২০৩৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টটি অনুষ্ঠিত হবে সৌদি আরবে, যা এককভাবে আয়োজন করবে দেশটি। এটি বিশ্বকাপের ইতিহাসে একটি বিশেষ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ প্রথমবারের মতো সৌদি আরব এই ধরনের বৃহৎ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ইভেন্টের আয়োজন করবে।
এর আগে, ২০২২ সালে কাতারও এককভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে, এবং কাতারের মতো সৌদি আরবও তাদের মুসলিম সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বিশ্বকাপ উপভোগের শর্তাবলী নির্ধারণ করছে।
বিশ্বকাপ আয়োজনের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই, সৌদি আরব তার বিশেষ নিয়ম-কানুনের মাধ্যমে ফুটবল ভক্তদের কাছ থেকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত হল, দেশটিতে বিশ্বকাপ চলাকালে কোন ধরনের অ্যালকোহল বিক্রি বা গ্রহণের অনুমতি থাকবে না। সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ বিন বান্দার আল সৌদ এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, যা বিশ্বজুড়ে এক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
সৌদি আরবের সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ
বিশ্বকাপের মতো একটি আন্তর্জাতিক ইভেন্টের আয়োজন করা, যেখানে লাখ লাখ মানুষ উপস্থিত থাকবে, এটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। তবে সৌদি আরবের এ সিদ্ধান্তটি মূলত দেশটির সংস্কৃতি, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই এসেছে। সৌদি আরব একটি মুসলিম দেশ, যেখানে ইসলামের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রয়েছে, এবং ধর্মীয় বিধিনিষেধের কারণে সেখানে অ্যালকোহল গ্রহণ বা বিক্রি নিষিদ্ধ।
আরও পড়ুন: বসে না থেকে ত্রই apps দিয়ে 300 টাকা ইনকাম করুন .কাজ করা খুব সোজা
আরও পড়ুন
রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ এই বিষয়ে বলেছেন, “আমরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের বিশ্বাস, অ্যালকোহল ছাড়া অনেক কিছুই উপভোগ করা যায়, এবং বিশ্বকাপকে বিশেষত ফুটবল ভক্তদের জন্য আনন্দের উৎস হিসেবে মেলবন্ধন করতে আমাদের সংস্কৃতি পাল্টানো উচিত নয়।”


ফুটবল বিশ্বকাপ ভক্তদের প্রতি আহ্বান
প্রিন্স খালিদ আশা প্রকাশ করেছেন যে, বিশ্বকাপ চলাকালীন ফুটবল ভক্তরা সৌদি আরবের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাবেন এবং তারা নিজেদের সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। তিনি বলেন, “এটা শতভাগ প্রয়োজনীয় নয় যে, আপনি অ্যালকোহল পান করতে চান, তবে যদি আপনি চান, আপনি সেটা দেশে ফিরেই পান করতে পারবেন।
” ফুটবল ভক্তরা সাধারণত এক্সট্রা শারীরিক উত্তেজনা এবং আনন্দের জন্য মদ্যপান করে থাকেন, কিন্তু সৌদি আরবের ভাষায়, এটি একটি ‘শুকনো খটখটে’ পরিবেশ, যেখানে মদ্যপান ছাড়া আনন্দের অনেক উপায় রয়েছে।
আন্তর্জাতিক দর্শকদের জন্য সৌদির উন্মুক্ততা
বিশ্বকাপ একটি বৈশ্বিক ইভেন্ট এবং সৌদি আরব চায় না যে, বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতির দর্শকরা তাদের ধর্মীয় বা সামাজিক মানদণ্ডের কারণে বিপাকে পড়ুক। তাই, সৌদি রাষ্ট্রদূত নিশ্চিত করেছেন যে, বিশ্বকাপের সময় সমকামী দর্শকদের জন্যও সৌদি আরব নিরাপদ এবং উন্মুক্ত।
তিনি বলেন, “আমরা সবাইকে স্বাগত জানাবো, বিশেষ করে যারা সৌদি সংস্কৃতি এবং সমাজকে সম্মান করবেন।” সৌদি আরবের এই উন্মুক্ত মনোভাব আন্তর্জাতিকভাবে একটি ইতিবাচক বার্তা দেয়, যা বিশ্বকাপের সফলতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
সৌদির সংস্কৃতির প্রতি সম্মান
প্রিন্স খালিদ আরও বলেছেন, “আমরা সকলের সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে আমাদেরও নিজেদের সংস্কৃতি রয়েছে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা নিজেদের সংস্কৃতি পাল্টাতে চাই না, কিন্তু আমরা চাই যে, বিশ্বের সমস্ত দেশ ও সংস্কৃতির মানুষ আমাদের দেশে এসে বিশ্বকাপ উপভোগ করুন।”
এটা সৌদি আরবের সংস্কৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করে, যেখানে দেশটির ঐতিহ্য এবং মূল্যবোধ অক্ষুণ্ণ থাকে, অথচ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্যও একটি গ্রহণযোগ্য পরিবেশ তৈরি হয়।


২০৩৪ বিশ্বকাপের আয়োজক নির্বাচন
গত ডিসেম্বর মাসে ঘোষণা করা হয় যে, ২০৩৪ সালের বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে সৌদি আরব নির্বাচিত হয়েছে। এই নির্বাচনে সৌদি আরবের বিপক্ষে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না, কারণ অন্যান্য দেশগুলোকে প্রার্থিতা প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ফিফা।
এটি বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি দেশ এককভাবে আয়োজক হওয়ার সুযোগ পাবে, যা সৌদি আরবের ক্রীড়া ও সংস্কৃতির উন্নয়ন এবং বিশ্ব মঞ্চে দেশটির মর্যাদা বৃদ্ধির দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
মরক্কো, স্পেন ও পর্তুগালের বিশ্বকাপ
এদিকে, ২০৩০ সালের বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে মরক্কো, স্পেন এবং পর্তুগাল একযোগে নির্বাচন হয়েছে। এই দেশগুলো মিলে প্রথমবারের মতো একত্রিত হয়ে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছে, যা ফুটবলের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
এটি ২০৩৪ সালের বিশ্বকাপের আয়োজক সৌদি আরবের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে, কারণ তারা যদি বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে চায়, তবে তাদের ক্রীড়া পরিকাঠামো এবং সামাজিক পরিবেশের আরও অনেক কিছু পরিবর্তন করতে হবে।
শেষ কথা
২০৩৪ বিশ্বকাপ সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবং দেশটি তার সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে দর্শকদের জন্য একটি নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন তৈরি করেছে। অ্যালকোহল নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত সৌদির মুসলিম সংস্কৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে নেওয়া হয়েছে, এবং এটি ফুটবল ভক্তদের জন্য নতুন এক অভিজ্ঞতা হতে পারে।
তবে সৌদি আরব তাদের সংস্কৃতি পাল্টানোর চিন্তা না করে, আন্তর্জাতিক দর্শকদের জন্য একটি উন্মুক্ত, নিরাপদ এবং গ্রহণযোগ্য পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে।