বাজার থেকে উধাও হচ্ছে সয়াবিন তেল: দাম আরও বাড়ার শঙ্কা

রোজা যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই ভোজ্যতেলের বাজারে অসাধু চক্রের কারসাজি তীব্র হচ্ছে। বিশেষ করে, সয়াবিন তেলের সরবরাহ বাজার থেকে এক প্রকার উধাও হয়ে গেছে। বাজারে তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে কোম্পানিগুলো মিল পর্যায় থেকে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে, যার ফলে ডিলাররা খুচরা বাজারে সরবরাহ কমিয়ে তেলের দাম বাড়াচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সাধারণ ক্রেতারা যথাযথ পরিমাণ তেল পাচ্ছেন না, ফলে বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট আরও প্রকট হয়েছে। সয়াবিন তেল নিয়ে ভোক্তাদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে।

আরও পড়ুন: বিশ্ববাজারে খাদ্যদ্রব্যের দাম ১৮ মাসে সর্বোচ্চ

সয়াবিন তেলের দাম

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গেছে, সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়ে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল খুচরা বাজারে ১৬৭-১৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা পূর্বে ছিল ১৫৭-১৬০ টাকা। একদিকে সয়াবিন তেলের সংকট, অন্যদিকে তেলের দাম বৃদ্ধি, সাধারণ ক্রেতাদের জন্য তা হয়ে উঠেছে এক নিত্যদিনের উদ্বেগের বিষয়। এর পাশাপাশি, পাম তেল ও রাইসব্রান তেলের দামও ব্যাপক বেড়েছে।

মধ্য অক্টোবরের দিকে সরকার পাম ও সয়াবিন তেলের মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করেছে, এবং তেল উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ে এই ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু তেলের দাম তাতে মোটেও কমেনি। মাসের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ১৮৫ টাকা, এবং বোতলজাত তেলের দাম ১৬৭-১৭০ টাকা হয়ে গেছে। পাম তেল এবং রাইসব্রান তেলের দামও প্রতি লিটার ৬ থেকে ২০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে।

আরও পড়ুন: ডালের বাজারে নৈরাজ্য চরমে, কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা

বাজার সংকট

এই পরিস্থিতির কারণে খুচরা বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে। মুদি বিক্রেতারা বলছেন, ডিলাররা প্রয়োজনীয় তেল সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে, ফলে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে। একজন মুদি বিক্রেতা, মো. তুহিন জানিয়েছেন, ১৫ দিন আগেও তিনি পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ৭৯০-৮০০ টাকায় কিনে ৮১৮ টাকায় বিক্রি করতেন। কিন্তু বর্তমানে তিনি তা পাচ্ছেন না, এবং দামও বেড়েছে। এছাড়া এক লিটারের বোতলজাত তেলও ১৬৫-১৬৭ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

বিভিন্ন তেল কোম্পানির ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোম্পানিগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে সয়াবিন তেল সরবরাহ কমিয়েছে, যাতে রোজা শুরুর আগেই তেলের দাম বাড়ানো যায় এবং তারা বাড়তি মুনাফা অর্জন করতে পারে। এক ডিলার জানান, তারা যেখানে ১০০ কার্টন তেলের চাহিদা দেয়, সেখানে কোম্পানি মাত্র ২০-৩০ কার্টন তেল সরবরাহ করছে।

রোজা শুরু আগে বাজার সিন্ডিকেট

রোজা শুরুর আগেই বাজারে এ ধরনের কৃত্রিম সংকটের সৃষ্টি হওয়া ভোক্তাদের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রাহকরা বলছেন, প্রতি বছর রমজানে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর এই পুরোনো সিন্ডিকেটের কর্মকাণ্ড এবারও পুনরায় শুরু হয়েছে। তাদের আশঙ্কা, রোজা আসার পর তেলের দাম আরও বাড়বে এবং তারা বাড়তি দামেই তেল কিনতে বাধ্য হবেন।

আরও পড়ুন: এসএমএসে দাম চালাচালি করতে পারছে না কোম্পানিগুলো, ডিমের বাজারে স্বস্তি

এদিকে, পাম তেলের দামও অনেকটা বেড়েছে। খুচরা বাজারে পাম তেলের দাম ১৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ১৫০ টাকা। পাম অয়েল সুপারও ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ১৫৪ টাকা। একইভাবে, রাইসব্রান তেলের দামও বেড়েছে। খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার রাইসব্রান তেল ২০০-২১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৮৫-১৯৫ টাকা। পাঁচ লিটারের বোতলজাত রাইসব্রান তেল ৯৮০-১০৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগের তুলনায় ১০০-১৫০ টাকা বেশি।

বিশ্বব্যাংকের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন এবং পাম তেলের দাম কমেছে। তবে দেশের বাজারে এই দাম বেড়েছে, যা ভোক্তাদের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, আমদানির খরচ কমলেও দেশের বাজারে তেলের দাম বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম কমে ১ হাজার ৪৪ ডলারে দাঁড়ালেও, দেশের বাজারে তা ঊর্ধ্বমুখী।

বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে,

আন্তর্জাতিক বাজারে পাম তেলের দাম বাড়ানোর কারণে অন্যান্য ভোজ্যতেলের দামও বেড়েছে। তারা পরামর্শ দিয়েছে, পাম ও সয়াবিন তেলের ওপর ভ্যাট কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করা প্রয়োজন, যাতে বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

আরও পড়ুন: ডিমের দাম ডজনে কমেছে ২৫ টাকা- ক্রেতাদের মাঝে স্বস্তি

এদিকে, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভোজ্যতেলের বিষয়ে তদারকি অব্যাহত আছে এবং কোনো ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতি পাওয়া গেলে আইনের আওতায় আনা হবে।

সয়াবিন তেল নিয়ে তেলবাজির এই পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন, যাতে ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং সয়াবিন ও পাম তেলের কৃত্রিম সংকট বন্ধ করা সম্ভব হয়।

Juger Alo Google News   যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

1 thought on “বাজার থেকে উধাও হচ্ছে সয়াবিন তেল: দাম আরও বাড়ার শঙ্কা”

Leave a Comment