বাংলাদেশে মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যানবাহনের জন্য মোটর বীমা করা এখন আবারও বাধ্যতামূলক হচ্ছে। এই নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনো মোটরসাইকেল মালিক যদি তার যানবাহনের জন্য বীমা না করান, তাহলে তাকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হবে। এই নিয়ম সড়ক পরিবহন সংশোধন আইন, ২০২৪-এর খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: অনলাইনে জমির মালিকানা বের করার উপায়
এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনের মূল উদ্দেশ্য হলো সড়কে চলাচলকারী সব ধরনের যানবাহনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা। বীমা না থাকলে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে যাত্রী ও পথচারীর ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে বিপাকে পড়তে হয়, যা এই নতুন নিয়মের মাধ্যমে এড়ানো সম্ভব হবে।
প্রস্তাবিত সংশোধনীর বিষয়বস্তু
– সব ধরনের যানবাহনের জন্য বিমা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে
– বিমা না করলে মোটরযানের মালিকদের ৩,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে
– সড়ক পরিবহন আইনে একটি নতুন উপধারা সংযোজন করা হচ্ছে
বিমা খাতের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন আহমেদ এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক বলে মনে করেন। তিনি মনে করেন এটি বিমা খাত এবং যানবাহন মালিকদের জন্য ভালো হবে।
পটভূমি
– ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনে বিমা বাধ্যতামূলক ছিল না
– অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ২০২৩ সালের মার্চে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিমা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব পাঠায়
– প্রধানমন্ত্রী ২০২৩ সালের ১ মার্চ জাতীয় বিমা দিবসে বিমা ছাড়া কোন যানবাহন যাতে চলাচল করতে না পারে সে নির্দেশনা দেন
মোটর বিমা না করার প্রভাব
– বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মতে, বিমা বাধ্যতামূলক না থাকায় সরকার প্রতি বছর ৮৭৮ কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে
– এর মধ্যে কর ও ভ্যাট বাবদ ৮৪৯ কোটি এবং স্ট্যাম্প ডিউটি বাবদ ২৮ কোটি টাকা
বর্তমান আইনে কী আছে
বাংলাদেশের বর্তমান সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ অনুযায়ী, যানবাহন বিমা সংক্রান্ত চারটি বিশেষ উপধারা রয়েছে। এই উপধারাগুলো অনুসারে, যানবাহনের মালিক বা প্রতিষ্ঠান চাইলে তাদের মালিকানাধীন যানবাহনের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রীর জীবন ও সম্পদের বিমা করাতে পারবে।
একটি অন্য উপধারা অনুযায়ী, যানবাহনের মালিক বা প্রতিষ্ঠানকে তাদের পরিচালিত যানবাহনের জন্য নিয়ম অনুযায়ী বিমা করাতে হবে, যাতে যানবাহনের ক্ষতি বা নষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রে বিমাকারীর মাধ্যমে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন
- সরকারি খরচে ৫টি শীর্ষ পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ – কোর্স শেষে সরাসরি চাকরির সুযোগ!
- ২-৩ লাখ টাকা হাতে? সঞ্চয়পত্র নাকি এফডিআর—কোথায় বিনিয়োগ করে বেশি লাভ পাবেন?
- ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় শক্তি: আতঙ্কে উপকূল, কী হতে পারে সামনে?
- বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে বড় পরিবর্তন: বয়সসীমা তুলে দিল সরকার
- অধ্যাপক ইউনুসের পদত্যাগ নিয়ে আলোচনা- কি নতুন মোড় আনছে?
তৃতীয় উপধারা বলছে যে, যানবাহন দুর্ঘটনায় পড়লে বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা নষ্ট হলে সেটির জন্য আর্থিক সহায়তা তহবিল থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ দাবি করা যাবে না। অবশেষে, চতুর্থ উপধারা অনুযায়ী, বিমার শর্ত, দায়দায়িত্বের সীমা, দেউলিয়াত্ব, দাবি পরিশোধ, বিরোধ নিষ্পত্তি, বিমা সনদের কার্যকারিতা ও হস্তান্তর এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত হবে
সারসংক্ষেপ
সরকার সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন করে সব ধরনের যানবাহনের জন্য মোটর বীমা আবার বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে বিমা না করলে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এই পদক্ষেপ বিমা খাত ও যানবাহন মালিকদের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করা হচ্ছে। বিমা বাধ্যতামূলক না থাকায় সরকার প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল।
![]() ![]() |
1 thought on “এখন থেকে বীমা না থাকলে গুনতে হবে জরিমানা”