কোরআন হিফজ বা পুরো কোরআন মুখস্ত করা পৃথিবীর অন্যতম কঠিন কাজ। এই চ্যালেঞ্জিং কাজটি করতে গিয়ে এক সময় প্রশ্ন উঠেছিল—আমি আদৌ হাফেজ হতে পারবো কি না। সম্প্রতি এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে নিজের হিফজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে এসব কথা বলেন বিশ্বজয়ী হাফেজ মুয়াজ মাহমুদ।
আরও পড়ুন: ৮ বছর বয়সে ৮ মাসে কোরআনের হাফেজ হলেন শিশু নাফিউল ইসলাম
বিশ্বজয়ী হাফেজ মুয়াজ এর বিশ্বজয়ের কাহিন
বিশ্বজয়ী হাফেজ মুয়াজ মাহমুদের জীবন কাহিনি অনুপ্রেরণার এক অসাধারণ উদাহরণ। হাফেজ হওয়া যেমন কঠিন একটি কাজ, তেমনি এর জন্য নিরলস পরিশ্রম ও আত্মনিবেদন প্রয়োজন। মুয়াজ কোরআন হিফজ বা পুরো কোরআন মুখস্ত করতে গিয়ে একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন।
এই দীর্ঘ ও কষ্টসাধ্য পথ অতিক্রম করতে গিয়ে এমনও সময় এসেছে, যখন তাকে নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল—তিনি আদৌ হাফেজ হতে পারবেন কি না। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে নিজের হিফজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে মুয়াজ এসব কথা তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: ৪৯ দিনেই কোরআন হিফজ করলো শিশু হাবিব, দোয়া নিতে চায় শায়খ আহমাদুল্লাহ
মুয়াজ বলেন, “কোরআন হিফজ মানে হলো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি হরফ আয়ত্ব করা। এটি অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। সাধারণ মেধার কারো পক্ষে এ কাজ করা সহজ নয়। আল্লাহ যাদের ওপর দয়া করেন, তারাই এ পথ পাড়ি দিতে পারেন।” তিনি আরও জানান, আল্লাহর সাহায্য, তার শিক্ষকের স্নেহপূর্ণ দিকনির্দেশনা ও পরিবারের অটুট সহযোগিতা ছাড়া এই কাজ সম্ভব হতো না।
আরও পড়ুন: সূরা ওয়াকিয়া: যে দোয়া পড়লে দারিদ্রতা কাছেও ঘেঁষতে পারবে না
কোরআন হিফজের যাত্রায় মুয়াজের জন্য বেশ কয়েকটি বাঁধা আসায় তাকে পড়াশোনার ক্ষেত্রে কয়েকবার পিছিয়ে যেতে হয়েছিল। এমন পরিস্থিতি আসে তার হিফজের শুরুর দিকেই। তখন তিনি মাদরাসায় নিয়মিত থাকার পরিবর্তে বাড়িতে বেশী সময় কাটাতে চাইতেন। ফলে পড়াশোনার গতি শ্লথ হয়ে যায়। এভাবে চলতে চলতে এক সময় অনেকেই সন্দেহ করতে শুরু করেন যে, তিনি আদৌ হাফেজ হতে পারবেন কি না। প্রথমবার এমন অবস্থার মুখোমুখি হন, যখন তার পড়াশোনা ১০ পারা পর্যন্ত গিয়েছিল। দ্বিতীয়বার যখন তিনি ১৮ থেকে ২০ পারা পড়া সম্পন্ন করছিলেন, তখনও একই ধরনের সমস্যা হয়।
সংকটময় পরিস্থিতি
এই সংকটময় পরিস্থিতিতে মুয়াজের বড় ভাই তার জন্য বড় ভূমিকা পালন করেন। মুয়াজের ভাই তখন তার মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুফতি মোরতুজা হাসান ফয়েজি মাসুমের সঙ্গে পরামর্শ করেন। পরামর্শ অনুযায়ী মুফতি ফয়েজি নিজেই এই বিষয়টি দেখার প্রতিশ্রুতি দেন এবং মুয়াজকে সমস্যার সমাধান দিতে তার পাশে দাঁড়ান।
আরো পড়ুন: ১২ বছর বয়সে ৬ মাসে কোরআনের হাফেজ হলেন মুনতাছির
এরপর মুয়াজকে ডেকে নানাবিধ পরামর্শ দেন, সাহস ও অনুপ্রেরণা জোগান। তিনি বলেন, “তুমি পড়াশোনা চালিয়ে যাও, আল্লাহর কাছে দোয়া করো। আমি তোমার জন্য দোয়া করবো।” শিক্ষকের এই কথা ও স্নেহভরা দিকনির্দেশনা তাকে নতুন করে উদ্যম দেয়। সেই উদ্যমে তিনি আবার নতুন করে হিফজ শুরু করেন।
আল্লাহর রহমত, শিক্ষকের মূল্যবান পরামর্শ ও পরিবারের সহযোগিতার ফলে মুয়াজ তার হিফজের যাত্রায় এগিয়ে যেতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত তিনি হিফজ সম্পন্ন করে একটি আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন, যেখানে তিনি বিজয়ী হন। তার এই অসাধারণ সাফল্য শুধু তার নিজের জন্যই নয়, বরং বাংলাদেশের জন্যও একটি গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
মুয়াজ মাহমুদের এই গল্প কেবল একজন কোরআন মুখস্তকারীর গল্প নয়, এটি এক সংগ্রামী পথচলার গল্প, যা বহু মানুষকে অনুপ্রেরণা যোগাতে পারে। তিনি এমন একটি কাজ সম্পন্ন করেছেন যা সাধারণ মানুষের জন্য প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করা হয়। কঠিন সময়েও তিনি হাল ছাড়েননি, বরং আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে তার লক্ষ্যে অটুট থেকেছেন।
1 thought on “প্রশ্নও উঠেছিল হাফেজ হতে পারবো কি না: বিশ্বজয়ী হাফেজ মুয়াজ”