দিনাজপুরে আমির হামজার কুরআন মাহফিলে ১০ সনাতনী হিন্দুর ইসলাম গ্রহণ!

আমির হামজা

এই লেখাটি নবাবগঞ্জে অনুষ্ঠিত একটি কুরআন মাহফিল এবং ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হওয়া এক পরিবারের ১০ জন সদস্যের জীবনকে কেন্দ্র করে। এই ঘটনাটি দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার ভাদুরিয়া বাজারে অবস্থিত ভাদুরিয়া আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া মাজিদিয়া হাফিজিয়া ও এতিমখানা মাদ্রাসায় ৯ম বার্ষিকী তাফসীরুল কোরআন মাহফিলের প্রেক্ষাপটে ঘটে। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত আলেম মুফতি আমির হামজা ।

আরও পড়ুন: জান্নাতে যেতে চান? পালন করুন ৪টি গুরুত্বপূর্ণ আমল

কুরআন মাহফিলের আয়োজন:

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে, এই মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় বিএডিসি’র উপ প্রধান প্রকৌশলী ডাবলুর সভাপতিত্বে। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত আলেম মুফতি আমির হামজা, যিনি তাফসীরুল কুরআনের মর্ম বোঝানোর মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান জানান। তার বক্তব্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ, নৈতিকতা, এবং মানবজাতির মঙ্গলার্থে কুরআনের গুরুত্ব বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়।

পরিবারের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ:

মাহফিলের শেষে পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে আগত একটি হিন্দু পরিবারের ১০ জন সদস্য ইসলামের পথে আসার সিদ্ধান্ত নেন। তারা মুফতি আমির হামজার কাছে কুরআনের মর্ম বুঝে এবং তার ভাষণের অনুপ্রেরণায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ধর্মান্তরিত হওয়া এই পরিবারটির সদস্যরা আগে সনাতন ধর্মাবলম্বী ছিলেন এবং তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর নিজেদের জন্য নতুন মুসলিম নাম গ্রহণ করেন।

আরও পড়ুন: টয়লেটযুক্ত গোসলখানায় অযু করার সময় দোয়া পড়া যাবে কি?

পরিবারের সদস্যদের পরিচয়:

১. অজিতন (৭৫) – ইসলাম গ্রহণের পর তিনি এখন আমিছা নামে পরিচিত।
২. কন্দল (৫০) – বর্তমানে তার নাম হযরত আলী
৩. ফেলানী (৪৫) – নতুন নাম ফাতেমা খাতুন
৪. রূপম কুমার (৩২) – ইসলাম গ্রহণের পর এখন তার নাম হাসান মাহমুদ
৫. আগুন দাস (২০) – তার নতুন নাম আবীর হোসেন
৬. বৃষ্টি (১৫) – তিনি বর্তমানে ফারিয়া জান্নাত নামে পরিচিত।
৭. টুপি রানী (২৭) – নতুন নাম জামিলা খাতুন
৮. জয় (১০) – এখন তার নাম মোঃ জুনায়েদ
৯. জয়া (৭) – ইসলাম গ্রহণের পর তার নাম হয় হাসনাহেনা
১০. জ্যোতি (৬) – নতুন নাম হুমায়রা

ইসলামের পথে আসার কারণ:

এই পরিবারের ধর্মান্তরিত হওয়ার প্রধান কারণ ছিল কুরআনের শিক্ষায় তাদের আকৃষ্ট হওয়া। মুফতি আমির হামজার তাফসীর বয়ান থেকে তারা ইসলামের মৌলিক শিক্ষা, সহমর্মিতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, এবং জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানার সুযোগ পান। এই উপলব্ধি তাদের জীবনে গভীর পরিবর্তন আনে এবং তারা এক স্রষ্টার প্রতি আত্মসমর্পণ করার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করেন।

আরও পড়ুন: সুন্নত নামাজের গুরুত্ব ও ঘরে নামাজ আদায়ে হাদিসে যা বলা হয়েছে

মাহফিলের ভূমিকা:

এই কুরআন মাহফিলের উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষকে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষার সঙ্গে পরিচয় করানো এবং তাদের মনে আধ্যাত্মিকতার বীজ বপন করা। প্রখ্যাত আলেমদের উপস্থিতি এবং তাদের বক্তব্য সাধারণ মানুষের জীবনে নতুন উপলব্ধির জন্ম দেয়। ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, শান্তি, এবং সহানুভূতির শিক্ষা তাদের আলোকিত করে।

মুফতি আমির হামজা তার বক্তব্যে ইসলাম ধর্মের মর্মার্থ তুলে ধরেন এবং যারা সত্যের সন্ধান করছেন তাদের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম, যা মানবজাতির মঙ্গল এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য একমাত্র পথ।”

ইসলাম গ্রহণের প্রভাব:

ধর্মান্তরিত হওয়া এই পরিবারটি স্থানীয় জনগণের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। তাদের ইসলাম গ্রহণ অনেকের মনে নতুন প্রশ্নের জন্ম দেয় এবং কুরআনের প্রতি আগ্রহ বাড়ায়। অনেকেই এই মাহফিল থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের প্রতি আগ্রহী হন।

আরও পড়ুন: জুমার দিন যে আমলে ৮০ বছরের গুনাহ মাফ, না জানলে জেনে

পরিবারের সদস্যরা তাদের নতুন জীবনে সুখী এবং আশাবাদী বলে জানিয়েছেন। তারা বিশ্বাস করেন যে ইসলামের শিক্ষা তাদের জীবনে সঠিক পথ দেখাবে এবং পার্থিব ও পারলৌকিক জীবনে সফলতা এনে দেবে।

উপসংহার:

এই ঘটনাটি শুধু একটি পরিবারের ধর্মান্তরকরণের কাহিনী নয়, বরং মানুষের জীবনে ইসলামের সঠিক শিক্ষা কীভাবে প্রভাব ফেলে তা দেখায়। নবাবগঞ্জের এই মাহফিল থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তারা জীবনের নতুন পথ বেছে নেয়।

Juger Alo Google News যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন