এক গুচ্ছ কবিতা

এক গুচ্ছ কবিতা

মারিয়া আক্তার মাতিন

ভাঙা মন

নি:শ্বাসে বিশ্বাসে আছে যারা
মন নিয়ে করে খেলা,
জাগতিক সুখ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়
দুঃখটুকু কেবল স্মৃতি হয়ে রয়।
আড়ালে অন্তরালে ক্ষুদ্র আশা
বিন্দু বিন্দু ভালোবাসা,
মনেতে আঁকি রঙিন স্বপ্ন
সবকিছু হয় ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন।
কথার আঘাতের তীব্র যাতনা
তিল তিল করে সাজানো কল্পনা,
চূর্ণ করে ক্ষণে ক্ষণে
ঝড় বয় ভাঙা মনে।
সফলতার স্বপ্ন বুনে মনের গহীনে
বহু আশা থাকে মনে,
ব্যর্থতা এসে ধরা দেয় যখন
মন ভাঙার সূর্য উঠে তখন।
পৃথিবীর সুখ বিষণ্ণ অসুখ
মন ভাঙার শোক,
ব্যথিত নয়নে অশ্রু ঝরে
দূরের পথ চেয়ে।
আপন লোকেরা যায় বহুদূরে
বিপদের সাক্ষী হয়ে,
বিদীর্ণ হয় সকল বন্ধন
থাকে শুধু ভাঙা মন ।

 সাদা বক

বিলের জলেতে পুঁটিমাছ ভাসে
বেড়ায় স্বাধীনভাবে
দেখতে পেয়ে সাদা বকের দল
লোভের নেশায় ডুবে।
গাপুস করে খাওয়ার সাধে
তীব্র দৃষ্টি রাখে যেথায়
সাদা বকেরা উড়ে বেড়ায়
স্থান করে নেয় সেথায়।
পেটটি পুরে খাবে যখন
স্নিগ্ধ শীতল বাতাসে
দীর্ঘ পায়ে এগিয়ে চলতে
উড়াল দিবে আকাশে।
সাদা পালকে আবৃত দেহ
লম্বা সরু মাথা
চোখা ঠোঁটে পুঁটি নিয়ে
পেটটি ভরাই কথা।
ক্ষুধা মেটায় তীব্র স্বাদে
বিলের জলেতে সাধে
ঠাণ্ডা হাওয়ায় উড়তে থাকে
সাদা বকেরা দলবেঁধে।

স্বপ্নময় কল্পনা

আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন আমার
স্বপ্নময় কল্পনা
হবে কিনা সত্যি সেটা
আজও স্বপ্নসাগরে ভাসায়।
বুকের মধ্যে জমা থাকে
একরাশ ভালোবাসা,
মনের গহীনে থাকে জমা
একগুচ্ছ অভিমান।
যেগুলো আমায় ভাবায় প্রতিরাত।
চলার পথের নেই কোনো শেষ,
স্বপ্নের পথের নেই কোনো সীমা।
স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে আছি আজ
স্বপের রঙে রাঙা।
কল্পনার জগতে আছো যারা
আকাশে তো আছে লক্ষ্য তারা,
আকাশের বুকে নাম লিখো তার
স্বপ্ন হবে সত্যি তার।
স্বপ্ন হবে আকাশ সমান
যার জন্য দিচ্ছো বিলিয়ে নিজের প্রাণ।
স্বপ্নকে করো না অতি নগন্য,
বৃথা হবে তোমার প্রয়াস।
কল্পনার মধ্যে যদি ডুবে থাকো
স্বপ্নের মধ্যেই যদি ভাসতে থাকো,
তাহলে সেই স্বপ্নকে সত্যি করো,
বাড়বে তোমার সম্মান।

প্রতিবাদিত্ব সম্মান

আলালের এক দুলাল করিয়া থাকে অন্যায়,অত্যাচার অহরহ
হইয়া যায় নির্দোষের খুনী,ঘুরিয়া বেড়ায় আক্রমণাত্মক অস্ত্রসহ।
মনে নাই কোনো ভয়-ভীতি,অন্তর জুড়িয়া থাকে অহংকার,
বাপের আছে অঢেল ধনসম্পদ,কাহার কিই বা আছে বলিবার।
ভীতির রাজ্য গড়ে উঠা অন্তর নিয়া কেহ করে না প্রতিবাদ,
জীবনের মায়ায় আটকে থাকার দরুন বাড়ে শুধু উৎপাত।
একবার হইল কি,এক দরিদ্র পিতার শেষ সম্বলটুকু কাড়িয়া নিতে,
আক্রমণ চালায় তাহার বাড়িঘরের উপর,হস্তক্ষেপ করিতে তাহার জমি-ভিটে।
মানুষ শুধু চাহিয়া চাহিয়া দেখে কেহ আগাইয়া যায় না দরিদ্র পিতার সনে,
কথায় আছে,বিপদের সময় কেহ আসে না,সবাই শুধু নিজে বাঁচিতেই জানে।
তৎক্ষণাৎ এক মানব কোথা থেকে হইল উদয়,
গিয়া সেই অত্যাচারী মানবটিকে দিল উত্তম-মধ্যম তখনই।
সবার চোখ যেন অক্ষিকোটর থেকে বেড়িয়ে পড়ার উপক্রম,
কে এই সাহসী মানব যাহার আছে এত সাহসের গরম!
অত্যাচারী মানবটি রক্তচক্ষু নিয়া তাকাল প্রতিবাদী মানবটির দিকে,
সিংহের ন্যায় গর্জে উঠিল,বলিল এত সাহস তোর আসে কোথা থেকে?
মানবটি স্মিত হাসিয়া বলিল,জা*নো*য়া*রদের ধ্বংস করিতে দরকার প্রতিবাদী অন্তর,
যা এই গাঁয়ের কোনো মানবের মাঝেই নাই,দেখিলাম না তৎপর।
অত্যাচারী মানবটি বলিল,তুই জানিস আমি কে?চাহিলে তোর আমি কী করিতে পারি?
মানবটি বলিল,তাহা জানার কোনো প্রয়োজনবোধ মনে করিনা আমি।
মানবটি আরও বলিল,হইতে পারিস তুই কোনো রাজার রাজপুত্র,কোনো আলালের ঘরের দুলাল,
কিন্তু দরিদ্রের প্রতি অত্যাচার করিবার রাখিস না তুই কোনো অধিকার।
ভয় পাই না আমি তোর মতো নিষ্ঠুর মানবদের,
এর জন্য যদি আমার পরাণ যায়,যাক তাহাতে নেই কোনো আপত্তির সের।
অতঃপর দিলো আরও উত্তম-মধ্যম সেই অত্যাচারী মানবটিকে,
অত্যাচারী মানবটি ক্ষমা চাহিল সর্বশেষে।
সে বুঝিল তাহার এই ক্ষমতার কোনো ভীতি নেই সামনে থাকা মানবটির মনে,
প্রতিজ্ঞা করিল,এইসব কর্ম তাহার দ্বারা গঠিত হইবে না কোনোদিনে।
প্রতিবাদী মানবটি গাঁয়ের সকল মানুষের সনে বলিল,
প্রতিবাদ করিতে শিখুন,ভীতুর রাজ্য ভাঙুন প্রশ্রয় দিবেন না কে কি করিল।
অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় যে আর অন্যায় করে যে উভয়ই সমান অপরাধী,
এ অপরাধ নিয়া পরপারে কিভাবে দাঁড়াইবেন সৃষ্টিকর্তার সামনাসামনি?
সকল মানুষ বুঝিতে পারিল তাহাদের ভুল,
তাহাদের যে দিতে হইবে এই ভুলের মাশুল।
দরিদ্র পিতাটি সেই মহান মানবটির পা আকড়াইয়া ধরিল,
তুমি আমার সন্তানের মতো,তবুও তোমার পা ধরিলাম দরিদ্র পিতাটি বলিল।
আরে আরে কি করিতেছেন এ যে মস্ত বড় পাপ,
গুরুজন হয়ে সন্তানের পায়ে দিবেন না হাত।
দরিদ্র পিতাটি বলিল তোমার প্রতি এক সম্মানের টানে জুড়ালো আমার পরাণ,
তুমি,হে তোমারই প্রাপ্য প্রতিবাদিত্ব সম্মান।

Leave a Comment