ইতিকাফ : রমজানের এক বিশেষ আমলের ফজিলত ও করণীয়

রমজান মাস মুসলিম উম্মাহর জন্য এক অত্যন্ত পবিত্র সময়, যে সময়ে ইবাদত ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা হয়। এই মাসের শেষ দশ দিনে মুসলিমরা ইতিকাফের মাধ্যমে আরও গভীরভাবে আল্লাহর সাথে সংযোগ স্থাপন করে থাকেন। ইতিকাফ হলো এক ধরনের আধ্যাত্মিক সংযম, যেখানে ব্যক্তি মসজিদে অবস্থান করে সম্পূর্ণরূপে ইবাদতে মনোনিবেশ করেন। এই পোস্টে আমরা আলোচনা করবো ইতিকাফের ফজিলত, করনীয় ও বর্জনীয় সম্পকে। চলুন শুরু করা যাক-

ইতিকাফের ফজিলত

হজরত মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক নফল কাজ কখনো করতেন, কখনো ছেড়ে দিতেন। কিন্তু মদিনায় হিজরত করার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কখনো রমজান মাসের শেষ দশ দিনের ইতিকাফ ছাড়েননি।-সহিহ বোখারি: ২০২৬

আরও পড়ুন : ২০২৪ সালে এবার ফিতরা কত টাকা, জানালো ইসলামিক ফাউন্ডেশন

ইতিকাফকারীর সবচেয়ে বড় ফায়দা হলো দুটি-

  • এক. গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। সাধারণত মানুষ অন্য সময় যে সব গুনাহের কাজ করে থাকে মসজিদে অবস্থানকালে তা করে না।
  • দুই. নেক কাজ করা ছাড়াও নেক কাজের সাওয়াব পাওয়া।

হজরত মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের শেষ দশদিন ইতিকাফ করবে, তাকে দুটি হজ ও দুটি ওমরা পালন করার সওয়াব দান করা হবে। ’ -শোয়াবুল ঈমান, হাদিস: ৩৬৮০

আরও পড়ুন : ইসলামে কোন কোন দিন রোজা রাখা হারাম ও কেন

অন্য হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন ইতিকাফ করবে। আল্লাহ তায়ালা ওই ব্যক্তি ও জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। যা দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে পূর্ব পশ্চিম দিগন্ত থেকেও বেশি দূরত্ব সম্পন্ন হবে। ’ -শোয়াবুল ঈমান, হাদিস: ৩৬৭৯

ইতিকাফের শর্তসমূহ

ইতিকাফের জন্য কিছু শর্ত রয়েছে:

  • – শরিয়তে সংজ্ঞা মতে যেটাকে মসজিদ বলা হয়, সেখানে অবস্থান করতে হবে। উত্তম হলো জুমা মসজিদে ইতিকাফ করা।
  • – সুন্নত ও ওয়াজিব ইতিকাফে রোজা রাখতে হবে।
  • – জানাবাত থেকে পাক হতে হবে। স্ত্রী সহবাস, স্বপ্নদোষ, মহিলারা মাসিক ও নেফাস বন্ধ হওয়ার পর ওয়াজিব গোসল করে পবিত্র হওয়ার পূর্বে ইতিকাফের জন্য মসজিদে প্রবেশ করা নাজায়েজ।
  • – মহিলাদের জন্য মাসিক ও নেফাস থেকে পবিত্র হতে হবে।

ইতিকাফকারীর করণীয়

ইতিকাফকারীর করণীয় বিষয়গুলো হলো:

  • – ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ সঠিকভাবে আদায় করা এবং বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াতসহ নফল আমল করা।
  • – রাতে কোরআন তেলাওয়াত, জিকির এবং নফল নামাজে ব্যস্ত থাকা।
  • – দোয়া-মোনাজাতসহ জীবনের সব গোনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা।
  • – আর কদরে ফলিজলত লাভের নিমিত্তে বেজোড় রাতসমূহে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সব ধরণের নফল আমল করা।
  • – ইস্তেগফার, দরূদ-শরিফ এবং সকালবেলার মাসনূন দোয়াসমূহ পাঠ করা।

ইতিকাফকারীর বর্জনীয় কাজ

ইতিকাফ অবস্থায় নিম্নোক্ত কাজগুলো পরিহার করতে হবে:

  • – পরনিন্দা, চোগলখুরি, মিথ্যা বলা, ঝগড়া করা, কাউকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেওয়া, অন্যের দোষ-ত্রুটি তালাশ করা, কাউকে অপমানিত করা, অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি।
  • – মসজিদে বিনা প্রয়োজনে দুনিয়াবী কথাবার্তা বলা।
  • – কোনো প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ডেকে দ্বীনি কথাবার্তা ছাড়া সাধারণ কথাবার্তা বলা।
  • – রচনা উপন্যাস এবং নোংরা বই-পুস্তক পড়া। মোবাইলে ইন্টারনেটে গুনাহের উপকরণসমূহ থেকে বেঁচে থাকা।
  • – মসজিদের ভেতরে বিনিময় নিয়ে কোনো কাজ করা।
  • – মালামাল উপস্থিত করে মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা করা।

ইতিকাফের সময় ও স্থান

ইতিকাফ সাধারণত রমজানের শেষ দশ দিনে করা হয়ে থাকে এবং এটি মসজিদে করা উত্তম। মহিলাদের জন্য তাদের নিজ ঘরের একটি পবিত্র স্থানে ইতিকাফ করা যেতে পারে

ইতিকাফ একজন মুসলিমের জীবনে আধ্যাত্মিক উন্নতি ও আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গভীর করার এক অনন্য সুযোগ। এই আমল মাধ্যমে ব্যক্তি দুনিয়াবী মায়াজাল থেকে বিরত থেকে শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদতে মনোনিবেশ করে থাকেন এবং তার মাধ্যমে আত্মিক শান্তি লাভ করেন।

Juger Alo Google News   যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

1 thought on “ইতিকাফ : রমজানের এক বিশেষ আমলের ফজিলত ও করণীয়”

Leave a Comment