আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.) ছিলেন ইসলামের একজন মুমিন সাহাবি, যাঁকে নিয়ে আল্লাহ তায়ালা কোরআনের ১৬টি আয়াত নাজিল করেছেন। ঘটনাটি এই রকম যে, একদিন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কুরাইশের কয়েকজন নেতাকে ইসলাম সম্পর্কে দাওয়াত দিচ্ছিলেন এবং আল্লাহর শিক্ষার মূল দিকগুলি তাদের কাছে বর্ণনা করছিলেন।
সেই সময় আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.), যিনি একজন অন্ধ সাহাবি, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে অনুরোধ করলেন, “ইয়া রাসুলুল্লাহ, আল্লাহ যা আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন, তার কিছুটা আমাকে শিখিয়ে দিন।” মহানবী (সা.) সেই মুহূর্তে কুরাইশ নেতাদের সাথে গভীর আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন, তাই তিনি এক দৃষ্টিতে একটু বিরক্তির ভাব নিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেন এবং আলাদা করে ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.)-এর দিকে মনোযোগ দেননি।
আরও পড়ুন: প্রশ্নও উঠেছিল হাফেজ হতে পারবো কি না: বিশ্বজয়ী হাফেজ মুয়াজ
এই ঘটনার পরপরই আল্লাহতায়ালা এই বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার জন্য ওহি নাজিল করেন। আল কোরআনের সুরা আবাসার প্রথম ১৬টি আয়াতে বলা হয়, “সে (মুহাম্মদ) ভ্রু কুঁচকে মুখ ফিরিয়ে নিল, কারণ তার কাছে এক অন্ধ এসেছিল। তুমি ওর সম্পর্কে কী জান? সে হয়তো পরিশুদ্ধ হতো বা উপদেশ নিত কিংবা উপদেশ থেকে উপকার পেত? যে নিজেকে বড় ভাবে, তার প্রতি বরং তোমার মনোযোগ! যদি সে নিজেকে পরিশুদ্ধ না করে, তবে তাতে তোমার কোনো দোষ হতো না। অথচ যে তোমার কাছে ছুটে এল, আর এল ভয়ে ভয়ে, তাকে তুমি অবজ্ঞা করলে! কখনোই এমন করো না; এটি একটি উপদেশবাণী।”
কোরআনের আয়াত গুলো থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.)-এর প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মনোযোগ প্রত্যাশা করেছিলেন। ওহি নাজিল হওয়ার পর রাসুল (সা.) ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.)-কে সম্মান করতে শুরু করেন। তিনি যখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আসতেন, রাসুল (সা.) তাঁকে সাদরে গ্রহণ করতেন, কাছে বসাতেন, তাঁর খোঁজখবর নিতেন এবং প্রয়োজন হলে সহযোগিতা করতেন।
আরও পড়ুন: ৮ বছর বয়সে ৮ মাসে কোরআনের হাফেজ হলেন শিশু নাফিউল ইসলাম
ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.)-এর ছিল অতুলনীয় ইমান এবং দৃঢ় আস্থা। তিনি ছিলেন ইসলামের প্রথম পর্বের একজন সাহাবি এবং কুরাইশদের পীড়ন-জুলুমের শিকার হয়েও তাঁর বিশ্বাসে অটল ছিলেন। মক্কার সেই কঠিন সময়ে তিনি এবং আরও কয়েকজন সাহাবি ইসলামের পথে অবিচল ছিলেন। মদিনায় হিজরতের পর রাসুল (সা.) তাঁকে এবং বিলাল ইবনে রাবাহ (রা.)-কে মুয়াজ্জিন হিসেবে নিয়োগ করেন। বিলাল (রা.) সাধারণত আজান দিতেন এবং ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.) ইকামত দিতেন। আবার কখনো কখনো তাঁরা নিজেদের মধ্যে এই দায়িত্ব পরিবর্তন করতেন। ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.) মদিনায় মুসলমানদের নামাজের জন্য আহ্বান জানাতেন এবং কোরআনের শিক্ষাও দিতেন। তিনি ছিলেন এমন একজন সাহাবি, যিনি কোরআন শেখানোর জন্য অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন এবং মদিনাবাসীদের কোরআনের শিক্ষা দিতেন।
ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.)-এর কোরআনের প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং ইসলামের প্রতি অটল বিশ্বাস তাঁকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আরও প্রিয় করে তোলে। আল্লাহর রাসুল (সা.) তাঁকে খুব ভালোবাসতেন এবং তাঁকে আলাদা মর্যাদা দিতেন। এই ঘটনাটি আমাদের জন্য বিশেষ শিক্ষণীয়, যেখানে বোঝা যায় আল্লাহ কারো শারীরিক অসুবিধা দেখেন না, বরং তাঁর অন্তরের ইমান এবং আল্লাহর প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা এবং আগ্রহকেই মূল্যায়ন করেন।
এই ঘটনার মাধ্যমে আমরা শিক্ষা পাই যে, একজন মানুষের অবস্থান বা শারীরিক অক্ষমতা কখনোই তাঁর মর্যাদা নির্ধারণ করে না। আল্লাহ তাঁর ইবাদত এবং ইমানের ভিত্তিতে মানুষকে সম্মান দেন এবং মর্যাদা দান করেন।
যুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
2 thoughts on “এক সাহাবিকে নিয়ে কোরআনের ১৬ আয়াত নাজিল হয়”