নতুন দিল্লি: এলাহাবাদ হাইকোর্টের একটি বিতর্কিত রায় বাতিল করে দিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট । এ রায়ের ফলে উত্তরপ্রদেশে মাদরাসা পরিচালনায় আর কোনো বাধা রইলো না, যা শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
২০০৪ সালে, উত্তরপ্রদেশের তৎকালীন সমাজবাদী পার্টির সরকার একটি আইন তৈরি করেছিল যা উত্তরপ্রদেশ বোর্ড অফ মাদরাসা এডুকেশন নামে পরিচিত। এই আইন অনুযায়ী, রাজ্যের সকল মাদরাসা এই বোর্ডের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতো। এর মধ্যে ছিল মাদরাসা শিক্ষার পাঠ্যক্রমকে সাধারণ শিক্ষার পাঠ্যক্রমের সঙ্গে সমন্বয় করা।
আরও পড়ুন: ইরাক ইরান যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি? মহাযুদ্ধের হুমকির মুখে ইরান ও ইসরায়েল
এদিকে, উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের সময়ে এই আইনটি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলা দায়ের হলে, হাইকোর্ট রায় দেয় যে আইনটি সাংবিধানিক নয় এবং ভারতের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের পরিপন্থী। হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে রাজ্যের প্রায় ১৬,০০০ মাদরাসা সমস্যার সম্মুখীন হয়। মাদরাসা ইউনিয়নের অভিযোগ, এতে প্রায় ১৭ লাখ ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ বিপন্ন হয়ে পড়ে।
হাইকোর্টের রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন তিনটি মাদরাসার সঙ্গে যুক্ত সংগঠন। তাদের বক্তব্য ছিল, হাইকোর্ট ২০০৪ সালের আইনের ভুল ব্যাখ্যা করেছে।
মঙ্গলবার, সুপ্রিম কোর্ট এর প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেয়। তারা জানান, হাইকোর্টের রায়ে যে দাবি করা হয়েছিল তা সঠিক নয়। বিচারপতিরা বলেন, “শিক্ষার অধিকার সকলের আছে এবং মাদরাসা বোর্ড সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে মাদরাসা শিক্ষার সমন্বয় করেছে। তাই এই আইনকে অসাংবিধানিক বলা যায় না।”
আরও পড়ুন: পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো
বিচারকরা আরও জানান, মাদরাসা বোর্ডের ছাত্রছাত্রীরা সার্টিফিকেট নিয়ে সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারে, যা আইনটির বৈধতা প্রমাণ করে। তবে তারা কওমি ও খারিজি মাদরাসা সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন এবং প্রশ্ন তুলেছেন যে, এই ধরনের মাদরাসাগুলো কতটা আইনসংগত।
জামিয়াত উলামায় ইসলামের মুখপাত্র ফজলুর রহমান জানান, মাদরাসা নিয়ে একাধিক মামলা আদালতে চলমান। তিনি বলেন, “এদিন সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে, তা কেবলমাত্র উত্তরপ্রদেশের জন্য। আমরা এই রায়কে স্বাগত জানাই।”
ফজলুর রহমান আরও জানান, বেশ কিছু বিজেপি শাসিত রাজ্যে মাদরাসা বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। তিনি উল্লেখ করেন, “উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি মধ্যপ্রদেশ ও আসামে একাধিক মাদরাসা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। আদালতে এর বিরুদ্ধে মামলা চলছে, এবং আজকের রায় তার উপর প্রভাব ফেলবে।”
আরও পড়ুন: নেতানিয়াহু-র বাসভবনে হিজবুল্লাহর ড্রোন আঘাত: মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি
এদিকে, সমাজবাদী পার্টি ও কংগ্রেস সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। বিজেপির তরফে জানানো হয়েছে, তারা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রতি সম্মান জানাবে।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, যা শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে পারে এবং দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে আরও সুসংহত করবে।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন