গাজীপুরের শ্রীপুরে তালাকের ফতোয়া জানতে গিয়ে একটি মাদ্রাসার মুহতামিম ইসমত আলী আশেকীর বিরুদ্ধে চুক্তিভিত্তিক হিল্লা বিয়ে এবং মসজিদের ভেতরে সহবাসের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত মুহতামিম ময়মনসিংহের ধোবাউরা উপজেলার কামালপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং প্রায় চার বছর ধরে টেংরা মধ্যপাড়া জামিউল উলুম কওমি মাদ্রাসা ও এতিমখানার মুহতামিমের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। অভিযোগ উঠেছে, তিনি এবং টেপিরবাড়ি পশ্চিম পাড়া আরফান আলী শাহী জামে মসজিদের ইমাম কফিল উদ্দিনের সহযোগিতায় ফতোয়া দেওয়ার নামে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, নোয়াখালীর এক গৃহবধূ, যিনি তার স্বামীর সাথে ঝগড়ার পর তিন তালাকপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, ফতোয়া জানার জন্য গাজীপুরে আসেন। তার চাচাতো ভাই তাকে ইসমত আলী আশেকীর কাছে নিয়ে যান। ইসমত আলী দাবি করেন যে, ওই নারী তার পূর্বের স্বামীর কাছে ফিরে যেতে চাইলে তাকে আগে অন্যত্র বিয়ে করতে হবে। এ
ই ফতোয়ার ভিত্তিতে মুহতামিম নিজেই দুই ঘণ্টার জন্য ওই নারীকে বিয়ে করেন এবং দশ মিনিটের মধ্যেই মসজিদের ভেতরে সিঁড়ির পাটাতনে তার সঙ্গে সহবাস করেন। সহবাস শেষে এক ঘণ্টার মধ্যে তাকে তালাক প্রদান করেন। এরপর ওই নারীকে তার পূর্বের স্বামীর কাছে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: দুই বছর পর ঘুষের টাকা ফেরত দিলেন সরকারি কর্মকর্তা
ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। আরফান আলী শাহী মসজিদের কমিটি তাৎক্ষণিকভাবে ইমাম কফিল উদ্দিনকে বরখাস্ত করে। মসজিদের সভাপতি আলফাজ উদ্দিন স্বপন বলেন, “মসজিদ একটি পবিত্র স্থান এবং এটি শুধু ইবাদতের জন্য ব্যবহৃত হওয়া উচিত। এমন ঘটনা ঘটানো সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।”
এদিকে অভিযুক্ত ইসমত আলী আশেকী তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ওই নারী এবং তার পরিবার আমার কাছে এসেছিল। তাদের অনুরোধে আমি আরেকজনের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন করেছি। কেউ ষড়যন্ত্র করে আমার সম্মানহানি করার চেষ্টা করছে।” তবে তিনি বিয়ের প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম-পরিচয় জানাতে ব্যর্থ হন। তিনি আরও দাবি করেন যে, তার কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভারত কি বিনা পয়সায় পণ্য দেয়— প্রশ্ন উপদেষ্টা সাখাওয়াতের
ভুক্তভোগী নারীর স্বামী স্থানীয় ও দেশবরেণ্য আলেমদের সঙ্গে পরামর্শের পর জানতে পারেন যে, চুক্তিভিত্তিক হিল্লা বিয়ে ইসলামের শরীয়তসম্মত নয় এবং এটি প্রতারণার শামিল। এই ঘটনায় মুহতামিম এবং ইমামের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা এর সঠিক বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ম্যানেজিং কমিটির সভা ডাকা হবে। ম্যানেজিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, “এই ঘটনার সুষ্ঠু সমাধানের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।”
এ ঘটনায় ইসলামের পবিত্রতা রক্ষার দাবিতে স্থানীয় মুসল্লিরা সরব হয়েছেন। তারা ফতোয়ার নামে এমন প্রতারণামূলক কার্যক্রম বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।