মুরগির মাংস খাওয়ার পর অনেকে হাড় চিবিয়ে খেতে ভালোবাসেন এবং অনেকে আবার হাড়ের ভেতরের মজ্জা উপভোগ করেন। এই অভ্যাসটি আসলে কেবল স্বাদ নয়, বরং পুষ্টিগুণের কারণেও স্বাস্থ্যকর হতে পারে। মুরগির হাড় এবং মজ্জা বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের সঠিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু ৯৯% মানুষ জানে না মুরগির হাড় চিবানো আসলেই কি ভালো না খারাপ? এই ব্লগ পোস্টে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো
আরও পড়ুন: বেশি হাসা, দ্রুত কথা বলা, অল্পতেই রেগে আগুন- এমন সব আচরণের কী মানে?
মুরগির হাড়ের সাদা অংশ, যা তরুণাস্থি হিসেবে পরিচিত, মূলত প্রোটিনে সমৃদ্ধ। এটি গ্লাইসিন এবং প্রোলিন নামক দুটি প্রোটিন দ্বারা গঠিত, যা কোলাজেন প্রস্তুতিতে সাহায্য করে। কোলাজেন শরীরের কোষের স্থিতিস্থাপকতা এবং জোড়াগুলোর স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই কোলাজেনের গুণাগুণ আমাদের ত্বক, চুল, নখ, হাড় ও জোড়াগুলোর জন্য অত্যন্ত উপকারী।
আরও পড়ুন: ঘুমের আগে বালিশের নিচে রসুন রেখে দেখুন ম্যাজিক
মুরগির হাড় চিবানো আসলেই কি ভালো?
মুরগির হাড়ের মজ্জার মধ্যে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, আয়রন, সেলেনিয়াম, এবং জিংকের মতো মূল্যবান উপাদান, যা শরীরের বিভিন্ন কার্যাবলিতে সহায়তা করে। এর ফ্যাট টিস্যুতে ভিটামিন এ, ই এবং কে থাকে, যা শরীরের ফ্যাটে দ্রবণীয় ভিটামিন হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন বি ১২-এ ভরপুর এই হাড়ের মজ্জা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, রক্ত কোষ উৎপাদনে সাহায্য করে, এবং মস্তিষ্কের কার্যক্রম ভালো রাখে।
হাড়ের মজ্জা ও তার উপকারিতা
১. মস্তিষ্কের কোষের সুরক্ষা: হাড়ের মজ্জায় ভিটামিন বি ১২ থাকে, যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং শরীরের কোষগুলোকে মুক্ত মৌলিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এই ভিটামিন আমাদের মস্তিষ্কের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। নিয়মিত মজ্জা খেলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।
২. প্রদাহ কমায়: হাড়ের মজ্জায় গ্লুকোসামাইন, গ্লাইসিন, এবং কনজুগেটেড লিনোলাইক অ্যাসিড থাকে, যা শরীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। যারা প্রদাহজনিত রোগ যেমন আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন, তাদের জন্য হাড়ের মজ্জা উপকারী হতে পারে। গ্লুকোসামাইন জোড়াগুলোর স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং তাদের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন: কোন ভিটামিনের অভাবে ত্বক শুষ্ক হয়, শীতের আগেই নিন প্রস্তুতি নিন
৩. ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস: গবেষণায় দেখা গেছে যে, অতিরিক্ত ওজনের ব্যক্তিদের শরীরে এডিনোপেকটিনের পরিমাণ কম থাকে, যা তাদের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। হাড়ের মজ্জায় এই উপাদান থাকে, যা ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
৪. মেটাবলিক সিনড্রোমের ঝুঁকি কমায়: এডিনোপেকটিন হাড়ের মজ্জায় পাওয়া যায়, যা ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং ফ্যাট ভাঙতে সাহায্য করে। এই উপাদানটি ডায়াবেটিসসহ মেটাবলিক সিনড্রোম এড়াতে সাহায্য করতে পারে।
৫. শিশুর বুদ্ধি বিকাশে সহায়ক: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হাড়ের মজ্জায় থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য বিশেষভাবে কার্যকরী। এটি শিশুর মস্তিষ্কের কোষগুলোকে মজবুত করে এবং তাদের স্মৃতিশক্তি উন্নত করে।
৬. রক্ত জমাট বাঁধা: ভিটামিন কে হাড়ে উপস্থিত থাকে, যা শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে কার্যকর করতে সহায়তা করে। ফলে কোনো কাটাছেঁড়া বা আঘাত পেলে দ্রুত রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। এটি শরীরের ক্ষুদ্র ক্ষতগুলো দ্রুত নিরাময়ে সহায়ক।
হাড় চিবানোর আরও কিছু উপকারিতা
মুরগির হাড়ে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা ত্বক, হাড়, এবং জোড়াগুলোর জন্য বিশেষভাবে উপকারী। এতে ভিটামিন এ, বি ১২, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, আয়রন এবং ফসফরাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। এগুলো ত্বককে কোমল ও মসৃণ রাখে, হাড়ের গঠন মজবুত করে এবং জোড়াগুলোর স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। বিশেষ করে ভিটামিন এ ত্বকের কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে, যা ত্বকের সৌন্দর্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফসফরাস হাড়ের গঠন মজবুত করে, যা অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন: আমের আঁটি দিয়ে কী করবেন? জেনে নিন উপকারিতা, ব্যবহার ও পুষ্টিগুন
এছাড়াও, থায়ামিন শরীরে কোষগুলোর শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে এবং রিবোফ্লাভিন চোখের দৃষ্টি উন্নত করতে কার্যকর। ভিটামিন বি ১২ রক্তের লোহিত কণিকা তৈরিতে সহায়ক, যা শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করে।
দেশি মুরগির হাড়ের বিশেষ উপকারিতা
বাজারে দেশি মুরগির হাড় পাওয়া গেলে সেটি আরও বেশি স্বাস্থ্যকর হতে পারে। কারণ দেশি মুরগির হাড়ে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণ থাকে, যা ফার্মের মুরগির চেয়ে অনেক বেশি। দেশি মুরগির হাড় চিবানো মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
হাড়ের মজ্জা এবং ত্বক ও জোড়াগুলোর স্বাস্থ্য
ত্বক, হাড়, এবং জয়েন্টগুলোর স্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য হাড়ের মজ্জা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মজ্জার মধ্যে থাকা ভিটামিন বি ১২, আয়রন এবং ফসফরাস শরীরের টিস্যু গঠনে সহায়তা করে। আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা দেহের কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে।
আরও পড়ুন: সুস্বাস্থ্যের জন্য সেরা ১২টি হেলথ টিপস, যা আপনার জানা দরকার
জোড়াগুলোর স্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য মুরগির হাড় চিবানো অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিত হাড় চিবালে হাড়ে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো শরীরে প্রবেশ করে, যা জোড়াগুলোকে মজবুত রাখে এবং বয়স্ক বয়সে আর্থ্রাইটিসের মতো সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে।
হাড় চিবানোর সঠিক পদ্ধতি
হাড় চিবানোর সময় সতর্ক থাকা জরুরি। কঠিন হাড়ের অংশ খাওয়ার সময় দাঁতের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাই নরম হাড় বা মজ্জা খাওয়াই বেশি উপকারী। এটি শরীরের জন্য পুষ্টিকর, তবে অতিরিক্ত খাওয়ার কারণে ফ্যাট এবং ক্যালরি বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণে হাড় চিবানো ভালো।
অবশেষে, মুরগির হাড় ও মজ্জা চিবানোর অভ্যাস কেবল একটি স্বাদ উপভোগ করার বিষয় নয়, বরং এটি পুষ্টির এক সমৃদ্ধ উৎস। হাড় ও মজ্জা খেলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, মিনারেল ও প্রোটিন প্রবেশ করে, যা মস্তিষ্ক, ত্বক, হাড় এবং জোড়াগুলোর জন্য উপকারী। তবে সঠিকভাবে এবং পরিমিত পরিমাণে হাড় চিবানো উচিত, যাতে পুষ্টিগুণের পাশাপাশি এটি নিরাপদও থাকে।
2 thoughts on “মুরগির হাড় চিবানো আসলেই কি ভালো? ৯৯% মানুষ জানে না”