আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিল: একহালি গোলের উৎসবে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করলো আর্জেন্টিনা

দক্ষিণ আমেরিকার দুই ফুটবল পরাশক্তি—আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। ফুটবল দুনিয়ায় এই দুই দেশের লড়াই মানেই উত্তেজনা, আবেগ আর হাজারো গল্প।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

সেই গল্পের পাতায় এবার যুক্ত হলো আরও একটি অধ্যায়—“আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিল” লড়াইয়ের ইতিহাসে যা নিঃসন্দেহে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ, লিওনেল মেসি, লাওতারো মার্টিনেজ না থাকলেও ব্রাজিলের বিপক্ষে ৪-১ গোলের জয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিধ্বস্ত করলো আর্জেন্টিনা।

Juger Alo Google Newsযুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

বিশ্বকাপ নিশ্চিত, কিন্তু থামেনি উৎসব

২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে লাতিন আমেরিকার অঞ্চল থেকে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য আর্জেন্টিনার দরকার ছিল মাত্র একটি পয়েন্ট। তবে উরুগুয়ে ও বলিভিয়ার গোলশূন্য ড্রয়ের সুবাদে ম্যাচ শুরুর আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপে খেলা। কিন্তু তা সত্ত্বেও, “আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিল” ম্যাচে ফুটবল বিশ্বের চ্যাম্পিয়নরা মাঠে নামেন পূর্ণ শক্তি ও মনোযোগ নিয়ে।

বুয়েন্স আয়ার্সে ‘ছেলেখেলা’

ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় আর্জেন্টিনার ঘরের মাঠ বুয়েন্স আয়ার্সের বিখ্যাত এস্টাডিও মাস মনুমেন্টালে। আর সেখানে আর্জেন্টিনা যেন খেলতে নেমেছিল নির্মম এক ‘ছেলেখেলায়’। প্রতিপক্ষ যে ব্রাজিল, তা যেন ভুলেই গিয়েছিল হুলিয়ান আলভারেজ, এনজো ফার্নান্দেজ, অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারদের মতো খেলোয়াড়রা।

ম্যাচের প্রথম ৪ মিনিটেই গোল করে বসেন আলভারেজ। থিয়াগো আলমাদার থ্রো থেকে বল পেয়ে গোল করেন এই অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ তারকা। এরপর ১২ মিনিটে চেলসির এনজো ফার্নান্দেজ চারজন ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করে গোলের সংখ্যা বাড়িয়ে দেন। ৩৭ মিনিটে ম্যাক অ্যালিস্টার করেন তৃতীয় গোল, এবং বদলি খেলোয়াড় জিউলিয়ানো সিমিওনে ৭১ মিনিটে দেন চতুর্থ ধাক্কা।

আরো পড়ুন: ১০ হাজার টাকার মধ্যে ভালো মোবাইল ২০২৫ – বাজেটের মধ্যেই স্মার্টফোন কিনুন!

ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা

ব্রাজিল যেন অচেনা

এই “আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিল” লড়াইয়ে ব্রাজিলকে অচেনা লাগছিল। ইনজুরি ও কার্ড সমস্যার কারণে প্রথম সারির গোলরক্ষক অ্যালিসন ও এডারসন ছাড়াই খেলতে নামেন কোচ দরিভাল জুনিয়র। বাধ্য হয়ে তৃতীয় গোলরক্ষক বেন্তোকে নামাতে হয় মাঠে। ডিফেন্সে ছিল অনভিজ্ঞতা, মিডফিল্ডে ছিল বিশৃঙ্খলা, আর আক্রমণভাগ ছিল একদম নিস্তেজ।

ব্রাজিল একমাত্র গোলটি করে আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডার ক্রিশ্চিয়ান রোমেরোর একটি অদ্ভুত ভুলের সুবাদে। ২৬ মিনিটে রোমেরো বল পায়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন, আর সুযোগ বুঝে ব্রাজিলের ম্যাথিয়াস চুনহা বল কাড়েন ও শটে বল জড়ান জালে। এটিই ছিল জাতীয় দলের হয়ে চুনহার প্রথম গোল এবং এই ম্যাচে ব্রাজিলের একমাত্র সান্ত্বনা।

ইতিহাস গড়লো আর্জেন্টিনা

আর্জেন্টিনা হয়েছে লাতিন আমেরিকা অঞ্চল থেকে প্রথম দল যারা বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিত করলো। আর বিশ্বব্যাপী এটি তৃতীয় দল—এর আগে জায়গা নিশ্চিত করেছিলো জাপান ও নিউজিল্যান্ড। সবচেয়ে বড় কথা, আর্জেন্টিনা করেছে এটি বাছাইপর্বের ইতিহাসে দ্রুততম সময়ে।

এই ম্যাচে করা এনজো ফার্নান্দেজের গোলটি ছিল ৩৩টি পাসের এক অপূর্ব ফল। এই ধরনের সংহত ও পরিকল্পিত আক্রমণ বিশ্ব ফুটবলে খুব কম দেখা যায়।

দর্শক-সমর্থকদের উৎসব

ম্যাচ শুরুর আগেই যখন খবর আসে যে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত করেছে, তখন থেকেই উৎসব শুরু হয়ে যায় মনুমেন্তালে। গ্যালারিতে আলভারেজের নাম শুনেই হর্ষধ্বনি, আর ব্রাজিল তারকা রাফিনিয়ার নাম শুনেই দুয়ো।

রাফিনিয়া অবশ্য ম্যাচের আগেই বলেছিলেন, “আর্জেন্টিনাকে গুঁড়িয়ে দেব।” কিন্তু মাঠে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। ৪০ মিনিটে তালিয়াফিকোর ফাউলের শিকার হয়ে উত্তেজিত হয়ে প্রতিপক্ষকে ধাক্কা দেন, তবে গোল করতে কিংবা ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেননি।

দ্বিতীয়ার্ধেও ব্রাজিল ছিল ছন্নছাড়া

বিরতির পর তিনটি পরিবর্তন আনে ব্রাজিল—রদ্রিগোর জায়গায় এনদ্রিক, জোয়েলিংতনের জায়গায় হোয়াও গোমেজ এবং মুরিল্লোর বদলে লিও ওর্তিজ। কিন্তু খেলার রূপ তাতে বদলায়নি। বরং আরও কিছু গোল হজম করতেই পারত ব্রাজিল, যদি না আলমাদা, ফার্নান্দেজ ও দি পল গোল মিস করতেন।

ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা

“আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিল” এর নতুন অধ্যায়

এই ৪-১ ব্যবধানের জয় শুধু একটা জয় নয়, এটি ছিল এক ধরনের বার্তা। “আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিল” লড়াইয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার বার্তা। এই ম্যাচে ব্রাজিলের কোনো শট ছিল না দ্বিতীয়ার্ধে। বল দখলে পিছিয়ে, পাসিংয়ে পিছিয়ে, গোলের সুযোগ তৈরি করায় পিছিয়ে—সবদিক থেকেই ব্রাজিলকে ছাপিয়ে গেছে আর্জেন্টিনা।

এছাড়াও, এটি ছিল ২০১৪ বিশ্বকাপের পর প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে ব্রাজিলের প্রথম ৪ গোল হজম। দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দলের বিপক্ষে ১৯৮৭ সালের পর এটাই প্রথম ৪ গোল খাওয়ার ঘটনা।

পয়েন্ট তালিকায় চিত্র

১৪ ম্যাচে আর্জেন্টিনার সংগ্রহ ৩১ পয়েন্ট, যা তাদের নিয়ে গেছে শীর্ষে। ইকুয়েডর ২৩ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে এবং ২১ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে উরুগুয়ে। সমান পয়েন্ট হলেও গোল ব্যবধানে পিছিয়ে চারে ব্রাজিল।

লাতিন আমেরিকা অঞ্চল থেকে মোট ৬ দল সরাসরি খেলবে বিশ্বকাপে। ৭ নম্বরে থাকা ভেনেজুয়েলার চেয়ে আর্জেন্টিনা এগিয়ে ১৬ পয়েন্টে, যেখানে বাকি আছে মাত্র ৪টি ম্যাচ। কাজেই আর্জেন্টিনার জন্য এখনো রইল বাছাইয়ে আরও রেকর্ড গড়ার সুযোগ।

সমালোচনার মুখে ব্রাজিল

এই ম্যাচের পর সবচেয়ে বেশি চাপ দরিভাল জুনিয়রের ওপর। দল গঠন, কৌশল এবং খেলোয়াড় নির্বাচন সব কিছু নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে। গোলরক্ষক পজিশন থেকে শুরু করে মিডফিল্ডে গ্যাপ, ডিফেন্সে অনভিজ্ঞতা—সবকিছুই যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে।

শেষ কথা

“আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিল”—এই কথাটাই যথেষ্ট উত্তেজনা ছড়াতে। কিন্তু এই ম্যাচে ব্রাজিল যেন ঠিকভাবে নামতেই পারেনি। মেসি, মার্টিনেজ ছাড়াই আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা যে ধরণের আত্মবিশ্বাস, গতি ও পরিকল্পনার সমন্বয়ে খেলেছেন, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। ফুটবলপ্রেমীরা এই ম্যাচকে মনে রাখবে দীর্ঘদিন।

ব্রাজিল নিশ্চয়ই ফিরে আসবে, তারা সবসময় ফিরে আসে। তবে এই ম্যাচে লাতিন আমেরিকার রাজত্বের সিংহাসনে আরেকবার নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করলো আর্জেন্টিনা।

1 thought on “আর্জেন্টিনা বনাম ব্রাজিল: একহালি গোলের উৎসবে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করলো আর্জেন্টিনা”

Leave a Comment