ডিবি হারুন এর নির্মিত ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’ এখন একেবারে অব্যবহৃত হয়ে পড়ে আছে এবং সেখানে শিয়াল-কুকুরের অবাধ বিচরণ চলছে। কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে অবস্থিত এই বিলাসবহুল রিসোর্ট একসময় ছিল ধনী, ক্ষমতাধর এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল। তবে আজ এটি অন্ধকারে ডুবে আছে, নেই কোনও আলোকসজ্জা বা দামি গাড়ির বহর, এবং হেলিকপ্টারের কোনও শব্দও শোনা যায় না।
আরও পড়ুন: অস্থির বাংলাদেশ সচিবালয়: কাজের চেয়ে আলোচনা বেশি
‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’-এর মালিকানা রয়েছে ডিবি পুলিশের সাবেক প্রধান হারুন অর রশিদের ছোট ভাই ডাক্তার শাহরিয়ার। রিসোর্টটি ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করা হয়। এটি হাওরঘেঁষা মিঠামইনের ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে ৪০ একর জমির উপর তৈরি করা হয়। রিসোর্টটিতে রয়েছে অত্যাধুনিক সুইমিংপুল, হেলিপ্যাড এবং ৪০টি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বিশ্রাম কক্ষ। এর প্রিমিয়াম স্যুটের প্রতিদিনের ভাড়া ২০ হাজার টাকা এবং ডিলাক্স রুমের ভাড়া ১০ হাজার টাকা।
একসময় এটি ছিল মন্ত্রী, এমপি, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের এবং চলচ্চিত্রের তারকাদের একটি প্রিয় গন্তব্য। তাদের বিলাসবহুল গাড়ি ও হেলিকপ্টার সেখানে নিয়মিত আসত। তবে, বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন। হারুন অর রশিদ যখন ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’ তৈরি করেছিলেন, তখন এটি ছিল একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং জনপ্রিয় স্থান, কিন্তু এখন এটি পরিণত হয়েছে একটি ভুতুড়ে স্থানে। একসময়ের আকর্ষণীয় রিসোর্টটি বর্তমানে শিয়াল-কুকুরের দখলে রয়েছে এবং আর আগের মতো জমকালো পরিবেশ এখানে নেই।
আরও পড়ুন: কখন কোন সময়ে নির্বাচন হবে, জানালেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস
এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার পতন হয় এবং হারুন অর রশিদ তার ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’সহ অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলেন। তার পর থেকে রিসোর্টটি আগের অবস্থানে ফিরে আসেনি এবং এটি এখন অযত্নে পড়ে রয়েছে। এক সময়ের এই বিলাসবহুল রিসোর্টটির ফাঁকা কক্ষে এখন শুধুই শিয়াল-কুকুরের হেঁটে চলা এবং পুরনো দিনের গৌরব হারিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখা যায়।
ডিবি হারুন এর ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’ এর আগে ছিল ক্ষমতার প্রতীক, কিন্তু এখন এটি ক্ষমতা ও প্রাচুর্যের হারিয়ে যাওয়ার এক প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ এবং সেলিব্রেটিদের জন্য এটি ছিল এক নিরাপদ আশ্রয়স্থল, যেখানে তারা তাদের অনাচার ও বিলাসিতার জীবন কাটাতেন। তবে আজ সেই রিসোর্টের এক চিলতে আলো এবং জীবনের ঝলকানিও অনুপস্থিত। এটি এখন সম্পূর্ণভাবে অবহেলিত, যেন এক সময়ের গৌরব থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন