আজকের বাজার দর: ডালের বাজারে নৈরাজ্য চরমে, কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা

আজকের বাজার দর: বর্তমানে দেশের ডালের বাজারে অবস্থা ভয়াবহ। পাইকারদের দাবি অনুযায়ী, আমদানি বিড়ম্বনা ও ডলারের বিনিময়মূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে ডালের দাম বেড়ে গেছে কেজিতে ৩০ টাকা পর্যন্ত। এই পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। পাইকারি বাজার ও আড়তে তদারকির অভাবের কারণে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা তাদের লাভের জন্য সুযোগ নিচ্ছে। ক্রেতারা বাজারের পরিস্থিতির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। 

ডালের বাজারের নৈরাজ্যের পাশাপাশি, সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে স্বল্প আয়ের মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের ডালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মানভেদে কেজি প্রতি ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। খাবার তালিকায় ডাল রাখার সামর্থ্য কমে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের ক্রেতাদের জন্য এটি এক কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। 

আরও পড়ুন: শেখ পরিবারের সদস্যরা এখন কে কোথায়? যা জানা গেলো

বিশেষ করে মুগ ও বুটের ডালের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। বর্তমানে মুগ ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৯০ টাকার মধ্যে, যা আগের তুলনায় ২০ টাকা বেড়েছে। একইভাবে, বুটের ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়, যা কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে গেছে। ছোলা বুটের দাম ১৩০ টাকার নিচে মিলছে না, আর মশুর ডালের জন্য ক্রেতাদের গুণতে হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। 

পাইকারি ব্যবসায়ীদের মতে, দেশের ডালের চাহিদার সিংহভাগই আমদানির মাধ্যমে পূরণ হয়। প্রতিবছর দেশে ডালের চাহিদা ২৬ লাখ টন, যার মধ্যে ১৬ লাখ টন আমদানি করা হয়। কিন্তু বর্তমানে এলসি বিড়ম্বনা এবং ডলারের উচ্চ বিনিময়মূল্যের কারণে পণ্যের আমদানি কমে গেছে। এর ফলে চাহিদার তুলনায় যোগান কমে গেছে, যা বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। 

রাষ্ট্রায়াত্ত সংস্থা টিসিবির তথ্যানুযায়ী, এক বছরে মুগ ডালের দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশের বেশি। বুটের ডালের দাম বেড়েছে ৪৮ শতাংশ। এই দাম বৃদ্ধি দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বাজারের অস্থিরতা এবং সংকটের কারণে ক্রেতারা এখন ডাল কিনতে খুবই সতর্ক হয়ে পড়েছেন। 

পাইকাররা জানিয়েছেন, বাজারে তদারকির অভাবের কারণে অনেক ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফা করতে সক্ষম হচ্ছে। তারা বলছেন, সরকার যদি বাজারে তদারকি বাড়ায়, তাহলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে। তবে ক্রেতাদের মধ্যে এই সংশয় রয়েছে যে, তারা কি আদৌ সঠিক দামে পণ্য কিনতে পারবেন কিনা।

আরও পড়ুন: এবার রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ

এই নৈরাজ্যের কারণে ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে। তারা অভিযোগ করেছেন যে, বাজারে কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। বিশেষ করে, নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য এই পরিস্থিতি আরও বেশি বিপদজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা বলছেন, বাজারের এই অবস্থা চলতে থাকলে তাদের জন্য খাদ্য কিনে খাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। 

ডালের বাজারে এই অস্থিরতা কবে দূর হবে, তা নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। বাজারের পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া। কোনো ধরনের তদারকির অভাব থাকলে, বাজারে এই ধরনের নৈরাজ্য চলতেই থাকবে। ক্রেতাদের অধিকার রক্ষায় সরকারের উচিত বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। 

এখন প্রশ্ন হলো, এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির উপায় কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের উচিত ডালের আমদানি প্রক্রিয়ায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এবং বাজারে তদারকির ব্যবস্থা জোরদার করা। পাশাপাশি, পাইকারি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হলে তারা দাম বাড়ানোর সাহস পাবে না। 

ডালের দাম বৃদ্ধির ফলে স্বল্প আয়ের মানুষের খাদ্য তালিকায় ডালের স্থান সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এ কারণে তারা অন্য পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন, যা তাদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বাজারের এই অস্থিরতা এবং দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের অর্থনীতি ও জনগণের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। 

সুতরাং, আজকের বাজার দর অনুযায়ী ডালের বাজারের এই নৈরাজ্য থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে দেশের সাধারণ মানুষ সঠিক দামে খাদ্য পণ্য কিনতে পারে। ডালের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা এবং বাজারে তদারকি বাড়ানো হলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে। 

এই সংকটের মাঝে, সাধারণ মানুষের জন্য ডালের বাজারে নৈরাজ্য যেন এক দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। 

Juger Alo Google Newsযুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

5 thoughts on “আজকের বাজার দর: ডালের বাজারে নৈরাজ্য চরমে, কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা”

Leave a Comment