সিলেট থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর জয়ন্তিকা ট্রেনে বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ করা ৮ শিক্ষার্থীকে জরিমানা করা হয়েছে। শনিবার (১৬ নভেম্বর) কুলাউড়া জংশন স্টেশনের কাছে এই ঘটনা ঘটে, যখন ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) মোশাররফ আলী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। এ সময় ওই শিক্ষার্থীরা নিজেদের ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ করার চেষ্টা করেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদেরকে জরিমানা করতে বাধ্য হন কর্তৃপক্ষ।
প্রত্যক্ষদর্শী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনার ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, “ছাত্র সমন্বয়করা কী নিজেদের সম্মান নষ্ট করার তালে আছে?” তিনি জানান, ঢাকার উদ্দেশে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনের ১৭ জন যাত্রী বিনা টিকিটে ট্রেনে উঠে। তাদের মধ্যে আটজন শিক্ষার্থী ছিল, যারা নিজেদের ছাত্র সমন্বয়ক বলে পরিচয় দেয়।
আরও পড়ুন: অস্থির বাংলাদেশ সচিবালয়: কাজের চেয়ে আলোচনা বেশি
টিটিই মোশাররফ আলী তাদেরকে টিকিট নিতে অনুরোধ করলে তারা তা অগ্রাহ্য করে এবং বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ করার জন্য এক ধরনের তর্কে জড়িয়ে পড়ে। পরে ট্রেনটি কুলাউড়া স্টেশনে পৌঁছালে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে ওঠে, এবং রেলওয়ের কর্তৃপক্ষ, স্টেশন মাস্টার এবং গার্ডরা এই ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেন। তারা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ করা যাবে না এবং তাদেরকে বাধ্য করে টিকেট করার জন্য।
এ ঘটনায় স্টেশন মাস্টার মো. রোমান আহমদ বলেন, “সিলেট থেকে ১৭ জন যাত্রী বিনা টিকিটে ট্রেনে ওঠেন এবং তারা নিজেদের ছাত্র সমন্বয়ক, শিক্ষক ও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে টিকিট না নিয়ে ট্রেন ভ্রমণের চেষ্টা করেন।” এসময় তারা নানা অজুহাত দিতে থাকেন, এবং তারা যে কাউকে কোনো প্রকার টিকিট না নেওয়ার জন্য হুমকি দিতে থাকে।
আরও পড়ুন: ডিবি হারুন এর সেই রিসোর্ট এখন শিয়াল-কুকুরের দখলে
জয়ন্তিকা ট্রেনের টিটিই মোশাররফ আলী আরও জানান, “দেশ স্বাধীন করার সাথে টিকিট না নেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। ট্রেনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহার করতে হলে টিকিট নিতেই হবে।” তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থীরা যখন বাধা দেয় এবং শারীরিকভাবে আক্রমণ করতে চায়, তখন তিনি রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এবং পুলিশকে বিষয়টি জানিয়ে ট্রেন থামানোর সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তীতে ১৭ জন যাত্রীকে টিকিট করার জন্য বললে, ৮ জন তাদেরকে জরিমানা করে টিকিট নিতে বাধ্য করা হয়। এর পর ট্রেনটি প্রায় ৪০ মিনিট বিলম্বে কুলাউড়া স্টেশন ত্যাগ করে।
এই ঘটনা আসলে বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণকারী যাত্রীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার একটি বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রেলওয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন, ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এলে যাত্রীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের এ ধরনের পদক্ষেপে রেল ভ্রমণের নিয়ম মানার গুরুত্ব আরও বেড়ে যাচ্ছে, এবং এটি সকল যাত্রীকে সচেতন করবে যে, বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণ কোনো অবস্থাতেই সহ্য করা হবে না।