যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির জবাবে কড়া হুঁশিয়ারি ইরানের কি জবাব ছিলো? যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে চলছে উত্তেজনা।
জানা যায়, ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ আলি খামেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইরান কখনোই কোনো সংঘাত শুরু করেনি।
কিন্তু কেউ যদি শয়তানি করে এবং সংঘাত শুরু করে, তাহলে তাদের ‘শক্ত চড়’ কষানো হবে। ইরানের এই দৃঢ় প্রত্যয় আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির জবাবে কড়া হুঁশিয়ারি ইরানের: শক্ত জবাবের প্রতিজ্ঞা
ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকা উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রকে একটি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আগ্রাসন চালায়, তাহলে তাদের ‘কড়া থাপ্পড়’ খেতে হবে। খামেনির এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক মহলে উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির জবাবে খামেনির শক্ত বার্তা
খামেনি বলেছেন, “আমেরিকানদের জানা উচিত যে তারা ইরানের বিরুদ্ধে কোনো হুমকি দিয়ে কখনই কোথাও পৌঁছাতে পারবে না।” তিনি সতর্ক করেছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র তার হুমকি বাস্তবায়ন করে, তাহলে তাদের ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে। ইরান তার জনগণকে প্রতিরোধের শক্তি দিয়ে প্রস্তুত রেখেছে, এবং দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হয়েছে। খামেনির ভাষায়, ইরান কখনোই কোনো সংঘাত শুরু করেনি, তবে যদি কেউ শয়তানি করে এবং সংঘাত শুরু করে, তবে তারা তা “শক্ত চড়” দিয়ে জবাব দিবে।
এই মন্তব্যের পর, একবার আবারও বিশ্ব রাজনৈতিক মহলে ইরানের শক্ত অবস্থান স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বারবার হুমকি দিচ্ছে, কিন্তু তারা কখনোই কিছু পাবে না। ইরানের আধ্যাত্মিক, সাংস্কৃতিক এবং সামরিক শক্তি যে কোনও আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে অটল থাকবে, তা আরও একবার তুলে ধরেছেন খামেনি।
আরো পড়ুন: ডিজিটাল প্রতারণা: আতঙ্কে ৫৯ হাজার হোয়াটসঅ্যাপ ব্লক করল ভারত
পরমাণু চুক্তির হুমকি ও ইরানের অগ্রগতি
গত কয়েক বছরে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি দ্রুত এগিয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) এর তথ্য অনুযায়ী, ইরান বর্তমানে ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন করছে, যা ছয়টি পরমাণু বোমা তৈরির জন্য যথেষ্ট। যদিও ইরান এই পরমাণু অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করেছে, তবুও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র, এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন।
আরও পড়ুন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ইরানকে এক চিঠি পাঠিয়ে দুই মাসের মধ্যে পরমাণু চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। ট্রাম্প জানান, চুক্তি না হলে ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে সামরিক আক্রমণ হতে পারে। খামেনি এই হুমকি সম্পর্কে বলেছেন, “মার্কিন কর্মকর্তাদের জানা উচিত, ইরানকে হুমকি দিয়ে তারা কিছুই অর্জন করতে পারবে না।”
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান: পরিস্থিতি আরও জটিল
ইরানের এই কঠোর বক্তব্যের পর, পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শত্রুতা এবং দ্বন্দ্ব বছরের পর বছর ধরে চললেও, খামেনির মন্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, ইরান তাদের নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক আধিপত্য বজায় রাখার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে। তিনি আরও বলেন, ইরানের ইসলামিক শিক্ষা এবং জাতির ঐক্য তাদের জন্য সবচেয়ে বড় শক্তি।
খামেনি একদম পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, “শত্রুরা আমাদের ইসলামী শিক্ষা থেকে দূরে রাখার জন্য মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ চালাচ্ছে, তবে তারা কোনো লাভ করতে পারেনি।” এই কথাগুলোর মাধ্যমে তিনি দেশের জনগণের ঐক্য এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি অঙ্গীকার প্রকাশ করেছেন।


পশ্চিমাদের ভুল ধারণা এবং ইরানের প্রক্সি বাহিনী
এছাড়া, খামেনি পশ্চিমাদের প্রতি কিছু তীব্র মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, পশ্চিমারা বিশ্বাস করে যে, ইরানের প্রক্সি বাহিনী মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে কাজ করছে। তবে তিনি এ ধারণাকে একেবারে অপমানজনক হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, “ইরান কখনোই কোনো প্রক্সি বাহিনীর মাধ্যমে যুদ্ধ করছে না।”
খামেনি ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, এবং লেবাননের মতো বিভিন্ন অঞ্চলের পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন, যেখানে ইরান সরাসরি কোনো দেশকে সমর্থন প্রদান করছে না, বরং এই অঞ্চলের জনগণের নিজস্ব সংগ্রাম ও প্রতিরোধে সহযোগিতা করছে। তিনি ফিলিস্তিনের প্রতি ইরানের সহানুভূতির কথা উল্লেখ করেছেন, এবং ইয়েমেনের জনগণের প্রতি তাদের অটল সমর্থন প্রদর্শন করেছেন।
ইরানের আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং নববর্ষ উদযাপন
ইরানিরা নববর্ষ নওরোজ উদযাপন করে, যা তাদের সাংস্কৃতিক এবং আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। খামেনি এই নববর্ষকে একটি আধ্যাত্মিক শক্তির প্রতিফলন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, “গত ফার্সি বছরটি ছিল ইরানি জনগণের ধৈর্য, অধ্যবসায় এবং আধ্যাত্মিক শক্তির বছরের প্রতীক।”
নতুন বছরের স্লোগান ‘উৎপাদনের জন্য বিনিয়োগ’ বাস্তবায়ন এবং ইরানির অর্থনীতি ও জীবিকা উন্নত করতে সরকারের দায়িত্ব-কর্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। এই নববর্ষের উদযাপন শুধুমাত্র একটি উৎসব নয়, বরং এটি ইরানির জাতীয় পরিচয় এবং মূল্যবোধের প্রতিফলন।
ইসরায়েলের নৃশংসতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
খামেনি ইসরায়েলি নৃশংসতার বিরোধিতা করেছেন এবং বলেছেন, “ইসরায়েলের জায়নবাদী তৎপরতা শুধু মুসলিমদের জন্য নয়, বরং অমুসলিমদের জন্যও অগ্রহণযোগ্য।” তিনি ইসরায়েলের অপরাধ এবং জুলুমের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন চাইছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এছাড়া, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যগুলোকে তীব্রভাবে নিন্দা করেছেন। ইরান জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা কখনোই তাদের আদর্শের সাথে আপস করবে না এবং তাদের আঞ্চলিক অবস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে।
ইরানের দৃঢ় অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক আয়াতুল্লাহ খামেনি আরও বলেন, বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী জাতিগুলো অবশ্যই জায়নবাদী ইসরায়েলের শয়তানি ও ঘৃণ্য তৎপরতার বিরোধিতা করছে। ইরানও ওই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।
ইরানের অবস্থান স্পষ্টভাবে জানিয়ে তিনি বলেন, মাতৃভূমি রক্ষায় তৎপর ফিলিস্তিনি এবং লেবানিজ সংগ্রামীদের ইরান সমর্থন করে। এটাই দেশটির সব সময়ের নীতি এবং তা অব্যাহত রয়েছে।
ইরানের এই অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে তাদের প্রভাব এবং আঞ্চলিক সংঘাতগুলোতে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা দেয়। এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা, যা এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।
খামেনির এই বক্তব্য ইরানের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নীতি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা দেয়। এটি শুধু একটি রাজনৈতিক বিবৃতি নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যের জটিল পরিস্থিতিতে ইরানের অবস্থান এবং তাদের ভবিষ্যত লক্ষ্যের একটি প্রতিফলন।