যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে এবং ধর্মীয় বিদ্বেষ রোধে নতুন একটি বিল পাস হয়েছে। এই বিলটি শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে। বিশেষ করে, শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ধর্মীয় চেতনা ও পরিচিতি বজায় রেখে স্কুলে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে। পাশাপাশি, নামাজ আদায় বা অন্যান্য ধর্মীয় আচার পালনে আর কোনো বাধা থাকবে না।
গত বুধবার নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের এক অধিবেশনে বিলটি সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। এ প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফ। অধিবেশনে উপস্থিত ৪৮ জন কাউন্সিলম্যানই বিলটির পক্ষে ভোট দেন।
ধর্মীয় বিদ্বেষের প্রেক্ষাপট
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত তীব্র আকার ধারণের পর নিউইয়র্কের স্কুলগুলোতে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক আচরণের বেশ কিছু ঘটনা সামনে আসে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে। এসব ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি নেতৃত্বাধীন অলাভজনক সংগঠন ‘স্যাফেস্ট’সহ আরও ৩৪টি সংগঠন জোরালো ভূমিকা রাখে। এসব সংগঠনের প্রচেষ্টার ফলেই সিটি কাউন্সিলে এই প্রস্তাব পাশ করা সম্ভব হয়।
আরও পড়ুন: নারীর বিয়ের বয়স ৯ বছর করার প্রস্তাব সংসদে
ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতিশ্রুতি
বিলটি পাস হওয়ার ফলে নিউইয়র্কের স্কুলগুলোতে ধর্মীয় কারণে বৈষম্য বা বিদ্বেষমূলক আচরণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য মধ্যাহ্নভোজে ধর্মীয় বিধি অনুযায়ী খাবার পরিবেশিত হবে, যাতে হালাল-হারামের কোনো শঙ্কা না থাকে।
বিলটির অন্যতম প্রস্তাবক শাহানা হানিফ বলেন, “ধর্মীয় বৈষম্য দূর করতে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে এ পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি এই প্রস্তাবের পক্ষে আমার সহকর্মীদের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়ে গর্বিত। এমন একটি উদ্যোগ শিক্ষা বিভাগসহ সমাজের সব স্তরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
আরও পড়ুন: ‘রাজাকার’ ইস্যুতে উত্তাল ভারতের রাজনীতি, চলছে পাল্টাপাল্টি আক্রমণ
উদ্যোগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিলটি কার্যকর হওয়ার পর, শিক্ষা বিভাগ সংশ্লিষ্ট সকল ধর্মভিত্তিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সর্বজনীন কারিকুলাম তৈরি করতে পারবে। এটি শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং কর্মচারীদের জন্যও প্রযোজ্য হবে। ফলে কেউ আর ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে বিদ্বেষের শিকার হবে না।
শাহানা হানিফ আরও বলেন, “ধর্মীয় বিদ্বেষমুক্ত একটি পরিবেশ তৈরি করা কেবল শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, বরং গোটা সমাজের জন্যই অপরিহার্য। বহুজাতিক এই শহরে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির ভিত্তিতে একটি ভীতিহীন পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের লক্ষ্য। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বৈচিত্র্যময় জীবনধারার প্রকৃত সৌন্দর্য আরও উজ্জ্বল করবে।”
অতীত সাফল্য এবং বর্তমান উদ্যোগ
‘স্যাফেস্ট’র প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক মাজেদা এ উদ্দিন বিলটি পাস হওয়াকে একটি বড় সফলতা হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, “আমাদের সংগঠনের আগের প্রচেষ্টায় নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলগুলোতে ঈদের ছুটি এবং হালাল খাদ্য পরিবেশনের বিধি চালু হয়েছিল। এবার শিক্ষার্থীরা তাদের ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে আরও মুক্তভাবে স্কুলে পড়াশোনা করতে পারবে এবং নামাজ আদায় করতে বাধাগ্রস্ত হবে না।”
এই উদ্যোগের মাধ্যমে নিউইয়র্ক সিটির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও বৈচিত্র্যের উদাহরণ তৈরি হবে বলে সংশ্লিষ্ট সবাই আশা করছেন।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন