রংপুরে টানা বৃষ্টিপাতের ফলে নদী-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খোলা হয়েছে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ফসলি জমি ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুরে ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামী দুই দিনের মধ্যে আরো ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে, যা রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম জেলার নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলগুলোকে প্লাবিত করতে পারে।
আরও পড়ুন: রংপুরে সরকারি গুদাম থেকে চাল-গম উধাও, খাদ্য কর্মকর্তাও লাপাত্তা
গতকাল (২৬ সেপ্টেম্বর) থেকে টানা মাঝারি ও ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এই বর্ষণের কারণে তিস্তা, ধরলা, ও দুধকুমার নদীর পানি সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এখনও কোনো নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুসারে, তিস্তার পানি এখনো বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু প্রায় ৪৪টি জলকপাট খোলার ফলে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে।
বন্যার শঙ্কা ও ফসলের ক্ষতি
পানির ধারা বৃদ্ধির ফলে রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করে শীতকালীন সবজি, বীজতলা, ও অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর শাখার উপ-প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন জানিয়েছেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধি সামাল দিতে ৪৪টি জলকপাট খোলা রাখা হয়েছে।
রংপুরের আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আবহাওয়াবিদ মো. মোস্তাফিজার রহমান জানিয়েছেন, আগামী দুই দিন ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে এবং এই কারণে তিস্তা, ধরলা, ও দুধকুমার নদীর পানি সমতল বিপদসীমার কাছাকাছি চলে আসতে পারে। তিনি আরও জানিয়েছেন, এসব অঞ্চলের মানুষকে সতর্ক থাকতে এবং প্রয়োজনে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নের গ্যাস এল রংপুরে, ঘটবে শিল্প বিপ্লব
অসময়ের বন্যা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপের আহ্বান
তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেছেন, অসময়ের বন্যা ও নদী ভাঙনে প্রতি বছর তিস্তা অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ সম্পদের ক্ষতি হয়। প্রতি বছর প্রায় এক লাখ কোটি টাকার সম্পদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তিনি এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। নদী খনন ও সংরক্ষণের মাধ্যমে এই সংকট মোকাবেলা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এদিকে, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, আগামী চার দিন ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে আপাতত এই নদীগুলোর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সামনের দিনগুলিতে পরিস্থিতির পূর্বাভাস
আগামী ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল থাকার কথা জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। তবে পরবর্তী চার দিন পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে উজানের ঢলে রংপুর ও তৎসংলগ্ন জেলাগুলোর নদ-নদীর পানির চাপ আরও বাড়তে পারে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে নদীর পার্শ্ববর্তী বসতবাড়ি ও কৃষিজমি প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
অবিরাম বর্ষণের কারণে নদ-নদীগুলোর পানির চাপ সামলাতে স্থানীয় প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু জায়গায় স্বেচ্ছাসেবী দলগুলো কাজ শুরু করেছে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন