মূল্যস্ফীতির চাপে নাভিশ্বাস চরমে- সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে সাধারণ মানুষ

সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে সাধারণ মানুষ

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে রীতিমতো ‘নাভিশ্বাস’ উঠেছে সীমিত আয়ের মানুষের। ফলে সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে সাধারণ মানুষ । সঞ্চয়পত্র এখন আর এত আকর্ষণীয় নয়। মানুষরা সঞ্চয় করতে চায়, কিন্তু সর্বশেষ কয়েকটি বছরে কিছু সমস্যা দেখা যাচ্ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সঞ্চয় করা থেকে বিরত হচ্ছে এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাচ্ছে, আর তার মূল্যও কম হচ্ছে। এই সমস্যার ফলে, আমরা আরও অধিক ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছি, এবং আমাদের সরকার এই ঋণের মুনাফা প্রদান করতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন : ফ্রি লটারী খেলে টাকা ইনকাম করার পদ্ধতি

সব মিলিয়ে আর্থিক সংকট, ব্যাংকে মুনাফা কম ও বিনিয়োগে নানা শর্তের কারণে জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমছে। যার ফলে তিন মাসে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ না বেড়ে উল্টো ঋণাত্মক হয়েছে। এই তিন মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে কোনো ঋণ পায়নি সরকার। এ সময় সরকার রাষ্ট্রীয় কোষাগার ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে ১ হাজার ২৬৫ কোটি টাকা শোধ করেছে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেপ্টেম্বর মাসে ৬,৭৪৫.৭৯ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, এর মধ্যে ৬,৮৯৩ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। সঞ্চয়পত্রের আসল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের পর, সেপ্টেম্বরে মাসে সরকারের নিট ঋণ (ঋণাত্মক) দাঁড়িয়েছে ১৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

আরও পড়ুন : বাংলাদেশে অনলাইনে টাকা ইনকাম করার সহজ উপায় 2024

প্রতিবেদনে আরও জানা যায় যে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ২১,৬৫৬.৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, এর মধ্যে ২২,৯২১.২ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের পর, তিন মাসে সরকারের নিট ঋণ (ঋণাত্মক) দাঁড়িয়েছে ১,২৬৪.৯৭ কোটি টাকা।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “সঞ্চয়পত্র স্কিমগুলোতে বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর নির্দিষ্ট সময় পরপর সুদ প্রদান করে সরকার। মেয়াদপূর্তির পরে বিনিয়োগকৃত অর্থও ফেরত প্রদান করা হয়। প্রতি মাসে বিক্রি হওয়া সঞ্চয় স্কিমগুলো থেকে প্রাপ্ত বিনিয়োগের হিসাব থেকে আগে বিক্রি হওয়া স্কিমগুলোর মূল ও মুনাফা বাদ দিয়ে নিট ঋণ হিসাব করা হয়। কিন্তু মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ সঞ্চয়পত্র কেনার প্রবণতা কমেছে। আর সুদের হার হ্রাস ও শর্তের বেড়াজালে মানুষের মধ্যে সঞ্চয়পত্র কেনার প্রবণতা কমেছে।”

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৬৩%, এবং খাবারের মূল্যস্ফীতি ছিল ১২.৩৭%।

আরও পড়ুন: কত বছর খাজনা না দিলে জমি খাস হয়ে যায়

গত অর্থবছরে ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থাকলে, রিটার্নের সনদ দিতে হয়। এছাড়াও, ২০২০ সালে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে আনা হয়। এ ছাড়া, ২০১৯ সালে মুনাফা উপর কর করের হার ৫% থেকে ১০% বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

সবমিলিয়ে বলা যায় যে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে রীতিমতো ‘নাভিশ্বাস’ উঠায় সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে সাধারণ মানুষ ।

 Juger Alo Google News  যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন