পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর প্রভাব আমাদের জীবনযাত্রার ওপর ক্রমেই মারাত্মক আকার ধারণ করছে। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে এক অদ্ভুত পরিকল্পনা সামনে এসেছে – পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হবে প্রায় ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো । এটি একদিক থেকে অবাস্তব মনে হলেও, এক গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে যে, এই প্রক্রিয়া আমাদের পৃথিবীর উষ্ণতা কমিয়ে দিতে পারে। চলুন দেখি, কিভাবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে পারে এবং এর ফলাফল কী হতে পারে।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

আরও পড়ুন: নেতানিয়াহু-র বাসভবনে হিজবুল্লাহর ড্রোন আঘাত: মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি

গবেষণা থেকে জানা গেছে

প্রতি বছর প্রায় ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো বায়ুমণ্ডলে ছড়ালে সূর্যের তীব্র তাপমাত্রা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে ‘জিয়োফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স’-এ। গবেষণায় বলা হয়েছে, চকচকে হীরার গুঁড়ো সূর্যের রশ্মি প্রতিফলিত করে তা আবার বায়ুমণ্ডলের বাইরে পাঠিয়ে দেবে। এতে পৃথিবীর ওপর পড়া তাপের পরিমাণ কমবে। গবেষকদের মতে, যদি এই প্রক্রিয়া প্রায় ৪৫ বছর ধরে চালানো হয়, তবে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রায় ২.৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত কমে আসতে পারে। কিন্তু এটি বাস্তবায়িত করা যতটা সহজ মনে হচ্ছে ততটা নয়।

এই প্রক্রিয়াটির যেমন খরচসাপেক্ষ তেমনই শ্রমসাপেক্ষ। গবেষকদের অনুমান, ৪৫ বছর ধরে হীরার গুঁড়ো ছড়িয়ে পৃথিবীর তাপমাত্রা কমাতে প্রায় ২০০ লাখ কোটি ডলার খরচ হতে পারে। অনেকেই মনে করছেন, শুধুমাত্র অনুমানের ওপর ভিত্তি করে এত টাকা খরচ করা অযৌক্তিক। তবে গবেষকদের মতে, পৃথিবীর জলবায়ু সংকট যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা মোকাবিলা করার জন্য এই খরচ কিছুই নয়।

এখানে উল্লেখযোগ্য যে, এই পরিকল্পনাটি একটি প্রক্রিয়া ‘স্ট্রাটোস্ফিয়ারিক অ্যারোসল ইনজেকশন’ নামে পরিচিত। এটি মূলত সূর্যালোককে প্রতিফলিত করার মাধ্যমে পৃথিবীর তাপমাত্রা কমানোর একটি উপায়। এই প্রক্রিয়াটি ‘সোলার জিয়োইঞ্জিনিয়ারিং’-এর অন্তর্গত। এতে সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করে এবং তাপ শোষণ কমাতে স্ট্রাটোস্ফিয়ারে ক্ষুদ্র কণা ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হবে প্রায় ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে যে, হীরার গুঁড়োর পাশাপাশি সালফার-সহ অন্যান্য অ্যারোসলও বায়ুমণ্ডলে ছড়ালে তার প্রভাব কেমন হতে পারে, তাও যাচাই করা হচ্ছিল। মূলত কোন উপাদান সবচেয়ে ভাল কাজ করতে পারে তা নির্ধারণ করতে পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো হয়। অ্যারোসলগুলি সূর্যের আলোকে কতটা ভালোভাবে প্রতিফলিত করে এবং কতক্ষণ বায়ুতে ভেসে থাকতে পারে তা গবেষণার মাধ্যমে দেখা হচ্ছিল। সেই সঙ্গে কোন ধূলিকণা তাড়াতাড়ি জমাট বাঁধছে, তাও পরীক্ষা করে দেখা হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, হীরার গুঁড়ো জমাট বাঁধার প্রতিরোধ করে এবং সবচেয়ে বেশি সময় ধরে বায়ুমণ্ডলে ভেসে থাকতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে, সালফারের মতো অন্যান্য অ্যারোসল অ্যাসিড বৃষ্টিতে পরিণত হলেও হীরার গুঁড়ো এড়াতে পেরেছে। তাই হীরা গুঁড়োকে সালফারের চেয়ে ভালো ব্যবহারিক বিকল্প হিসেবে দেখা যেতে পারে।

আরও পড়ুন: গোপন ক্যামেরা নারী ভাড়াটিয়ার বেডরুমে, ধরা পড়ল মালিকের ছেলে

গবেষণার সঙ্গে যুক্ত প্রকৌশলী ডগলাস ম্যাকমার্টিন জানান, সালফারের দাম কম হওয়ায় এবং অ্যারোসল তৈরির খরচ কম হওয়ায় এটি ব্যবহারের কথাও ভাবা হচ্ছে। তবে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পর বায়ুমণ্ডলে সালফারের আচরণ দেখেও অনেকে এই উপাদান ব্যবহারের বিষয়ে মতানৈক্য প্রকাশ করেছেন। সালফার একটি গ্যাস হওয়ায় তা হীরার ধূলিকণার মতো ভারী নয় এবং সহজেই বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে

এই ধরনের পরীক্ষা করার আগে পৃথিবীর পরিবেশগত এবং সামাজিক প্রভাব পর্যালোচনা করা জরুরি। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং তার সঙ্গে মোকাবিলার উপায়গুলো নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে নানাবিধ পূর্বাভাস এবং সতর্কতা রয়েছে। এই পরিকল্পনায় যেমন প্রচুর অর্থের প্রয়োজন, তেমনই এর কার্যকারিতা এবং এর সম্ভাব্য বিপদজনক দিকগুলোও বিবেচনা করতে হবে।

এই ধরনের পরিকল্পনা কার্যকর হলে তা আমাদের পরিবেশকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে, কিন্তু সঠিকভাবে এবং সঠিক গবেষণা ছাড়া এগিয়ে গেলে তার ফলাফল কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা বলা মুশকিল। আমাদের উচিত জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সম্ভাব্য সমস্ত উপায় পরীক্ষা করা, কিন্তু সেই সঙ্গে তার প্রভাব সম্পর্কেও সচেতন থাকা।

আরো পড়ুন: জাতিসংঘ অধিবেশনে ইসরায়েলকে তুলোধুনো করলেন মুসলিম নেতারা

জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান পরিস্থিতি এবং তার ভবিষ্যৎ পরিণতি নিয়ে বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যেই বিভিন্ন গবেষণা করেছেন এবং তাদের মধ্যে অনেকেই বর্তমান অবস্থাকে ভয়ঙ্কর আকারে চিহ্নিত করেছেন। মানুষ এবং তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফলেই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃতির ওপর এমন নিষ্ঠুর আচরণ না করলে হয়তো আমরা এই বিপর্যয় থেকে রেহাই পেতে পারতাম। তবে বর্তমানে আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় কাজ হলো এই বিপর্যয়কে যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা এবং সেই লক্ষ্যে যেকোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

Juger Alo Google News   যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

3 thoughts on “পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো”

Leave a Comment