পবিত্র রমজান মাসের পরে আসে শাওয়াল, ইসলামিক চান্দ্র ক্যালেন্ডারের দশম মাস। যে মাসে মুসলমানদের জন্য থাকে আরেকটি উত্তম সুযোগ আল্লাহ তা’আলার কাছে আরো নিকটবর্তী হওয়ার—শাওয়াল মাসের ছয় রোজার মাধ্যমে। এই ছয় রোজার ফজিলত ও প্রাসঙ্গিকতা অত্যন্ত উচ্চ মূল্যবান। প্রতিটি মুসলমান যে রমজানের পূর্ণ মাস রোজা রেখেছে এবং পরবর্তীতে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখে, তার পুরস্কার সারা বছর রোজা রাখার সমান।
শাওয়ালের মাসের ছয় রোজা রাখার ফজিলত ও গুরুত্ব
রমজানের রোজা মুসলমানের জন্য ফরজ। এর পরে শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখা সুন্নত-মুস্তাহাব। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) নিজে এই আমল করেছেন এবং উম্মতকে এই রোজা রাখার উৎসাহ দিয়েছেন।
হাদিস শরিফে এসেছে, যে ব্যক্তি রমজানের মাস পূর্ণ রোজা পালন করে এবং তারপর শাওয়ালের ছয় দিন রোজা রাখে, সে যেন সারা বছর রোজা পালন করে। এই হাদিসের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয়, শাওয়ালের এই ছয় দিনের রোজা রাখা মুসল্লিদের পুণ্যের ঝুলিকে আরও ভারী করে তোলে।
আরও পড়ুন : দোয়া ইউনুস: পড়ার নিয়ম, উপকারিতা ও ফজিলত
রাসুলুল্লাহ (সা.) বছরের বার মাসের বিভিন্ন সময়ে নফল রোজা রেখেছেন এবং উম্মতকে রাখতে উৎসাহিত করেছেন। নফল রোজাগুলোর মধ্যে শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা অন্যতম। এই ছয় রোজা রাখার মাধ্যমে মুসলমানগণ রমজানের মহৎ শিক্ষাটি ভুলে না যাওয়ার জন্য উৎসাহিত হয়।
হাদিসে বর্ণিত আছে যে, রমজানের পর শাওয়াল মাসে ছয় রোজা রাখলে এমন হবে যেন সারা বছর রোজা রাখা হয়েছে। এই ছয় রোজার ফজিলত হলো, একজন মুসলিম যদি রমজানের ফরজ রোজাগুলো পালন করে এবং তারপর শাওয়ালে ছয় রোজা রাখে, তাহলে তার জন্য সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব প্রাপ্তির কথা বলা হয়েছে।
এছাড়াও, শাওয়াল মাসের ফজিলত হলো এই যে, এই মাসে রোজা রাখা এবং অন্যান্য ইবাদত আমলের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের শক্তি অর্জন করতে পারে, পরিপক্বতা ও স্থিতিশীলতা লাভ করতে পারে। এই মাসের আমলে উন্নতি লাভ হয়, নেকির পাল্লা ভারী হয়, আমলে সাফল্য আসে, এবং কল্যাণ প্রত্যাশী আল্লাহর কাছে উভয় জগতের কল্যাণ লাভের আশা করা যায়। এক কথায় শাওয়াল মাসের ফজিলত গুলো হলোঃ
- **আত্মশুদ্ধি**: এই রোজা রাখার মাধ্যমে একজন মুসল্লি তার আত্মাকে আরও পরিশুদ্ধ করতে পারেন।
- **পুণ্যলাভ**: প্রতিটি রোজার জন্য বিপুল পরিমাণ পুণ্য লাভ হয়, যা মুসল্লির আখিরাতের জীবনে সুবিধা দান করবে।
- **ধৈর্য ও সংযম**: রমজানের পর আরও ছয় দিন রোজা রাখা মানুষের ধৈর্য ও সংযমের পরীক্ষা।
- **সারা বছরের পুণ্য**: হাদিস অনুযায়ী, রমজানের এক মাস এবং শাওয়ালের ছয় দিন রোজা রাখার মাধ্যমে একজন মুসল্লি যেন সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পান।
শাওয়ালের ছয় রোজা কীভাবে রাখবেন?
ঈদুল ফিতরের পরে যে কোন ছয় দিনে এই রোজা রাখা যেতে পারে। রোজা রাখার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই, তবে শাওয়াল মাসের মধ্যেই রাখতে হবে। শাওয়ালের যে কোন ছয় দিনে এই রোজাগুলো রাখা হতে পারে, একটানা অথবা বিচ্ছিন্নভাবে।
আরও পড়ুন : সৌদিতে বৃষ্টি, সবুজ হচ্ছে মরুভূমি, মিলে যাচ্ছে মহানবী (স) কথা!
ফকিহ ও আলেমগণের অভিমত হলো, যেহেতু শাওয়াল মাসের প্রথম দিন মুসলিম উম্মাহর জাতীয় ও অন্যতম বড় উৎসব এবং ওই দিনে রোজা রাখা হারাম। তাই ঈদুল ফিতরের দিনটি বাদ দিয়ে মাসের যেকোনো ছয়দিনে রোজা রাখলেই উল্লিখিত সওয়াব তথা এক বছরের সওয়াব মুসল্লিদের পুণ্যের ঝুলিকে আরও ভারী করবে ।
এই রোজাগুলো ধারাবাহিকভাবে অথবা বিরতি দিয়ে দিয়ে রাখা যায়। যদি কারো রমজানের রোজা কাজা থাকে, তাহলে বিজ্ঞ আলেমদের মতে, প্রথমে কাজা রোজা আদায় করে তারপর শাওয়ালের ছয় রোজা রাখা উচিত।
শাওয়ালের রোজার প্রার্থনা ও দো’আ
শাওয়ালের ছয় রোজা রাখার সময়, রোজার নিয়ত করা, সেহরি খাওয়া এবং ইফতার করা অবশ্যই প্রযোজ্য। এই দিনগুলোতে নফল নামাজ এবং কোরআন তিলাওয়াত করাও উত্তম।
সাধারণ কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
শাওয়ালের ৬ রোজা রাখা যাবে কি?
হ্যাঁ, শাওয়ালের ৬ রোজা রাখা যাবে। এটি সুন্নাতে মুআক্কাদাহ বা দৃঢ়ভাবে পালনীয় সুন্নাত হিসেবে পরিচিত।
শাওয়ালের ৬ রোজা রাখা যাবে কি হানাফি?
হানাফি মাজহাবেও শাওয়ালের ৬ রোজা রাখা জায়েয এবং প্রশংসিত। এটি অন্যান্য মাজহাবের মতো হানাফি মাজহাবেও সুন্নাত।
শাওয়ালের ১ তারিখ থেকে রোজা রাখা যাবে কি?
হ্যাঁ, শাওয়ালের ১ তারিখ থেকেই এই ছয় দিনের রোজা শুরু করা যাবে। তবে এটি ঐচ্ছিক যে, কেউ যদি চান, মাসের মাঝামাঝি বা শেষের দিকেও এই রোজা রাখতে পারেন।
কোন কোন দিনে রোজা রাখা হারাম?
ইসলামি শাস্ত্র অনুযায়ী, ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার দিনে রোজা রাখা হারাম। এছাড়া, ঈদুল আজহার পরবর্তী তিন দিন, যা তাশরীকের দিন হিসেবে পরিচিত, সে সময়েও রোজা রাখা হারাম।
শাওয়াল মাস ২০২৪:
শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখার প্রথা ২০২৪ সালেও অব্যাহত থাকবে। মুসলমানরা এই মাসের মাধ্যমে তাদের ঈমান ও ইবাদতের গভীরতা আরো বাড়িয়ে তুলতে পারবেন।
শাওয়ালের ছয় রোজা ইসলামের অন্যান্য ইবাদতের মতো মুসলমানদের জন্য আত্মশুদ্ধি ও আত্মিক উন্নতির একটি সুযোগ হিসেবে কাজ করে।
উপসংহার
শাওয়াল মাসের ছয় রোজা ইসলামের অসাধারণ একটি সুন্নাহ। এটি রমজানের পবিত্র মাসের আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং পবিত্রতা বজায় রাখার এক অনন্য উপায়। শাওয়ালের ছয় রোজা রেখে আমরা আমাদের ঈমান আরও দৃঢ় করতে পারি এবং আল্লাহর কাছে আরো নিকটবর্তী হতে পারি।