দেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে (স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) শিক্ষক সংকট নিরসনে সরকার বড় পরিসরে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রায় ১ লাখ শূন্য পদ পূরণের লক্ষ্যে ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) ইতোমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শূন্য পদের তথ্য আহ্বান করেছে।
শূন্য পদের তথ্য আহ্বান ও ই-রিকুইজিশন কার্যক্রম
গত ৩০ অক্টোবর এনটিআরসিএ অনলাইনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শূন্য পদের চাহিদা আহ্বান করে, যা ই-রিকুইজিশন নামে পরিচিত। এই কার্যক্রমে তথ্য প্রদান করা যাবে আগামী ১০ নভেম্বর পর্যন্ত। অনলাইনে চাহিদা ফি জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৩ নভেম্বর। উল্লেখ্য, এবারই প্রথমবারের মতো আগামী তিন বছরের (৩১ ডিসেম্বর ২০২৭ পর্যন্ত) সম্ভাব্য শূন্য পদের চাহিদা পাঠাতে বলা হয়েছে। এর আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য হালনাগাদ কার্যক্রম (ই-রেজিস্ট্রেশন) সম্পন্ন করেছে এনটিআরসিএ।
আরও পড়ুন: তরুণদের চাকরি পাওয়ার জন্য উপকারী পাঁচ কোর্স
গত ৩১ মার্চ এনটিআরসিএ পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, যেখানে শূন্য পদের সংখ্যা ছিল ৯৬,৭৩৬টি। এর মধ্যে স্কুল-কলেজের শূন্য পদ ছিল ৪৩,২৮৬টি এবং মাদরাসা, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে ৫৩,৪৫০টি। তবে, পরবর্তীতে মাত্র ১৯,৫৮৬ জন প্রার্থীকে নিয়োগের সম্মতি দেওয়া হয়। ফলে প্রায় ৭৭,৫০০ পদ এখনও শূন্য রয়েছে। এছাড়া চলতি বছরে অবসরের কারণে আরও ২০ থেকে ২৫ হাজার পদ শূন্য হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ শূন্য পদ পূরণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি কবে হতে পারে
এনটিআরসিএর সচিব এ এম এম রিজওয়ানুল হক জানিয়েছেন, ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অংশ হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ই-রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম শেষে শূন্য পদের চাহিদা আহ্বান করা হয়েছে। শূন্য পদের চাহিদা পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই শেষে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। আগামী তিন মাসের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২০০৫ সাল থেকে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ প্রদান করে আসছে এনটিআরসিএ। তবে, প্রথম ১০ বছর শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা ছিল সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির হাতে। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর সরকার এনটিআরসিএকে সনদ দেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশের ক্ষমতাও প্রদান করে। এরপর থেকে পাঁচটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১,৩২,৮৯৮ জন শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে এনটিআরসিএ।
আরও পড়ুন: পড়াশোনা মনে রাখার জন্য সেরা সময় কোনটি? জেনে নিন ৫ কৌশল
৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি শূন্য পদের তালিকা
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) শীঘ্রই ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে যাচ্ছে, যেখানে প্রায় ১ লাখ শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে এনটিআরসিএ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে শূন্য পদের তথ্য সংগ্রহ করছে, যা ই-রিকুইজিশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। এই তথ্য সংগ্রহের পর শূন্য পদের তালিকা প্রকাশ করা হবে।
শূন্য পদের তালিকা প্রকাশিত হলে, আপনি এনটিআরসিএর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (https://ntrca.gov.bd/) তা দেখতে পারবেন। সেখানে জেলা, উপজেলা এবং বিষয়ভিত্তিক শূন্য পদের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। এনটিআরসিএর ওয়েবসাইটে নিয়মিত আপডেটের জন্য নজর রাখুন, যাতে আপনি সর্বশেষ তথ্য সম্পর্কে অবগত থাকতে পারেন।
আবেদন প্রক্রিয়া ও প্রার্থীদের প্রস্তুতি
আসন্ন ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের এনটিআরসিএর ওয়েবসাইট নিয়মিত পরিদর্শন করে আপডেট তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনলাইনে আবেদন ফর্ম পূরণ ও প্রয়োজনীয় ফি জমা দিতে হবে। প্রার্থীদের প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অন্যান্য শর্তাবলী পূরণ করতে হবে। এছাড়া, আবেদন প্রক্রিয়া, পরীক্ষার সময়সূচি ও অন্যান্য তথ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ রাখতে হবে।
প্রায় ১ লাখ শিক্ষক নিয়োগের এই উদ্যোগ দেশের শিক্ষা খাতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। দীর্ঘদিন ধরে শূন্য পদে শিক্ষক সংকটে ভুগছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের সঠিক শিক্ষা প্রদান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে গতি আসবে। এছাড়া, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন উদ্যম ও প্রেরণা যোগ করবেন।
সতর্কতা ও পরামর্শ
প্রার্থীদের প্রতি পরামর্শ, নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে কোনো বিভ্রান্তিকর তথ্য বা গুজবে কান না দিয়ে এনটিআরসিএর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন। এছাড়া, আবেদন প্রক্রিয়ায় কোনো অসুবিধা বা প্রশ্ন থাকলে এনটিআরসিএর হেল্পলাইন বা অফিসিয়াল যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্য নিন।
দেশের শিক্ষা খাতে শিক্ষক সংকট নিরসনে এনটিআরসিএর এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। প্রার্থীদের সঠিক প্রস্তুতি ও নিয়মিত তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে এই সুযোগের সর্বোত্তম ব্যবহার করা উচিত। আশা করা যায়, এই নিয়োগ প্রক্রিয়া দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন