পটলের ইংরেজি নাম কি? প্রায় ৯০% মানুষ সঠিক উত্তর দিতে পারেনা

পটলের ইংরেজি নাম

আমাদের দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় “পটল” হল একটি গুরুত্বপূর্ণ সবজি। শীতের কয়েকটি মাস বাদ দিয়ে প্রায় সারা বছরই আমাদের সকলের বাড়িতে নিত্যদিনের অতিথি এই পটল। আর এই পটলের সঙ্গে বাঙালির সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। কিন্তু আপনি কি জানেন পটলের ইংরেজি নাম কি? প্রায় ৯০% মানুষ এই সাধারণ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেনা।

পটলের ইংরেজি নাম

পটলের ইংরেজি নাম হল Pointed Gourd। এছাড়াও এটি হিন্দিতে Parwal বা Parval নামে পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Trichosanthes dioica

আরও পড়ুন: কারফিউ কি: ইতিহাস, প্রয়োজনীয়তা ও আধুনিক প্রভাব

পটলের পুষ্টিগুণ

পটল শুধু স্বাদে নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর। পটলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি রয়েছে। এছাড়াও পটলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ত্বকের জন্য উপকারী এবং ফ্রি র্যাডিকেলের বিস্তার রোধ করে বয়সের ছাপ প্রতিরোধে সাহায্য করে। পটল হজমশক্তি বাড়ায়, কাশি, জ্বর, রক্তদুষ্টি কমায়, কৃমি সারায় এবং শরীর ঠান্ডা রাখে। পটলের বীজ কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে এবং মল নির্গমনে সাহায্য করে। এটি একটি পুষ্টিকর সবজি যা বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ। পটলে নিম্নলিখিত ভিটামিনগুলি পাওয়া যায়:

  • ভিটামিন এ: পটলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে, যা চোখের স্বাস্থ্য এবং ত্বকের জন্য উপকারী।
  • ভিটামিন বি ১ (থায়ামিন): এটি স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রমে সহায়ক এবং শক্তি উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • ভিটামিন বি ২ (রিবোফ্লাভিন): এই ভিটামিনটি কোষের বৃদ্ধি এবং উন্নয়নে সহায়ক, এবং এটি শক্তি উৎপাদনেও গুরুত্বপূর্ণ।
  • ভিটামিন সি: পটলে ভিটামিন সি রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক।

এছাড়াও, পটলে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যেমন ম্যাগনেসিয়াম, কপার, পটাশিয়াম, এবং গন্ধক পাওয়া যায়, যা শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়ক।

পটল, যাকে ইংরেজিতে Pointed Gourd বলা হয়, একটি পুষ্টিকর সবজি যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার বয়ে আনে। নিচে পটলের কিছু প্রধান উপকারিতা উল্লেখ করা হলো:

আরও পড়ুন: কোন ডালে কোন ফোড়ন দিয়ে স্বাদ ও গন্ধ বাড়ে – জেনে নিন

পটলের উপকারিতা

ভিটামিন সমৃদ্ধ
পটলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি১, বি২, এবং সি রয়েছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে।

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানে
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে পটল অনেক কার্যকরী। এটি হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমায়।

ওজন কমাতে সহায়ক
পটলে ক্যালোরি এবং ফ্যাট খুব কম থাকে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি পেট ভরিয়ে রাখে এবং অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে সহায়ক।

রক্ত পরিশোধন
পটল রক্ত পরিশোধিত করতে সাহায্য করে এবং কোলেস্টেরল কমায়। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।

ত্বকের জন্য উপকারী
পটলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না এবং ত্বক উজ্জ্বল রাখে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
পটলে থাকা ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা বিভিন্ন অসুখ ও জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়ক।

এই সবজি সহজলভ্য এবং বিভিন্ন পদ্ধতিতে রান্না করা যায়, যেমন পটলের তরকারি, পটলের দোর্মা, পটল ভাজা ইত্যাদি, যা স্বাদে ও পুষ্টিতে ভরপুর।

আরও পড়ুন: নারকেল তরকারির সাথে ছানার ডাল

পটলের বিভিন্ন রেসিপি

সারা বছর এই পটল দিয়ে আমরা অনেক রকমের রেসিপি খেয়ে থাকি। পটলের তরকারি থেকে শুরু করে, পটলের দোর্মা, পটল সরষে, দই পটল, পটল ভাজা সহ আরও নানান রকমারি রেসিপি থাকে আমাদের খাদ্য তালিকায়। নিচে কিছু জনপ্রিয় পটলের রেসিপি দেওয়া হলো:

পটলের দোরমা

উপকরণ:

  • মাঝারি আকারের পটল: ৮-১০টি
  • চিংড়ি মাছ: ২০০ গ্রাম
  • পেঁয়াজ বাটা: ২ টেবিল চামচ
  • আদা-রসুন বাটা: ১ টেবিল চামচ
  • টমেটো বাটা: ১ টেবিল চামচ
  • হলুদ গুঁড়ো: ১ চা চামচ
  • লঙ্কা গুঁড়ো: ১ চা চামচ
  • গরম মশলা গুঁড়ো: ১ চা চামচ
  • তেল: প্রয়োজনমতো
  • লবণ: স্বাদমতো

প্রণালী:

  1. পটলগুলোকে খোসা ছাড়িয়ে মাঝখান থেকে কেটে ভিতরের বীজ বের করে নিন।
  2. চিংড়ি মাছগুলোকে ছোট ছোট টুকরা করে নিন।
  3. একটি প্যানে তেল গরম করে পেঁয়াজ বাটা, আদা-রসুন বাটা, টমেটো বাটা, হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, লবণ দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে নিন।
  4. কষানো মশলার মধ্যে চিংড়ি মাছ দিয়ে ভালোভাবে ভাজুন।
  5. পটলগুলোর মধ্যে চিংড়ি মশলা ভরে দিন।
  6. একটি প্যানে তেল গরম করে পটলগুলো হালকা ভেজে নিন।
  7. ভাজা পটলগুলোকে একটি পাত্রে তুলে রেখে গরম মশলা গুঁড়ো ছিটিয়ে পরিবেশন করুন।

আরও পড়ুন: টাটকা ইলিশ চেনার ৬টি কার্যকর উপায় : বাজারে ঠকার আগে জেনে নিন

দই পটল

উপকরণ:

  • পটল: ৫০০ গ্রাম
  • দই: ১ কাপ
  • সরষে বাটা: ২ টেবিল চামচ
  • পোস্ত বাটা: ১ টেবিল চামচ
  • কাঁচা মরিচ: ৪-৫টি
  • হলুদ গুঁড়ো: ১ চা চামচ
  • তেল: প্রয়োজনমতো
  • লবণ: স্বাদমতো

প্রণালী:

  1. পটলগুলোকে খোসা ছাড়িয়ে মাঝখান থেকে কেটে নিন।
  2. একটি প্যানে তেল গরম করে পটলগুলো হালকা ভেজে নিন।
  3. একটি মিশ্রণে দই, সরষে বাটা, পোস্ত বাটা, হলুদ গুঁড়ো, কাঁচা মরিচ এবং লবণ মিশিয়ে নিন।
  4. ভাজা পটলগুলোকে এই মিশ্রণের মধ্যে দিয়ে দিন।
  5. একটি প্যানে তেল গরম করে মিশ্রণটি দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে নিন।
  6. কষানো হলে নামিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

পটল ভাজা

উপকরণ:

  • পটল: ৫০০ গ্রাম
  • হলুদ গুঁড়ো: ১ চা চামচ
  • লঙ্কা গুঁড়ো: ১ চা চামচ
  • লবণ: স্বাদমতো
  • তেল: প্রয়োজনমতো

প্রণালী:

  1. পটলগুলোকে খোসা ছাড়িয়ে মাঝখান থেকে কেটে নিন।
  2. পটলগুলোতে হলুদ গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, এবং লবণ মাখিয়ে নিন।
  3. একটি প্যানে তেল গরম করে পটলগুলো হালকা ভেজে নিন।
  4. ভাজা পটলগুলো গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

এই রেসিপিগুলো ছাড়াও পটল দিয়ে আরও অনেক ধরনের রেসিপি তৈরি করা যায় যেমন পটল সরষে, পটল চচ্চড়ি, পটল মুসুর ডাল ইত্যাদি। পটল একটি পুষ্টিকর সবজি যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

আরও পড়ুন: অমলেট ও মামলেট এর মধ্যে পার্থক্য কি? অনেকেই জানেন না

এছাড়াও নিম্নে উল্লেখিত রেসিপিগুলো ট্রাই করতে পারেনঃ

  • পটলের ডালনা: পটল এবং আলু দিয়ে তৈরি একটি মশলাদার তরকারি।
  • আলু পটল: আলু এবং পটল দিয়ে তৈরি সহজ এবং সুস্বাদু তরকারি।
  • পটল পোস্ত: পটল এবং পোস্ত বীজ দিয়ে তৈরি একটি জনপ্রিয় বাঙালি রেসিপি।
  • পটল সরষে: সরষে বাটা দিয়ে তৈরি একটি মশলাদার পটল রেসিপি।
  • পটল চিংড়ি: পটল এবং চিংড়ি দিয়ে তৈরি একটি বিশেষ রেসিপি।

উপসংহার

পটল আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অপরিহার্য সবজি, যার পুষ্টিগুণ এবং স্বাদ দুটোই অসাধারণ। পটলের ইংরেজি নাম জানতে এবং এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সচেতন হওয়া আমাদের সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই ব্লগ পোস্টটি আপনাদের পটল সম্পর্কে নতুন কিছু জানতে সাহায্য করবে।

Juger Alo Google News   যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন