মোবাইল ফোন প্রযুক্তির এক অসামান্য উপহার। এটি প্রায় সকলের হাতে হাতে পৌঁছে গিয়েছে এবং জীবনযাত্রাকে অনেক সহজ করে তুলেছে। কিন্তু এর ভুল ব্যবহার মাঝে মাঝে ব্যবহারকারীকে বিপাকে ফেলে দেয়। এমনই এক বিপাকের নাম হলো ফোন ট্র্যাকিং।
আরো পড়ুন: বসে না থেকে ত্রই apps দিয়ে 300 টাকা ইনকাম করুন .কাজ করা খুব সোজা
যদি কেউ আপনার ফোন ট্র্যাক করে, তাহলে আপনার গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। নিচে কিছু পদক্ষেপ দেওয়া হলো যা অনুসরণ করে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে আপনার ফোন ট্র্যাক করা হচ্ছে কিনা।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
কীভাবে বুঝবেন আপনার ফোন ট্র্যাক হচ্ছে কিনা:
আজকাল ফোন ট্র্যাকিং শুধু প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের বিষয় নয়, সাধারণ ব্যবহারকারীদেরও সতর্ক থাকা জরুরি। যদি কখনো মনে হয়, আপনার ফোন কেউ ট্র্যাক করছে, তাহলে কিছু লক্ষণ ও পরীক্ষা করে সহজেই তা বুঝতে পারেন।

১. অজানা নোটিফিকেশন ও লোকেশন আইকন
- নোটিফিকেশন প্যানেলে “ডিভাইস লোকেটেড” বা সন্দেহজনক কোনো বার্তা আসছে কিনা খেয়াল করুন।
- গুগল ফাইন্ড মাই ডিভাইস ছাড়া অন্য কোনো অ্যাপ লোকেশন ব্যবহার করছে কিনা দেখুন।
- স্ট্যাটাস বারে লোকেশন আইকন অযথা দেখা যাচ্ছে কিনা লক্ষ্য করুন।
২. গোপন কোড ব্যবহার করে চেক করুন
নিচের কোডগুলো ডায়াল করে দেখুন, আপনার ফোনে কোনো ট্র্যাকিং বা কল ফরওয়ার্ডিং সক্রিয় আছে কিনা:
- *#৬১# – দেখুন, আপনার ইনকামিং কল অন্য নম্বরে ফরওয়ার্ড হচ্ছে কিনা।
- *#৬২# – চেক করুন, কোনো ডাইভারশন সফটওয়্যার আপনার কল ও মেসেজ আটকাচ্ছে কিনা।
- *#২১# – জানতে পারবেন, আপনার ফোনের কল বা ডাটা গোপনে অন্য কোথাও পাঠানো হচ্ছে কিনা।
৩. ব্যাটারির আচরণ অস্বাভাবিক? সতর্ক হোন!
- ফোনের ব্যাটারি অস্বাভাবিক দ্রুত ফুরিয়ে গেলে বুঝতে হবে, এটি অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার করছে।
- ট্র্যাকিং অ্যাপ চালু থাকলে ফোনের প্রসেসর ব্যস্ত থাকে এবং ব্যাটারি বেশি খরচ হয়।
- যদি ফোন হিট হয় বা রাতেও ব্যাটারি কমতে থাকে, তাহলে এটি সন্দেহজনক হতে পারে।
৪. মোবাইল ডাটা ও ওয়াই-ফাই ব্যবহারের নজরদারি করুন
- অজানা অ্যাপ বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করছে কিনা চেক করুন।
- সেটিংস → নেটওয়ার্ক ইউসেজ অপশনে গিয়ে ডাটা খরচ বিশ্লেষণ করুন।
- যদি কোনো অজানা অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করে, তাহলে তা ট্র্যাকিং সফটওয়্যার হতে পারে।
৫. ফোন হ্যাং বা স্লো হয়ে গেলে সতর্ক থাকুন
- ফোন ব্যবহার করার সময় বারবার হ্যাং বা অতিরিক্ত স্লো হয়ে যাচ্ছে?
- স্ক্রিন ফ্রিজ হওয়া বা অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ চালু হয়ে যাওয়া সন্দেহজনক হতে পারে।
- অজানা অ্যাপ ইনস্টল হয়েছে কিনা চেক করুন (সেটিংস → অ্যাপস অপশনে গিয়ে)।
৬. যদি সন্দেহ হয়, কী করবেন?
- ফোন ফ্যাক্টরি রিসেট করুন (ব্যাকআপ নিয়ে)।
- গুগল অ্যাকাউন্ট ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।
- ফোনের সিকিউরিটি সেটিংস চেক করুন, ট্র্যাকিং অ্যাপ থাকলে তা আনইনস্টল করুন।
- এরপরও সন্দেহ হলে, স্থানীয় পুলিশ বা সাইবার নিরাপত্তা সংস্থার সাহায্য নিন।

ফোন ট্র্যাকিং বন্ধ বা প্রতিরোধের উপায়
ফোন ট্র্যাকিং অনেক ক্ষেত্রেই দরকারি হতে পারে, যেমন—হারিয়ে যাওয়া ফোন খুঁজে পাওয়া বা পরিবারকে নিরাপদ রাখা। তবে যদি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কেউ আপনার ফোন ট্র্যাক করে, তাহলে তা হতে পারে গোপনীয়তা লঙ্ঘনের বড় কারণ। তাই নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
১. ফোনের লোকেশন সেটিংস বন্ধ করুন
আপনার ফোন লোকেশন ট্র্যাকিং করছে কিনা তা নিশ্চিত করতে প্রথমেই সেটিংসে গিয়ে লোকেশন সেটিংস চেক করুন।
কীভাবে বন্ধ করবেন?
- অ্যান্ড্রয়েড:
Settings → Location → Turn Off
- আইফোন:
Settings → Privacy & Security → Location Services → Turn Off
- যদি পুরোপুরি বন্ধ করতে না চান, তবে শুধুমাত্র যে অ্যাপগুলোর প্রয়োজন নেই, তাদের লোকেশন অ্যাক্সেস বন্ধ করে দিন।
২. সন্দেহজনক অ্যাপগুলো সরিয়ে ফেলুন
অনেক সময় গোপনে ইনস্টল হওয়া কিছু অ্যাপ আপনার লোকেশন, কল, এবং মেসেজ ট্র্যাক করতে পারে।
কীভাবে চেক করবেন?
আরও পড়ুন
Settings → Apps
অপশনে গিয়ে অজানা বা অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ শনাক্ত করুন।- “Device Admin Apps” বা “Accessibility” সেটিংসে গিয়ে সন্দেহজনক অ্যাপগুলো আছে কিনা দেখুন।
- কোনো সন্দেহজনক অ্যাপ থাকলে তা ডিলিট করুন।
৩. গুগল অ্যাকাউন্টের লোকেশন ট্র্যাকিং বন্ধ করুন
আপনার গুগল অ্যাকাউন্টও আপনার লোকেশন ডেটা সংরক্ষণ করে রাখতে পারে।
বন্ধ করতে:
- গুগল অ্যাকাউন্ট সেটিংস এ যান →
Data & Privacy → Location History → Pause
- Google Maps Timeline-এ গিয়ে চেক করুন, আপনার লোকেশন হিস্টোরি সংরক্ষণ হচ্ছে কিনা।
৪. ফোনের নেটওয়ার্ক ও ওয়াই-ফাই ট্র্যাকিং বন্ধ করুন
অনেক সময় ওয়াই-ফাই এবং মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ট্র্যাকিং হয়।
প্রতিরোধের উপায়:
- অপ্রয়োজনীয় ওয়াই-ফাই কানেকশন বন্ধ রাখুন।
- “Wi-Fi Scanning” এবং “Bluetooth Scanning” বন্ধ করুন:
- Android:
Settings → Location → Scanning → Turn Off
- iPhone:
Settings → Privacy & Security → Location Services → System Services → Turn Off Wi-Fi & Bluetooth Scanning
- Android:
৫. কল ফরওয়ার্ডিং বা সন্দেহজনক কোড চেক করুন
আপনার কল বা মেসেজ অন্য কোথাও ফরওয়ার্ড হচ্ছে কিনা তা চেক করতে নিচের গোপন কোডগুলো ডায়াল করুন:
চেক করতে:
*#61#
→ দেখুন, আপনার কল অন্য কোথাও ফরওয়ার্ড হচ্ছে কিনা।*#62#
→ কল বা মেসেজ অন্য কোথাও যাচ্ছে কিনা পরীক্ষা করুন।*#21#
→ সমস্ত ডাইভারশন চেক করুন।
যদি ফরওয়ার্ডিং চালু থাকে, তাহলে সেটি বন্ধ করতে:
##002#
ডায়াল করুন (এটি সব ধরণের কল ফরওয়ার্ডিং বন্ধ করে দেবে)।
৬. ফোন রিস্টোর করুন (শেষ উপায়)
যদি সন্দেহ হয় যে আপনার ফোনে ম্যালওয়্যার বা ট্র্যাকিং সফটওয়্যার ইনস্টল আছে, তবে ফ্যাক্টরি রিসেট করুন।
কীভাবে করবেন?
- Android:
Settings → System → Reset → Factory Data Reset
- iPhone:
Settings → General → Transfer or Reset iPhone → Erase All Content & Settings
রিসেট করার আগে আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ব্যাকআপ নিয়ে নিন।
৭. সন্দেহজনক হলে অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করুন
আপনার মোবাইল অপারেটর যদি কোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ শনাক্ত করতে পারে, তবে তারা নির্দিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে পারে।
যোগাযোগ করুন:
- আপনার সিম অপারেটর কাস্টমার কেয়ারে কল করুন।
- কোনো অজানা সিম বা নম্বর দিয়ে কল ফরওয়ার্ড হচ্ছে কিনা জিজ্ঞাসা করুন।
- নতুন সিম কার্ড নেওয়ার কথা বিবেচনা করুন, যদি মনে হয় আপনার সিম ক্লোন বা হ্যাক করা হয়েছে।
শেষ কথা: নিরাপদ থাকুন, সচেতন থাকুন!
নিজের প্রাইভেসি রক্ষা করা এখন গুরুত্বপূর্ণ! যদি মনে হয় কেউ গোপনে আপনার ফোন ট্র্যাক করছে, তাহলে উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করুন। সন্দেহজনক কোনো অ্যাপ বা আচরণ দেখলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিন এবং প্রয়োজনে পুলিশ বা সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সাহায্য নিন।
নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করুন!
4 thoughts on “ফোন ট্র্যাকিং হচ্ছে কিনা বুঝবেন কিভাবে? জেনে বন্ধ করার উপায়”