এমপক্স কি? এটি কিভাবে ছড়ায়? জেনে নিন এর ইতিাহস, লক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ, নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা

এমপক্স

এমপক্স কি

(পূর্বে মাংকিপক্স বা বাঁদরবসন্ত নামে পরিচিত) একটি সংক্রামক রোগ যা বাঁদরবসন্ত ভাইরাস (Monkeypox virus, MPXV) দ্বারা সৃষ্ট। এটি মানুষসহ কিছু প্রাণীর মধ্যে দেখা যায়। এমপক্সের লক্ষণগুলোর মধ্যে জ্বর, মাথাব্যথা, পেশীতে ব্যথা, লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া, ক্লান্তি এবং ত্বকে ফুসকুড়ি অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা পরবর্তীতে ফোস্কায় পরিণত হয়।

আরও পড়ুন: আমের আঁটি দিয়ে কী করবেন? জেনে নিন উপকারিতা, ব্যবহার ও পুষ্টিগুন

এমপক্স রোগের ইতিহাস কী

এমপক্স, যা পূর্বে মাঙ্কিপক্স নামে পরিচিত ছিল, একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা বাঁদরবসন্ত ভাইরাস (MPXV) দ্বারা সৃষ্ট। এই ভাইরাসটি অর্থোপক্সভাইরাস গোত্রের অন্তর্গত এবং গুটিবসন্ত ভাইরাসের সাথে সম্পর্কিত।

এমপক্স রোগের ইতিহাস

  1. প্রথম শনাক্তকরণ: ১৯৫৮ সালে, বানরদের মধ্যে ‘পক্সের মতো’ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে বিজ্ঞানীরা প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত করেন। এই কারণে এটি প্রথমে মাঙ্কিপক্স নামে পরিচিত ছিল।
  1. মানুষের মধ্যে প্রাদুর্ভাব: প্রথম মানব সংক্রমণের ঘটনা ১৯৭০ সালে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী কঙ্গোতে শনাক্ত হয়েছিল। এরপর থেকে, এটি প্রধানত মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এমপক্সকে একটি জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করেছে, যা এই রোগের গুরুত্বকে নির্দেশ কর।

এমপক্স এটা কীভাবে ছড়ায়?

এমপক্স, যা পূর্বে মাঙ্কিপক্স নামে পরিচিত ছিল, একটি ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ যা বাঁদরবসন্ত ভাইরাস (MPXV) দ্বারা সৃষ্ট। এই রোগটি মূলত পশু থেকে মানুষে এবং বর্তমানে মানুষ থেকে মানুষেও ছড়াতে পারে।

আরও পড়ুন: সুস্বাস্থ্যের জন্য সেরা ১২টি হেলথ টিপস, যা আপনার জানা দরকার

এমপক্স ছড়ানোর উপায়

  1. প্রাথমিক সংক্রমণ: প্রথমে এটি মূলত বন্যপ্রাণী যেমন বাঁদর বা অন্যান্য তীক্ষ্ণদন্তী প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল। আক্রান্ত প্রাণীর কামড়, আঁচড়, বা তাদের মাংসের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।
  1. মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ: বর্তমানে এমপক্স সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠ শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। এটি সংক্রমিত ব্যক্তির ফুসকুড়ি, ফোসকা, বা শরীরের তরল স্পর্শ করার মাধ্যমে ঘটতে পারে। এছাড়া, চুমু বা অন্যান্য ঘনিষ্ঠ শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।
  1. দূষিত বস্তু: সংক্তির ব্যবহৃত পোশাক বা বিছানার চাদরের মতো দূষিত বস্তু থেকেও ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।

এ রোগের লক্ষণগুলো কী?

এমপক্স রোগ, যা পূর্বে মাঙ্কিপক্স নামে পরিচিত ছিল, একটি ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ যা প্রধানত আফ্রিকার নির্দিষ্ট অঞ্চলে দেখা যায়। এই রোগের লক্ষণগুলো সাধারণত গুটি বসন্তের মতো হলেও কিছু ভিন্নতা রয়েছে। এমপক্স রোগের প্রধান লক্ষণগুলো নিম্নরূপ:

  • জ্বর: রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে জ্বর দেখা দেয়|
  • মাথাব্যথা: জ্বরের সাথে সাথে মাথাব্যথাও হতে পারে|
  • পেশীতে ব্যথা: শরীরের পেশীগুলোতে ব্যথা অনুভূত হয়।
  • লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া: শরীরের লসিকাগ্রন্থি বা লিম্ফ নোড ফুলে যায়, যা এই রোগের একটি বিশেষ লক্ষণ।
  • ক্লান্তি: আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে অবসাদ বা ক্লান্তি দেখা দেয়।
  • – **ফুসকুড়ি বা ফোস্কা**: জ্বরের কয়েক দিন পর শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেয়, যা ফোস্কায় পরিণত হয়। ফুসকুড়ি সাধারণত মুখে শুরু হয় এবং পরে হাত ও পায়ের তালুসহ শরীরের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।

এমপক্স রোগ সাধারণত নিজে নিজেই সেরে যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি গুরুতর হতে পারে, বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে। এই রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম ব্যবহার এবং সংক্রামিত ব্যক্তিকে বিচ্ছিন্ন রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন: এই ৪টি অভ্যাস মস্তিষ্কের জন্য খুবই খারাপ

এমপক্স রোগের সংক্রমণ কীভাবে ঘটে

এমপক্স রোগের সংক্রমণ বিভিন্ন উপায়ে ঘটে থাকে। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা মূলত প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায় এবং বর্তমানে মানুষ থেকে মানুষেও সংক্রমিত হচ্ছে।

সংক্রমণের উপায়

  1. শারীরিক সংস্পর্শ: এমপক্স ভাইরাস সাধারণত শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। সংক্রমিত ব্যক্তির সাথে সরাসরি স্পর্শ, চুম্বন, বা যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।
  1. শ্বাস-প্রশ্বাস: সংক্রমিত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসের খুব কাছাকাছি থাকলে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
  1. দূষিত বস্তু: ভাইরাসটি দূষিত বস্তু যেমন বিছানাপত্র, জামাকাপড়, বা তোয়ালে স্পর্শ করেও ছড়াতে পারে।
  1. প্রাণী থেকে সংক্রমণ: এমপক্স ভাইরাস প্রথমে বন্যপ্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। আক্রান্ত প্রাণীর কামড়, আঁড়, বা তাদের মাংস, চামড়া ইত্যাদি প্রক্রিয়াজাত করার সময় সংক্রমণ ঘটতে পারে।

এমপক্স রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়ানো, ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম ব্যবহার করা, এবং দূষিত বস্তু থেকে দূরে থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

এমপক্স রোগের প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ

এমপক্স রোগের প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। এমপক্স, যা বাঁদরবসন্ত নামেও পরিচিত, একটি সংক্রামক রোগ যা প্রধানত ঘনিষ্ঠ শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

১. টিকাদান:

গুটিবসন্তের টিকা এমপক্সের বিরুদ্ধে কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারে, কারণ এই দুই ভাইরাসের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। যদিও গুটিবসন্ত নির্মূলের পর নিয়মিত টিকাদান বন্ধ হয়ে গেছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে টিকা দেওয়ার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে।

২. সংস্পর্শ এড়ানো:

এমপক্স আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র, পোশাক ইত্যাদি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

৩. ব্যক্তিগত সুরক্ষা:

স্বাস্থ্যকর্মী এবং অন্যরা যারা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসতে পারেন, তাদের গ্লাভস ও মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। রোগীর সেবা দেওয়ার সময় যথাসম্ভব সুরক্ষা নিয়ে কাজ করতে হবে।

৪. জনসচেতনতা বৃদ্ধি:

সচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। জনসাধারণের মধ্যে এমপক্সের লক্ষণ ও সংক্রমণের পথ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা

১. সংক্রমণের উৎস নিয়ন্ত্রণ:

বন্যপ্রাণী থেকে সংক্রমণ এড়াতে তাদের শিকার ও মাংস ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। সংক্রমণ ঝুঁকি কমাতে আক্রান্ত প্রাণীর কাছাকাছি না যাওয়া ভালো।

২. স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা:

শারীরিক সম্পর্কের সময় সুরক্ষা ব্যবহার এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা সংক্রমণ ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে।

এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণের মাধ্যমে এমপক্স রোগের প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এই রোগের সংক্রমণ কমাতে সহায়ক হতে পারে।

এমপক্স রোগের চিকিত্সা কী

এমপক্স, যা পূর্বে মাঙ্কিপক্স নামে পরিচিত ছিল, একটি ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ যা সাধারণত ফ্লু-সদৃশ লক্ষণ এবং ত্বকের ফুসকুড়ি বা ফোসকার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এমপক্সের চিকিৎসা মূলত উপসর্গভিত্তিক এবং সাপোর্টিভ পদ্ধতির উপর নির্ভর করে। এখানে এমপক্সের চিকিৎসা সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া হলো:

চিকিৎসা পদ্ধতি

  1. উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা: এমপক্সের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই, তবে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। যেহেতু ফুসকুড়ি বা ফোসকা বেশ ব্যথাজনক হতে পারে, তাই ব্যথা উপশমের জন্য ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
  1. অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ: গুরুতর ক্ষেত্রে বা ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের জন্য টেকোভিরিম্যাট (Tecovirimat) নামক অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ব্যবহৃত হতে পারে। এটি বিশেষত গুটিবসন্ত এবং এমপক্সের মতো অর্থোপক্সভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য অনুমোদিত।
  1. আইসোলেশন: সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য রোগীকে আইসোলেশনে রাখা জরুরি। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সুরক্ষা সরঞ্জাম যেমন গ্লাভস ও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
  2. Juger Alo Google News যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন