বাজেটের ৪০ শতাংশ যাবে ঋণের সুদ, ভর্তুকি, ও সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতায়

বাজেট

অর্থমন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে সরকার এই তিন খাতে ৩ লাখ ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে পারে মোট ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বাজেট থেকে। আগামী বাজেটে সরকারকে ৪০ শতাংশ ব্যয় করতে হবে ভর্তুকি, বিদেশী সুদ পরিশোধ এবং সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ। এতে করে সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো কঠিন হবে।

এতে দেখা যাচ্ছে যে, বাজেটের বরাদ্দের মধ্যে সুদ হিসাবে ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা, ভর্তুকি ও প্রোদান হিসাবে ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা, এবং সরকারী কর্মচারীদের বেতন হিসাবে ৮৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা খরচ হবে। গত পাঁচ বছরে মজুরি, পেনশন, ভর্তুকি এবং সুদের খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সরকারের রাজস্ব পরিসরকে সংকুচিত করেছে।

আরও পড়ুন : কোরবানির বাকি এক মাস, খামারে এখনই গরু বিক্রির ধুম!

বাংলাদেশ পুলিশ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, যদি অবিবেচনামূলক ব্যয় বাজেট বরাদ্দের বেশির ভাগই খেয়ে ফেলে, তাহলে খুব বেশি কিছু বাকি থাকে না। পাঁচ থেকে সাত বছর আগে মজুরি, ভর্তুকি এবং সুদে খরচ ব্যাপকভাবে বাড়ছে। এই অবস্থায় পড়তে সরকারের প্রায় ১০ বছর সময় লেগেছে, এটি থেকে বেরিয়ে আসতে আরও ১০ বছর সময় লাগবে। তবে দেশকে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে এবং এ জন্য সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থ সম্পদের স্বল্পতার কারণে সরকার নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়াতে সম্ভব হচ্ছে না। অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি উভয়ক্ষেত্রেই সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় প্রতিবছর বাড়ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সুদ পরিশোধের হার বেড়েছে এবং অর্থ মন্ত্রণালয় মনে করছে এটি আরও বাড়তে পারে।

সরকার প্রথম বারের মতো সংশোধিত বাজেটে ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে, মাত্র ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা সুদ পরিশোধের সাথে। অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা একটি সূচনা দিয়ে বলেন, এ অবস্থানে সরকারের ট্রেজারি বন্ডের সুদহার বৃদ্ধি ও টাকার অবমূল্যায়ন আগামী বছরের বাজেট সংশোধনের সময় সুদ পরিশোধে বরাদ্দ বাড়িয়ে তুলতে পারে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলাকালীন আর্থিক বছরে, জুলাই-জানুয়ারি সময়ে সুদ পরিশোধ হয়েছে ৬০ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেশি। অভ্যন্তরীণ খাতে পেমেন্ট পরিমাণে ৫১ হাজার ২১৩ কোটি টাকার ভ্রাম্যতা বাড়েছে, যা ১৫ শতাংশ বাড়িয়েছে। বৈদেশিক ঋণের সুদ তিন গুণ বাড়েছে। ট্রেজারি বন্ড বিক্রির মাধ্যমে সংগৃহীত তহবিলের প্রয়োজনীয় বিতরণ খরচ এবং সুদের ব্যয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুনে ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার ৮ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
যদিও জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মতো সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বর্তমানে কম এবং তাদের জন্য মুনাফা ও দর কমেছে, তবে অনেক স্কিমের মেয়াদ মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে এই হিসাবে সরকারের ব্যায় বেড়েছে। সরকারের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা এপ্রিল ৩০ তারিখ পর্যন্ত। সরকারের বরাদ্দ ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা অর্থবছর চলাকালীন ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে।

একজন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বলেন, যদিও চূড়ান্ত বরাদ্দ ঠিক না হোক, তবে পরবর্তী বছরের বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের বরাদ্দের সাথে কাছাকাছি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৯ সালের আগে বেশ কয়েক বছর ধরে সরকার বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দেননি।

আরও পড়ুন : জ্বালানি তেলের দাম প্রতি লিটারে বৃদ্ধি: ডিজেলে এক টাকা, পেট্রল ও অকটেনে আড়াই টাকা

২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত এই খাতে সরকারের বাজেট ছিল ৭ হাজার কোটি টাকা থেকে ১১ হাজার কোটি টাকার মধ্যে। ২০২৩-২৩ অর্থবছরে এটা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বৃদ্ধি পেয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকায়। প্রতিবছরে ইয়েন প্যাকেজটি ৩৫ হাজার কোটি টাকা আদায় করার জন্য তারকে আবেগসহ প্রস্তুত হতে হবে। সরকার যেটি ট্যাক্স ভিত্তিক উপায় চিন্তা করে থাকে।

গত দুটি বছরে সরকার কয়েক বার বিদ্যুত, গ্যাস ও জ্বালানির দাম বাড়ানোর পর যেও বিপুল বকেয়ার কারণে এ খাতে ভর্তুকি ব্যয় এখনো কমেনি সেই কর্মকর্তা জানান। তবে ধীরে ধীরে বিদ্যুত খাতে ভর্তুকি কমানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। এ জন্য বছরে চার থেকে পাঁচবার বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে বলে উনি।

চলতি অর্থবছরে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং অন্যান্য বেতনগ্রহণের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৮০ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা। কর্মকর্তারা বলেছেন যে এই পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে পরবর্তী অর্থবছরে। তবে, পেনশন এবং গ্র্যাচুইটির প্রদানের মধ্যে যুক্ত করলে, এ খাতে ব্যয় এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

যেখানে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার গঠন দেওয়া হয়েছে তথাপি সরকার বিভিন্ন অগ্রাধিকার খাতে ব্যয় বাড়ানোর ফলে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে ধারণকৃত করেননি। সম্পত্তির অভাবে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোটামুটি নিরাপত্তা হার বাড়াতে পারছে না। বয়স্ক ভাতার ক্ষেত্রে তারা মাসে ৬০০ টাকা পান। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কিছু নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রকল্পে মাসিক ভাতা বাড়ানোর বিষয়ে কথা বলা হয়েছে, তবে সম্পদের সঙ্কটের কারণে অর্থ মন্ত্রণালয় বরাদ্দ বাড়ায়নি।

Juger Alo Google News   যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন