বর্তমানে দেশের বাজারে চালের তুলনায় আলুর দাম বেশি হয়ে গেছে, যা বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। রাজধানীসহ সারাদেশের বাজারে আলুর দাম এখন চালের দামের থেকেও বেশি। বিশেষত মোটা ও মাঝারি ধরনের চালের দাম ছাড়িয়ে গেছে আলুর দাম। এর ফলে, অনেক ক্রেতাই এই প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যটি কিনতে পারছেন না। চালের দামকে ছাড়িয়েছে দেখে ক্রেতার প্রশ্ন, ‘আলু কি বিলাস পণ্য?’
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার পরিদর্শন এবং ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু (কার্ডিনাল, গ্যানোলা, ডায়মন্ড) বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকায়। তবে বড় বাজার থেকে পাঁচ কেজির পাল্লায় কিনলে কিছুটা কমে পাওয়া যায়। প্রায় ২০ দিন আগে পর্যন্ত আলুর দাম ছিল ৫৫-৬০ টাকা। সরকারি সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এই সময়ে আলুর কেজি ছিল ৪৫-৫০ টাকা, যা এখন ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ডালের বাজারে নৈরাজ্য চরমে, কেজিতে বেড়েছে ৩০ টাকা
আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে দুই মাস আগে সরকার আমদানি শুল্ক কমালেও বাজারে তার প্রভাব পড়েনি, বরং দাম আরও বেড়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, হিমাগার ফটকে আলুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, যার প্রভাব সরাসরি ভোক্তাদের ওপর পড়ছে। তবে হিমাগার মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, কৃষকের কাছে আলু শেষ হয়ে গেছে এবং হিমাগারে মজুতও কমে গেছে। মৌসুমে বেশি লাভের আশায় কৃষকরা তাড়াতাড়ি আলু তুলে ফেলেছেন, যার কারণে কিছুটা কম ফলন হয়েছে।
তবে চালের দামও কম নয়। রাজধানীর বাজারে মোটা চাল (গুটিস্বর্ণা, চায়না ইরি) ৫২-৫৫ টাকায়, মাঝারি চাল (বিআর-২৮, পাইজাম) ৫৮-৬৫ টাকায় এবং চিকন চাল (মিনিকেট, নাজিরশাইল) ৬৮-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর মানে, কিছু ক্ষেত্রে আলুর দাম চালের থেকেও বেশি হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেছেন, আলুর দাম বৃদ্ধির জন্য হিমাগার মালিকরা দায়ী নন। বাজারে সিন্ডিকেটের প্রভাবও নেই। দেশে মোট ২২৩টি হিমাগার থাকলেও আলু সরাসরি কৃষকদের মাধ্যমে বাজারে পৌঁছে যায়। তিনি জানান, এবারের ফলন বেশি হবে এবং কৃষকরা আগের চেয়ে বেশি জমি ভাড়া নিয়ে আলু চাষ করতে আগ্রহী।
এদিকে, শীতকালীন সবজির দামও কমেনি, যার ফলে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য জীবনযাপন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ক্রেতা মোখলেছুর রহমান বলছেন, তিনি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালান এবং বাজারের এই অবস্থায় শীতকালীন সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি আরও জানান, আলুর দামও খুব বেশি।
আরও পড়ুন: ১ কেজি পেঁয়াজের দাম কত : আজকের পেঁয়াজের বাজার দর
আরেক ক্রেতা, মিজানুর রহমান জানাচ্ছেন, আগে অন্তত আলুভর্তা করে ভাত খাওয়া যেত, কিন্তু এখন সে উপায়ও নেই কারণ আলুর দাম অনেক বেড়ে গেছে। পলাশবাড়ীর তালুকজামিরা বাজারের ক্রেতা সঞ্চয় মাহমুদ বলছেন, বাজারের এই অবস্থায় কোনো কিছু কিনতে তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার জানান, তিনি নিজেও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য এবং বাজারে গিয়ে দ্রব্যমূল্য দেখে চাপে আছেন। তবে তিনি আশা করছেন, আমন ধান বাজারে আসলে চালের দাম কিছুটা কমবে।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন