর জন্য খুব গরম কাপড় পরানো উচিত নয়, কারণ অতিরিক্ত গরমও শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। মোটা সুতির কাপড় পরানো যেতে পারে, তবে আঁটসাঁট বা উলের কাপড় পরানো পরিহার করা উচিত, কারণ এতে শিশুর শরীরে ঘামাচি হতে পারে।
শোয়ানোর সময় মোজা পরানো উচিত, তবে উলের মোজা পরানোর প্রয়োজন নেই। উলের কাপড় শিশুর শরীরের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে এবং এতে শিশুর শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে।
শীতে শিশুর যত্নে সাধারণ সতর্কতা
- শীতে শিশুকে খুব বেশি ঠান্ডা বা গরম পরিবেশে রাখবেন না।
- শিশুকে সঠিকভাবে উষ্ণ রাখুন, তবে অত্যধিক গরম এড়িয়ে চলুন।
- শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে নিয়মিত লোশন ব্যবহার করুন।
- শিশুদের খাওয়াতে শীতকালীন খাবার যেমন কমলা, বরই, পালংশাক ইত্যাদি দিন।
উপসংহার
শীতে শিশুর যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি, বিশেষত যখন তাপমাত্রা দ্রুত পরিবর্তিত হয়। সঠিক শীতকালীন যত্ন, সঠিক খাবার এবং পোশাক শিশুর স্বাস্থ্য ও সুখী জীবন নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। “শীতে শিশুর যত্ন” সঠিকভাবে নেওয়া হলে শিশুর শীতকালীন অসুখ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। আশা করি, এই পরামর্শগুলো শীতকালে শিশুর সঠিক যত্ন নেওয়ার জন্য আপনাকে সহায়তা করবে।
1 thought on “শীতে শিশুর যত্ন: দিনে গরম, শেষ রাতে ঠান্ডা, এমন সময় যা মনে রাখবেন”