একসঙ্গে ধেয়ে আসছে দুই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, আঘাত হানবে কখন-কোথায়

ফিলিপাইনকে তছনছ করতে প্রস্তুত দুটি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় —সুপার টাইফুন উসাগি এবং ক্রান্তীয় ঝড় ম্যান-ই। সম্প্রতি একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাতে বিপর্যস্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে মাত্র এক মাসেই পাঁচটি ঝড় আঘাত হেনেছে, যার ফলে অনেক মানুষের প্রাণহানি এবং অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

আরও পড়ুন: ড ইউনূস সহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ

এখনও আগের ঘূর্ণিঝড় গুলোর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দেশটি নতুন বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে। দুটি শক্তিশালী ঝড় ইতিমধ্যেই দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন এলাকায় আঘাত হানতে চলেছে এবং স্থানীয় প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

হাজারো মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে

বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ফিলিপাইনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কাগায়ান প্রদেশে সুপার টাইফুন উসাগির আঘাত হানার আশঙ্কায় ফিলিপাইন সরকারের পক্ষ থেকে হাজার হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত কাগায়ান থেকে প্রায় ২৪ হাজারেরও বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই পূর্ববর্তী টাইফুনগুলোর কারণে শহর ছেড়ে এসেছেন এবং তারা এখন নতুন ঝড়ের আশঙ্কায় নতুন করে আবারও নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন।

আরও পড়ুন: ‘যুদ্ধ শেষ হয়নি’- আবারও লাল হচ্ছে ফেসবুক প্রোফাইল

কাগায়ান দুর্যোগ ও ত্রাণ বিভাগের প্রধান রুয়েলি রাপসিং বলেন, “সুপার টাইফুন উসাগির প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাত হবে, যা কাগায়ান নদীর পানির স্তর বিপজ্জনকভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে।” তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে কাগায়ানের মধ্য এবং দক্ষিণ অংশে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং কিছু এলাকায় ১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেগে ঝোড়ো বাতাস বইছে। ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য জেনারেটর এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সুপার টাইফুন উসাগির প্রভাব

সুপার টাইফুন উসাগি, স্থানীয়ভাবে অফেল নামে পরিচিত, ফিলিপাইনের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ কাগায়ানে আছড়ে পড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। ঝড়ের শক্তিশালী প্রভাব কাগায়ান প্রদেশের জন্য বিশেষভাবে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে যেহেতু সেখানে ইতিমধ্যেই বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

টাইফুন উসাগির প্রভাবে আরো বৃষ্টিপাত এবং ঝোড়ো বাতাসের কারণে কাগায়ান নদীর পানি বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যেতে পারে, যা স্থানীয়দের জীবনে নতুন করে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। প্রশাসন স্থানীয়দের সরিয়ে নেওয়া ছাড়াও ঝড়-পরবর্তী জরুরি পরিষেবা কার্যকর করতে প্রস্তুতি নিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে জেনারেটর ও জরুরি চিকিৎসা সামগ্রীও মজুদ রাখা হয়েছে।

ক্রান্তীয় ঝড় ম্যান-ই’র আগমন

সুপার টাইফুন উসাগি ছাড়াও আরেকটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, ক্রান্তীয় ঝড় ম্যান-ই, ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় অঞ্চলের দিকে ধেয়ে আসছে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এটি শনিবার, ১৬ নভেম্বর, আঘাত হানতে পারে। কেন্দ্রীয় প্রদেশগুলোতে সম্ভাব্য ঝড়ের তীব্রতার কারণে সেখানকার জনগণকে অপ্রয়োজনীয় স্থলপথে ভ্রমণ এড়াতে বলা হয়েছে। পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার থেকে এই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পরিবহন চলাচল সীমিত করা হয়েছে যাতে জনগণ ঝুঁকি এড়িয়ে থাকতে পারে।

ফিলিপাইনের ওপর ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব

ফিলিপাইন প্রতি বছর প্রায় ২০টি ক্রান্তীয় ঝড়ের সম্মুখীন হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রের অবস্থান ও ভৌগলিক কারণে এখানে ঝড়ের প্রকোপ অনেক বেশি। ক্রান্তীয় ঝড়গুলোর প্রভাবে সাধারণত তীব্র বৃষ্টিপাত, ঝড়ো বাতাস এবং ভূমিধসের সৃষ্টি হয়, যা জীবন ও সম্পদের ক্ষতি করে। গত অক্টোবর মাসেই ফিলিপাইনের লুজন দ্বীপে ট্রামি ও কং-রে নামে দুটি টাইফুন আঘাত হানে। এতে ১৫৯ জন মানুষ মারা যান এবং এখনও ২২ জন নিখোঁজ আছেন।

আরও পড়ুন: ওবায়দুল কাদের এখন কোথায়, তাকে নিয়ে নতুন গুঞ্জন

ফিলিপাইনের এমন দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে, দেশের প্রশাসন একটি কার্যকর ঝড় ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া গড়ে তোলার জন্য নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় তারা শুধুমাত্র স্থানীয় জনগণকেই সুরক্ষিত করছে না, বরং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে সাথে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো রক্ষায়ও পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবুও, ঘন ঘন টাইফুন ও ক্রান্তীয় ঝড়ের কারণে ফিলিপাইনের জনজীবন প্রায়শই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

ফিলিপাইনের বর্তমান পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দেয়, আবহাওয়ার চরম প্রভাবের সঙ্গে লড়াই করে চলা এই দ্বীপরাষ্ট্রটির সামনে আবহাওয়াগত দিক থেকে কঠিন ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।

Juger Alo Google Newsযুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

Leave a Comment