প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আজকাল প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আধুনিক যুগে এআই প্রযুক্তি মানুষের জীবনযাত্রা সহজতর করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে এবং এটি ধীরে ধীরে বিভিন্ন শিল্পে প্রভাব ফেলছে। তবে এবার একটি নতুন ও চমকপ্রদ প্রকল্পের সঙ্গে পরিচিত হতে চলেছেন বিশ্বের কোটি কোটি প্রযুক্তি প্রেমী গার্লফ্রেন্ড । মডেলিং দুনিয়ায় এবার যুক্ত হতে যাচ্ছে এআই নারী মডেল, যা আসন্ন “মিস এআই” প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী আলোচনার জন্ম দেবে।
আরও পড়ুন: মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন সুখবর
নতুন প্রযুক্তির চমক
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই, যা মানুষের মস্তিষ্কের মতো কাজ করতে সক্ষম, বর্তমানে এক ধরনের বিপ্লব ঘটাচ্ছে। এটি শুধু প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং বাণিজ্যিক দিক থেকেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায়, বিশ্বের জনপ্রিয় এআই প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোগে এবার শুরু হতে যাচ্ছে একটি একধরনের অভিনব সুন্দরী প্রতিযোগিতা, যেখানে প্রতিযোগীরা তাদের তৈরি নারী এআই মডেলকে “মিস এআই” প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেবেন।
“মিস এআই” প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে ওয়ার্ল্ড এআই ক্রিয়েটর অ্যাওয়ার্ডস, যা বিশ্বের সেরা এআই ক্রিয়েটরদের সৃজনশীলতা এবং দক্ষতাকে সম্মান জানাতে এই উদ্যোগ নিয়েছে। মূলত, এই প্রতিযোগিতার লক্ষ্য হল এআই-এর মাধ্যমে সৃষ্ট নারী মডেলগুলোর সৌন্দর্য, দক্ষতা এবং সামাজিক প্রভাব প্রদর্শন করা, যাতে ভবিষ্যতে এমন প্রযুক্তি আরও কার্যকরী হয়ে ওঠে।
পুরস্কার এবং প্রতিযোগিতার বিশদ
এআই নির্মাতাদের জন্য একটি চমকপ্রদ সুযোগ, “মিস এআই” প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য বিজয়ীকে পুরস্কৃত করা হবে নগদ ৫ হাজার ডলার। প্রতিযোগিতায় পুরস্কারের মোট পরিমাণ ২০ হাজার ডলার। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার বিতরণের তারিখ ঘোষণা করা হয়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ১০ মে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে এবং পুরস্কার বিতরণ করা হবে। এর মাধ্যমে, এই ধরনের প্রযুক্তি নির্মাতাদের জন্য একটি সৃজনশীল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে এবং নতুন ধারার নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবে।
আরও পড়ুন: স্মার্টফোনের ব্রাইটনেস কতটুকু রাখা জরুরি? ৯৯% মানুষ জানেন না
১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া মিস এআই প্রতিযোগিতার রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া বিশ্বের যে কোনো দেশ থেকে অংশগ্রহণকারীদের জন্য উন্মুক্ত। তবে, এআই মডেল তৈরি করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় অংশগ্রহণকারীদের সক্রিয় উপস্থিতি থাকতে হবে, যেন তারা তাদের সৃষ্টির প্রতি মানুষের আগ্রহ এবং প্রতিক্রিয়া পেতে পারেন।
প্রতিযোগিতার থিম এবং লক্ষ্য
এআই নির্মাতাদের সৃজনশীলতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাপী পরিচিত ফোবর্স এই প্রতিযোগিতাকে হাইলাইট করেছে। প্রতিযোগিতায় ফ্যাশন বৈচিত্র্য এবং পুরুষ মডেল তৈরির মতো বিভিন্ন থিম থাকলেও, এই প্রতিযোগিতার মূল ফোকাস থাকবে নারী এআই মডেলদের উপর। অর্থাৎ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি নারীদের নিয়ে সুন্দরী প্রতিযোগিতা করা হবে, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের তৈরি মডেল উপস্থাপন করবেন।
আরও পড়ুন: Facebook Messenger: মোবাইল ডাটা ছাড়াই ব্যবহার করার নতুন সুবিধা
এই প্রতিযোগিতা সম্পর্কে জানা গেছে যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-এর বিভিন্ন জনপ্রিয় টুল যেমন ডাল-ই ৩, মিডজার্নি, এবং কপিলট ডিজাইনার ব্যবহার করে এই নারী মডেলগুলো তৈরি করা যাবে। তবে এআই টুল ব্যবহারে কোনো বিধিনিষেধ নেই, যা নির্মাতাদের সৃজনশীলতার সীমা বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে, এআই গার্লফ্রেন্ড বা মডেলগুলো তৈরি করার জন্য প্রতিযোগীদের সৌন্দর্য, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং সামাজিক প্রভাব—এই তিনটি গুণের ওপর বিশেষ নজর দেওয়া হবে।
বিচারকের দৃষ্টি এবং কিভাবে মূল্যায়ন হবে প্রতিযোগীরা
এআই মডেলগুলোর মধ্যে সৌন্দর্য, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং সামাজিক প্রভাবের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে। প্রথমত, সৌন্দর্য নির্ধারণ করতে, প্রতিযোগীদের মডেল কতটা বাস্তবসম্মত, এবং তারা কতটা বাগ্মিতা এবং কঠিন প্রশ্নের দ্রুত উত্তর দিতে পারে, তা বিচার করা হবে। দ্বিতীয়ত, প্রযুক্তিগত দক্ষতার মধ্যে থাকবে, কিভাবে তারা প্রম্পট থেকে আউটপুট তৈরি করতে পারে এবং তাদের সৃষ্ট মডেলটি কতটা কার্যকর।
আরও পড়ুন: ২৫ পয়সা কলরেট ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে আবারও আসছে সিটিসেল!
সর্বশেষ, সামাজিক প্রভাবের দিকটি ডিজিটাল বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিচারকদের জন্য এটি পর্যালোচনার এক গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড হবে। নির্মাতারা তাদের ডিজিটাল উপস্থিতি যেমন ইনস্টাগ্রামে কতটা সক্রিয় এবং তাদের মডেলটি কতজনকে আকৃষ্ট করতে পারে, তা গুরুত্বপূর্ণ হবে। ডিজিটাল মিডিয়ায় তাদের প্রভাব এবং দর্শকসংখ্যাও বিচারকরা পর্যবেক্ষণ করবেন।
বিচারকরা এবং তাদের ভূমিকা
প্রতিযোগিতায় মোট চারজন বিচারক থাকবেন। এদের মধ্যে রয়েছেন এআই ইনফ্লুয়েন্সার আইতানা লোপেজ এবং এমিলি পেলেগ্রিনি, যাদের সহায়তায় প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল মিডিয়ার বিচারে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আসবে। এছাড়া উদ্যোক্তা অ্যান্ড্রু ব্লচ এবং সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার বিচারক স্যালি-অ্যান ফসেট-এর মাধ্যমে এই মডেলগুলোর সৌন্দর্য এবং মেধা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা এবং প্রতিযোগিতার গুরুত্ব
এআই গার্লফ্রেন্ড-এর মাধ্যমে তৈরি মডেলিং দুনিয়ায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং প্রযুক্তির ভবিষ্যতের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এটি এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে। এই ধরনের প্রতিযোগিতা শুধু প্রযুক্তি এবং মডেলিং বিশ্বকে একত্রিত করতে সাহায্য করবে, বরং নারীদের প্রতি সৃজনশীলতা এবং দক্ষতার দৃষ্টিভঙ্গিতেও এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
আরও পড়ুন: ফোনের স্টোরেজ খালি করার ১০টি সহজ ও কার্যকর উপায়
এআই প্রযুক্তি গার্লফ্রেন্ড বর্তমানে মানুষের প্রতিদিনের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে, এবং এই ধরনের উদ্ভাবনশীল প্রতিযোগিতা ভবিষ্যতে আরও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটাবে। ‘মিস এআই’ প্রতিযোগিতা তাই শুধু একটি সুন্দরী প্রতিযোগিতা নয়, বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমেই মানব সমাজের সৌন্দর্য, বুদ্ধিমত্তা, এবং সামাজিক প্রভাবের নতুন দিক উন্মোচন করার একটি প্ল্যাটফর্ম।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন