বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে ক্রিকেটের প্রতিযোগিতা এক দীর্ঘ ইতিহাসের অংশ। দুটো দলই বিভিন্ন সময়ে তাদের নিজস্ব শক্তি ও কৌশল দিয়ে ক্রিকেট বিশ্বের মাঝে নিজস্ব স্থান তৈরি করেছে।
তবে, প্রশ্নটি বরাবরই উঠেছে, বাংলাদেশের দল কি নিউজিল্যান্ডের তুলনায় বেশি শক্তিশালী? অথবা নিউজিল্যান্ড তার শক্তি বজায় রেখে এগিয়ে যাবে? আসুন, এই দুটি দলের শক্তি, দুর্বলতা, পরিসংখ্যান এবং সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের দিকে গভীরভাবে নজর দিই।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ড: ইতিহাসের পটভূমি
বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে প্রথম ম্যাচটি হয়েছিল ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে, যেখানে বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে যায়। তখন থেকে, তাদের মধ্যে বেশ কিছু আকর্ষণীয় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নিউজিল্যান্ড, যা প্রথমে বিশ্ব ক্রিকেটে একটি খ্যাতনামা দলের মতো প্রতিষ্ঠিত হয়নি, আজকের দিনে তারা প্রতিটি ফরম্যাটে শক্তিশালী দল হিসেবে বিবেচিত। অন্যদিকে, বাংলাদেশ তার উন্নতি ও শক্তিশালী পরিসংখ্যানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের অবস্থান তৈরি করেছে।
আরো পড়ুন: ২০২৫ সালে মাসে ৫ হাজার ডলার প্যাসিভ ইনকাম অর্জন করার ৭ উপায়
আরও পড়ুন
পরিসংখ্যানের মাধ্যমে তুলনা: বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ড
1. ওয়ানডে রেকর্ড:
- বাংলাদেশ:
- ১৯৭৫ সালে নিজেদের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ খেলার পর থেকে, বাংলাদেশ ধীরে ধীরে ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেকে শক্তিশালী দল হিসেবে গড়ে তুলেছে। বিশেষ করে, ২০১৫ সালের পর তারা ওয়ানডে ক্রিকেটে বেশ কিছু বড় জয় লাভ করেছে, যেমন ২০১৫ বিশ্বকাপে তাদের কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত অগ্রসর হওয়া।
- বাংলাদেশ দলের প্রধান শক্তি হল তাদের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স, যেখানে সাকিব আল হাসান এবং মোস্তাফিজুর রহমানের মত তারকা খেলোয়াড়রা বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন।
- নিউজিল্যান্ড:
- নিউজিল্যান্ড ওয়ানডে ক্রিকেটে ঐতিহ্যগতভাবে শক্তিশালী একটি দল। তারা ২০১৫ বিশ্বকাপে রানার্স আপ হয়েছিল এবং ২০১৯ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খুব কাছাকাছি ছিল। কিউই দল খেলায় ভিন্ন ধরনের কৌশল এবং সতর্কতা নিয়ে থাকে। তাদের একসঙ্গে খেলার শক্তি, বিশেষ করে ব্যাটিং অর্ডার ও বলিংয়ের মধ্যে সমন্বয়, তাদের বড় শক্তি।
2. টেস্ট রেকর্ড:
- বাংলাদেশ:
- বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে, তবে এখনও তারা পূর্ণ শক্তির টেস্ট দলের মতো অভ্যস্ত নয়। তারা একাধিকবার নিজেদের শক্তি প্রমাণ করেছে, বিশেষত ঘরোয়া মাঠে, কিন্তু বিদেশে তাদের টেস্ট সিরিজগুলো কিছুটা কঠিন হতে দেখা গেছে।
- সাম্প্রতিক সময়ে, টেস্ট ক্রিকেটে তাদের অন্যতম বড় শক্তি হল সাকিব আল হাসান এবং মেহেদি হাসান মিরাজ, যারা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নিয়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম।
- নিউজিল্যান্ড:
- নিউজিল্যান্ড টেস্ট ক্রিকেটে একটি অভিজ্ঞানী দল। তারা বিশ্বমানের পেস বোলিং আক্রমণ এবং শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন-আপের জন্য পরিচিত। তারা ২০২১ সালে আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে, যা তাদের টেস্ট ক্রিকেটের আধিপত্যের প্রমাণ।
3. টি-টোয়েন্টি রেকর্ড:
- বাংলাদেশ:
- বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি পারফরম্যান্স তুলনামূলকভাবে ভালো হলেও, তাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বড় টুর্নামেন্টগুলোর দিকে মনোযোগ আরও বেশি হয়ে থাকে। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শক্তিশালী পারফরম্যান্স দেখাতে সক্ষম হয়েছে।
- দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের মধ্যে রয়েছে শাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ নাঈম, এবং আফিফ হোসেন, যারা দলে আক্রমণাত্মক ভূমিকা পালন করেন।
- নিউজিল্যান্ড:
- নিউজিল্যান্ড টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শক্তিশালী দল হিসেবেই পরিচিত। তাদের ব্যাটিং এবং বলিং আক্রমণ সমানভাবে শক্তিশালী এবং তাদের অভিজ্ঞতা বড় টুর্নামেন্টে দারুণ ভূমিকা রাখে।
আরো পড়ুন: ২০২৫ সালে মাসে ৫ হাজার ডলার প্যাসিভ ইনকাম অর্জন করার ৭ উপায়


দলের শক্তি: বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ড
বাংলাদেশের শক্তি:
- অলরাউন্ড পারফরম্যান্স: সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি। তার অভিজ্ঞতা, ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং সবই দুর্দান্ত।
- স্পিনারদের কার্যকারিতা: মেহেদি হাসান মিরাজ এবং তাইজুল ইসলাম দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্পিন অপশন। তারা বাংলাদেশে বেশ শক্তিশালী এবং গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নিজেদের প্রমাণ করেছে।
- আক্রমণাত্মক ব্যাটিং: মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, নাঈম শেখরা বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং শক্তি বাড়িয়েছেন।
নিউজিল্যান্ডের শক্তি:
- পেস বোলিং: ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি এবং কাইল জেমিসনদের মতো বিশ্বমানের পেস বোলাররা নিউজিল্যান্ডের শক্তি। তাদের বোলিং আক্রমণকে প্রতিটি পিচে কার্যকরী করা যায়।
- অভিজ্ঞতা: নিউজিল্যান্ডের দলটি অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের সমন্বয়ে গড়া, যারা যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম। কিউই দলের সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে রয়েছেন কেন উইলিয়ামসন, রস টেইলর, এবং ড্যারেল মিচেল।
- ধৈর্য এবং দৃঢ়তা: নিউজিল্যান্ড খেলায় নিরলসভাবে ধৈর্যশীল এবং দৃঢ় মনোভাব নিয়ে থাকে, যা তাদেরকে চাপের মধ্যে কার্যকরী ক্রিকেট খেলতে সহায়তা করে।
বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ড: সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স
যদিও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বেশ ভালো, তবুও নিউজিল্যান্ড তাদের অতীতের ফলাফল এবং শক্তির জন্য সবচেয়ে এগিয়ে। তবে, বাংলাদেশের দুর্দান্ত ঘরোয়া পারফরম্যান্স এবং নিজেদের শক্তিশালী ব্যাটিং এবং বোলিং লাইন-আপের মাধ্যমে তারা প্রতিটি ম্যাচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।
বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ড – সেরা ম্যাচসমূহ:
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সবচেয়ে স্মরণীয় জয়গুলো এসেছে কিছু বিশেষ ম্যাচে। তাদের মধ্যে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে হওয়া বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ ছিল অন্যতম। এছাড়াও, ঘরোয়া সিরিজগুলোতেও বাংলাদেশ ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছে।


“Bangladesh vs New Zealand Live দেখবেন যেভাবে”
বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ড ম্যাচ লাইভ দেখতে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম রয়েছে।
- টিভি চ্যানেল: আপনি বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ডের ম্যাচটি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল যেমন, টি স্পোর্টস, স্টার স্পোর্টস, অথবা সনি ইন্ডিয়া থেকে দেখতে পারবেন।
- অনলাইন স্ট্রিমিং: বর্তমানে বিভিন্ন অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিস যেমন, রিলায়েন্স জিও, হটস্টার, এবং ইউটিউব লাইভ স্ট্রিমিং অফার করে থাকে। এর মাধ্যমে আপনি সহজেই ম্যাচটি দেখতে পারেন যেকোনো সময়ে।
- মোবাইল অ্যাপস: ম্যাচ লাইভ দেখার জন্য আপনি আপনার স্মার্টফোনে মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করতে পারেন, যেমন গুগল স্পোর্টস, ESPN, অথবা নিজস্ব সার্ভিস অফারিং অ্যাপস।
- স্ট্রিমিং ওয়েবসাইট: কিছু ওয়েবসাইটও বিশেষভাবে ক্রিকেট ম্যাচের লাইভ স্ট্রিমিং সুবিধা দেয়, তবে এর জন্য ইন্টারনেট সংযোগ এবং উপযুক্ত ডিভাইস প্রয়োজন।
পাকিস্তান এখন বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে
গতকাল ভারতের সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬ উইকেটে জয় পাওয়ার পর। ‘এ’ গ্রুপ থেকে সেমিফাইনালের আরেকটি জায়গা এখনো ফাঁকা রয়েছে। আর এই জায়গার জন্য লড়াইটা এখন ত্রিমুখী—নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে।
টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে ২ পয়েন্ট পেয়ে গ্রুপে এগিয়ে আছে নিউজিল্যান্ড। তবে আজ রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশ যদি নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারে, তাহলে ‘এ’ গ্রুপ থেকে সেমিফাইনালে ভারতের সঙ্গী হবে নিউজিল্যান্ড। এখন পর্যন্ত পাকিস্তান দুটি ম্যাচে হেরে এই লড়াইয়ে তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে, কিন্তু কাগজে–কলমে তাদের সেমিফাইনালে ওঠার আশা এখনও জেগে রয়েছে। তবে পাকিস্তানের সেমিফাইনালে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের ওপর নির্ভর করতে হবে।
বাংলাদেশ যদি নিউজিল্যান্ডকে হারায়, তবে সেমিফাইনালের সম্ভাবনা থাকবে পাকিস্তানেরও। এই পরিস্থিতিতে তিন দলকেই তাকিয়ে থাকতে হবে গ্রুপের শেষ ম্যাচগুলোর দিকে।
‘এ’ গ্রুপের শেষ দুই ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ভারতের বিপক্ষে এবং পাকিস্তান বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলবে। এই ম্যাচগুলোর ফলাফলই সেমিফাইনালের ভাগ্য নির্ধারণ করবে।
সেমিফাইনালের হিসাব:
- যদি নিউজিল্যান্ড ভারতকে হারায় এবং পাকিস্তান বাংলাদেশকে বড় ব্যবধানে হারাতে পারে, তাহলে সেমিফাইনালে পাকিস্তান যাবে, ভারতের সঙ্গী হিসেবে।
- যদি নিউজিল্যান্ড ভারতকে হারায় এবং বাংলাদেশ পাকিস্তানের বিপক্ষে জেতে, তাহলে সেমিফাইনালে যাবে বাংলাদেশ।
- আর যদি নিউজিল্যান্ড ভারতকে হারায় এবং বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে হারে, সেমিফাইনালে যাবে নিউজিল্যান্ড।
এছাড়া, একটি বিকল্প হিসাবও রয়েছে। যদি নিউজিল্যান্ড এবং বাংলাদেশ দুই দলই নিজেদের ম্যাচে জয় পায়, তবে উভয় দলই ৪ পয়েন্টে পৌঁছাবে। এ ক্ষেত্রে সেমিফাইনালে যাওয়ার ভাগ্য নির্ধারিত হবে নেট রান রেটে। তবে এসব জটিল হিসাবের প্রয়োজন হবে তখনই, যখন বাংলাদেশ আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পাবে।
শেষ কথা
বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে ক্রিকেটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্যিই চমকপ্রদ এবং প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। পরিসংখ্যান এবং শক্তির দিক থেকে নিউজিল্যান্ড কিছুটা এগিয়ে থাকলেও, বাংলাদেশ তাদের উন্নতি এবং প্রতিভাশালী ক্রিকেটারদের মাধ্যমে সবসময় চ্যালেঞ্জ জানায়। পরবর্তী বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ড ম্যাচটি খুবই আকর্ষণীয় হতে চলেছে এবং এটি নিশ্চিতভাবে এক নতুন ক্রিকেট ইতিহাস সৃষ্টি করবে।
এদিকে বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছে পাকিস্তান । বাংলাদেশ যদি নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারে, তবে পাকিস্তানও সেমিফাইনালে যাওয়ার সুযোগ পাবে। তাই আজকের ম্যাচে বাংলাদেশ কি নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারবে, সেটিই সেমিফাইনালের ভাগ্য নির্ধারণ করবে।