ছেলের মুখে বাড়ি থেকে তাড়ায়ি দেয়ার কথা শুনে মায়ের আত্মহত্যা

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় ছেলের সঙ্গে অভিমান করে মনোয়ারা বেগম (৭২) নামে এক বৃদ্ধা আত্মহত্যা করেছেন। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সকালে নিজ ঘরে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মনোয়ারা বেগম উপজেলার বেলগাছি গ্রামের মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দা এবং মৃত নূর আলী মল্লিকের স্ত্রী।

আরও পড়ুন: মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ একই ব্যক্তি, নাকি যমজ ভাই? কোনটি সত্য- চলছে আলোচনা

ঘটনার পেছনের কারণ

মনোয়ারার ছোট ভাই হাফিজুর রহমান জানান, তার বোনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে আসাদুল ইসলাম কুয়েত প্রবাসী। মনোয়ারা বেশিরভাগ সময় আসাদুলের বাড়িতেই থাকতেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে আসাদুলের স্ত্রী শিরিন খাতুন শাশুড়ির সঙ্গে অশোভন আচরণ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

দুই দিন আগে শিরিন তার স্বামী আসাদুলের সঙ্গে মোবাইলে কথোপকথনের সময় মনোয়ারার বিষয়ে কিছু বলেন। মোবাইলের লাউড স্পিকারের মাধ্যমে মনোয়ারা বেগম ছেলের মুখে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার কথা শুনে ফেলেন। এই ঘটনায় তিনি ভীষণ কষ্ট পান এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।

হাফিজুর রহমান আরও বলেন, “আমরা বিষয়টি শুনেছি এবং খোঁজ নিচ্ছি। পুত্রবধূ শিরিনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, তা পরিবারের সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

স্বাস্থ্যগত অবস্থা ও অন্যান্য মতামত

মনোয়ারার মেয়ে জামাই মাহাবুল ইসলাম জানান, তার শাশুড়ি বয়স্ক মানুষ ছিলেন এবং পেটে টিউমার ও ব্রেনে সমস্যা ছিল। চিকিৎসার জন্য চাপ দেওয়া হলেও তিনি অপারেশন করাতে রাজি হননি। অতিরিক্ত অসুস্থতা সহ্য করতে না পেরে হয়তো তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে তার ধারণা। তবে কারও সঙ্গে মনোমালিন্য ছিল কি না, তা তিনি জানেন না।

আরও পড়ুন: আসিফ মাহতাবকে উপদেষ্টা পরিষদে রাখার দাবি

পুলিশের বক্তব্য

আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুর রহমান জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে এবং সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলে আত্মহত্যার কোনো নির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। তবে তিনি খুব বেশি অসুস্থ ছিলেন না বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে এবং রিপোর্ট আসার পর বিস্তারিত জানা যাবে।

পরিবারের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

পরিবারের সদস্যরা এই ঘটনায় শোকাহত এবং ক্ষুব্ধ। তারা জানিয়েছেন, ছেলের এমন আচরণ এবং পুত্রবধূর অশোভন ব্যবহারের কারণে মনোয়ারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে এবং প্রয়োজন হলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন: সম্পদের হিসাব জমা না দিলে যেসব শাস্তি হতে পারে সরকারি চাকরিজীবীদের

বাংলাদেশে আত্মহত্যার প্রবণতা ও সামাজিক প্রভাব

বাংলাদেশে পারিবারিক কলহ, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বৃদ্ধ বয়সে আত্মহত্যার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স্কদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রধান কারণ হলো একাকীত্ব এবং পারিবারিক দ্বন্দ্ব। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরিবারে মানসিক সমর্থন এবং যত্ন বৃদ্ধ বয়সে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আত্মহত্যা’ র এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে যে পারিবারিক সম্পর্কের অবনতি কতটা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। মনোয়ারা বেগমের মৃত্যু শুধু একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়; এটি আমাদের সমাজে পারিবারিক বন্ধনের গুরুত্ব ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতনতার অভাবকে সামনে নিয়ে এসেছে।

Juger Alo Google Newsযুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

Leave a Comment