দাঁত ব্রাশ করা নিয়ে বহু পুরনো এই দ্বিধা—সকালের নাশতার আগে করবেন নাকি পরে? দাঁতের যত্ন নেওয়া, মাড়ির সুস্থতা রক্ষা এবং মুখের সঠিক স্বাস্থ্য বজায় রাখা—এসব বিষয়ে সচেতন ব্যক্তিরা দিনে অন্তত দুইবার দাঁত ব্রাশ করেন, তবে কখন ব্রাশ করবেন, এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে কিন্তু যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে।
দাঁতের এনামেল আর মুখের স্বাস্থ্য—কেন সকালের নাশতার আগে ব্রাশ করা ভালো?
অনেকেই মনে করেন, নাশতার পর ব্রাশ করাই সঠিক নিয়ম, কারণ এতে নাশতার পর দাঁতে জমে থাকা খাদ্যকণা ও ব্যাকটেরিয়া দূর হয়। কিন্তু কিছু গবেষণার আলোকে দেখা যায়, দাঁতের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য সকালে নাশতার আগে ব্রাশ করা আরও উপকারী হতে পারে। এর কারণ, রাতে ঘুমানোর সময় মুখের লালাগ্রন্থির কার্যক্রম অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়, ফলে মুখের ভেতর এক ধরনের শুষ্কতা তৈরি হয়।
আরও পড়ুন: শীতে শিশুর যত্ন: দিনে গরম, শেষ রাতে ঠান্ডা, এমন সময় যা মনে রাখবেন
এ অবস্থায় মুখের মধ্যে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার ঘটে, যা সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মুখের দুর্গন্ধের কারণ হিসেবে ধরা যায়। সকালবেলা নাশতার আগে দাঁত ব্রাশ করলে এই ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং মুখের লালা উৎপাদনের প্রক্রিয়া আবার স্বাভাবিক হয়, যা খাবার হজমে সহায়তা করে।
খাবারের পরে ব্রাশ করতে হলে কতক্ষণ অপেক্ষা করবেন?
অনেকেই প্রশ্ন করেন, যদি নাশতার পরে ব্রাশ করতে চাই, তাহলে কি সাথে সাথে ব্রাশ করা উচিত? এই বিষয়ে ডেন্টাল বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো, যদি অ্যাসিডিক খাবার, যেমন ফলের রস বা সাইট্রাস জাতীয় খাবার খান, তবে ব্রাশ করার জন্য অন্তত ৩০ থেকে ৬০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
কারণ এই ধরনের খাবার মুখের এনামেল স্তর কিছুটা নরম করে দেয়, ফলে খাবারের পরপর ব্রাশ করলে দাঁতের এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
দাঁতের এনামেল ঠিক রাখতে সকালবেলা ব্রাশ করার উপকারিতা
আমাদের দাঁতের বাইরের স্তর এনামেল দিয়ে তৈরি, যা শক্ত হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুর্বল হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সকালে ব্রাশ করলে এনামেল সুরক্ষিত থাকে এবং মুখের ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এটি আমাদের দাঁতের এনামেলকে খাবারের অ্যাসিড থেকে রক্ষা করে। এমনকি সকালে ব্রাশ করলে মুখে লালা উৎপাদন বেড়ে যায়, যা মুখের ভেতর জমে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন: কিডনি সুস্থ রাখতে চাইলে এই ৭ ফল খান: কিডনি সুরক্ষার সহজ উপায়
দুইবার ব্রাশ করা—একটি আদর্শ অভ্যাস
দাঁতের যত্ন নিয়ে আমেরিকান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন বা এডিএর পরামর্শ অনুযায়ী, দিনে দুইবার দুই মিনিট করে দাঁত ব্রাশ করা উচিত। সকালে ঘুম থেকে উঠে ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ব্রাশ করা এই নিয়মে অন্তর্ভুক্ত। এভাবে নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করলে দাঁতের ব্যাকটেরিয়াজনিত ক্ষয় রোধ হয় এবং মাড়ির স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।
শক্ত ব্রিসলের ব্রাশ ব্যবহার ক্ষতিকর কেন?
অতিরিক্ত শক্ত ব্রিসলের ব্রাশ অনেকেই ব্যবহার করেন, তবে দীর্ঘদিন এই অভ্যাস বজায় রাখলে দাঁতের বাইরের আবরণ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আরও পড়ুন: গরম পানি পান করলে কী হয়? গরম পানি খাওয়ার উপকারিত ক্ষতিকর দিক
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, তুলনামূলক নরম ব্রিসলের ব্রাশ ব্যবহারে দাঁত ও মাড়ির ওপর ভালো প্রভাব পড়ে এবং ব্রাশ করার সময় দাঁতে বাড়তি চাপ পড়ে না, ফলে এনামেল রক্ষা পায়। তাই একটি নরম ব্রিসলের ব্রাশ দিয়ে দৈনিক দুইবার দু’মিনিট করে ব্রাশ করলে মুখের স্বাস্থ্য অনেক ভালো থাকে।
সর্বোত্তম স্বাস্থ্যবিধি—ব্রাশের পাশাপাশি ফ্লসিং ও মাউথওয়াশ
কেবলমাত্র ব্রাশ করাই মুখের সম্পূর্ণ পরিচ্ছন্নতার জন্য যথেষ্ট নয়। দিনে দুইবার ব্রাশ করার পাশাপাশি দৈনিক অন্তত একবার ফ্লস করা দাঁতের খাঁজে জমে থাকা খাদ্যকণা দূর করতে সহায়ক। এছাড়া, মাউথওয়াশ ব্যবহার করলে মুখের ভেতরে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং মুখের দুর্গন্ধ কমে।
দাঁত মাজা নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
- সকালবেলা দাঁত ব্রাশ করার সময়: ঘুম থেকে উঠেই ব্রাশ করার চেষ্টা করুন, যাতে মুখের ব্যাকটেরিয়া থেকে দ্রুত মুক্তি পান।
- নরম ব্রিসলের ব্রাশ বেছে নিন: শক্ত ব্রিসলের চেয়ে নরম ব্রিসলের ব্রাশ ব্যবহার বেশি কার্যকর ও স্বাস্থ্যসম্মত।
- খাবারের পরে ব্রাশের সময়: যদি খাবারের পর ব্রাশ করেন, অন্তত ৩০ থেকে ৬০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
সুতরাং, দাঁত ব্রাশের সঠিক সময় এবং পদ্ধতি জানার মাধ্যমে দাঁতের যত্ন নেওয়া সম্ভব এবং দাঁত ও মাড়ি সুস্থ রাখা সহজ হয়ে ওঠে।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন