বাংলাদেশে আবারও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি নতুন আন্দোলন শুরু হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন শিক্ষার্থী, আন্দোলনকারীরা এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্টরা তাদের ফেসবুক প্রোফাইল ছবি লাল করেছেন। তাদের দাবি, আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে এবং এটি গণতন্ত্রের প্রতি অবিচার। বিশেষত, গত তিন মাস ধরে আওয়ামী লীগের শাসনকর্তৃত্বের সমালোচনা অব্যাহত রেখেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অধিকাংশ সমন্বয়করা, যারা এখনো এ আন্দোলনের পক্ষে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ওবায়দুল কাদের এখন কোথায়, তাকে নিয়ে নতুন গুঞ্জন
এবারের ফেসবুক প্রোফাইল ছবি লাল করার প্রবণতা মূলত একটি প্রতিবাদ হিসেবে এসেছে, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনকে কেন্দ্র করে এবং সাম্প্রতিক সরকারের কিছু পদক্ষেপের বিরোধিতা করে। ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা জানিয়েছেন, সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্তে নতুন করে কয়েকজনকে উপদেষ্টা করা হয়েছে, যার মধ্যে আছেন আকিজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেখ বশির উদ্দিন এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এই নিয়োগ নিয়ে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা এবং প্রতিবাদ হিসেবে ছাত্র আন্দোলনকারীরা আবারো তাদের ফেসবুক প্রোফাইল ছবি লাল করার হিড়িক শুরু করেছেন।
ছাত্র আন্দোলনের প্রতি প্রতিবাদ এবং তার প্রেক্ষাপট
১১ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে ফেসবুকে ফেসবুক প্রোফাইল ছবিতে লাল রঙ ব্যবহার করে আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ তার বিরোধিতা জানান। তিনি তার প্রোফাইল ছবিতে ক্যাপশন দেন, “সাঈদ ওয়াসিম মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ। ১৩৪ শে জুলাই, ২০২৪।” হাসনাত তার পোস্টে আরো বলেন, “বশির-ফারুকীকে উপদেষ্টা করার প্রতিবাদ সভা থেকে গ্রেপ্তার করার ঘটনা চরম ফাইজলামি। এগুলা ভণ্ডামি। আপনেরা হাসিনা হয়ে ওঠার চেষ্টা কইরেন না। হাসিনারেই থোরাই কেয়ার করছি, উৎখাত করছি। আপনেরা কোন হনু হইছেন?”
আরও পড়ুন: নতুন শিক্ষা কারিকুলাম-এ যুক্ত হচ্ছে আরবি: বাদ পড়ছে ৪ লেখকের গল্প প্রবন্ধ
এই পোস্ট এবং ফেসবুক প্রোফাইল ছবি লাল করার মাধ্যমে তিনি সরাসরি সরকারের কর্মকাণ্ড এবং উপদেষ্টা নিয়োগের বিরোধিতা করেন। তার এই প্রতিবাদ সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেক প্রশংসা এবং সমর্থন পেয়েছে, বিশেষ করে ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা ও ছাত্র সমাজের অধিকাংশ অংশ তাদের ফেসবুক প্রোফাইল ছবি লাল করার মাধ্যমে এই প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করেছে।
এছাড়া, একজন শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম তার মতামত জানান, “সবার ভেতরে থাকা লাল, আবার টগবগ করুক। চিরচেনা সেই উষ্ণতা, আবার ফিরে আসুক। হাজার হাজার ফেসবুক প্রোফাইল লাল হওয়ার পরও যদি উপদেষ্টা পরিষদের টনক না নড়ে, তাহলে রাজপথ লাল হতে দেরি নাই।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি স্পষ্টভাবে জানান যে, আন্দোলন এখনও থামেনি এবং রাজপথে আরও বড় আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবাদ
এখানে শুধুমাত্র স্থানীয় ছাত্র আন্দোলনকারীরা অংশগ্রহণ করেননি, বরং আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমও এই বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরও তার ফেসবুক প্রোফাইল ছবি লাল করেন এবং এই বিষয়ে ১১টি প্রশ্ন তুলে ধরেন।
তিনি তার পোস্টে উল্লেখ করেন যে, “উপদেষ্টাদের কিসের ভিত্তিতে নির্বাচন করা হয় এবং কারা নির্বাচিত করেন? উপদেষ্টারা কি কোন বিশেষ ব্যক্তির নিয়োগ সুপারিশ করতে পারেন, কিসের ভিত্তিতে সুপারিশ করা হয়? ছাত্র-জনতার আন্দোলনের তিনজন সমন্বয়ক ছাত্রকে কোন যোগ্যতায় উপদেষ্টা নির্বাচিত করা হয়েছে?” তার এই প্রশ্নগুলোর মাধ্যমে তিনি সরকারের স্বচ্ছতা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি সংশয় তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: বিনামূল্যে ৩০ কেজি চাল দেবে সরকার, আবেদন যেভাবে
সেখানে আরো উল্লেখ করা হয়, “বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্র এই আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন। কিন্তু সরকারে তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই কেন?” এই প্রশ্নগুলো ওঠানোর মাধ্যমে তিনি সরকারের সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।
সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা
বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে বিরোধিতা তীব্র আকার ধারণ করেছে। ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলছেন যে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছেন তাদের কোনো প্রতিনিধি যদি উপদেষ্টা মণ্ডলীতে না থাকে, তাহলে এটি গণতন্ত্রের জন্য এক বড় সংকেত। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, “কেন আওয়ামী লীগের পদলেহনকারী সেনা কর্মকর্তারা এখনো চাকরিতে রয়েছেন এবং তাদের কেন বরখাস্ত করা হচ্ছে না?”
এছাড়া, গ্রামীণ ব্যাংকের অবদানের প্রশ্নও উঠেছে। সাংবাদিক জুলকারনাইন তার পোস্টে উল্লেখ করেছেন, “গ্রামীণ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাদের কিসের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে?” তিনি আরো বলেছেন, “আলী ইমাম মজুমদারের মতো একজন আওয়ামী ভৃত্য কেন সরকারের অংশ?” এসব প্রশ্নের মাধ্যমে তিনি সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন এবং প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
ছাত্রদের আন্দোলন এবং সরকারের প্রতিক্রিয়া
এই প্রতিবাদের পর, ফেসবুকে ফেসবুক প্রোফাইল লাল করার হিড়িক শুধু ছাত্র আন্দোলনকারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে সাধারণ জনগণও এতে অংশ নিয়েছেন। সবার মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা এবং ক্ষোভ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: নূর হোসেন দিবসে মাঠে নামতে পারেনি আ. লীগ, জিরো পয়েন্টে দিনভর যা হলো
এটি স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে যে, ছাত্র সমাজ এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে সরকারের পদক্ষেপের প্রতি অসন্তোষ রয়েছে এবং তারা তাদের প্রতিবাদ জানানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে। ছাত্রদের আন্দোলন, সরকারের প্রভাব এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা এই পরিস্থিতিতে বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে।
উপসংহার
এখনো ফেসবুক প্রোফাইল লাল করার এই আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে এবং এটি আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে। ছাত্ররা শুধু তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে না, তারা তাদের সামাজিক মিডিয়ায় প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারের প্রতি চাপ প্রয়োগ করার চেষ্টা করছে। সরকারের প্রতি জনগণের ক্ষোভ, ছাত্র আন্দোলনকারীদের কঠোর প্রতিবাদ এবং ফেসবুক প্রোফাইল ছবির মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবাদের প্রতি সাড়া সামনে যে একটি বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন আসছে, তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।
2 thoughts on “‘যুদ্ধ শেষ হয়নি’- আবারও লাল হচ্ছে ফেসবুক প্রোফাইল”