ক্রিকেটের ইতিহাসে ভারত বনাম নিউজিল্যান্ড এর লড়াই এক ধরনের মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। বিশেষ করে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে দুই দলের মুখোমুখি হওয়া এক ঐতিহাসিক ঘটনা। আজ থেকে ২৫ বছর আগে, ২০০০ সালে, এই দুই দল প্রথমবারের মতো একই মঞ্চে, একই ফাইনালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। সেই ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ভারতকে হারিয়ে তাদের প্রথম বৈশ্বিক শিরোপা অর্জন করেছিল। তারপরেও এই দুই দল একে অপরের বিপক্ষে কিভাবে পারফর্ম করেছে, তার হিসাব নেওয়া দরকার।
এই লেখায় আমরা ২০০০ সালের ঐতিহাসিক ম্যাচ থেকে শুরু করে, চলতি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পরিসংখ্যানের বিশ্লেষণ এবং দুই দলের বর্তমান অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। কীভাবে দুই দল সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের অবস্থান তৈরি করেছে, সেটা জানবো এবং শেষ পর্যন্ত ফাইনাল ম্যাচে কে এগিয়ে থাকবে, তা নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ফাইনালের ফলাফল কী হতে পারে, সেটি পর্যালোচনা করব।
২০০০ সালের ঐতিহাসিক ফাইনাল: ভারত বনাম নিউজিল্যান্ড
২০০০ সালে, ভারত এবং নিউজিল্যান্ডের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে যেটি হয়েছিল, সেটি একটি স্মরণীয় ম্যাচ। ভারতের দল তখন ছিল সৌরভ গাঙ্গুলির নেতৃত্বে, যার মধ্যে শচীন টেন্ডুলকার, সুনীল গাভাস্কার, ও অজিত আগারকর মতো ক্রিকেটাররা ছিলেন। ভারতীয় দল ফাইনালে ব্যাট করতে নেমে প্রথমে ২৬৪ রান করে। সৌরভ গাঙ্গুলির ১১৭ রানের ইনিংস এবং শচীন টেন্ডুলকারের ৬৯ রানের উপর ভিত্তি করে ভারত একটি সম্মানজনক রান সংগ্রহ করেছিল। তবে ভারতীয় মিডল অর্ডার কিছুটা ধীরগতির ছিল এবং তারা আরও বেশি রান সংগ্রহ করতে পারলে ম্যাচের ফলাফল অন্যরকম হতে পারত।
নিউজিল্যান্ড, যে দলটি তার প্রথম বৈশ্বিক শিরোপা জয়ের অপেক্ষায় ছিল, সেই দলটি ক্রিস কেয়ার্নসের অপরাজিত শতকের মাধ্যমে ভারতের লক্ষ্য ২৬৫ রানকে সহজেই অতিক্রম করে। এটি ছিল নিউজিল্যান্ডের প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা, যা তাদের ক্রিকেট ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
এই জয়টি শুধু নিউজিল্যান্ডের জন্যই বড় ছিল না, বরং তাদের ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি বড় মাইলফলক হয়ে দাঁড়ায়। তবে পরবর্তী সময়ে ২০১৫ এবং ২০১৯ বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড দুটি ফাইনাল খেললেও, তারা দুটি ম্যাচেই ভারতকে হারাতে পারেনি। এই পরাজয়গুলো তাদের জন্য দুঃখজনক ছিল, কিন্তু তাদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবস্থান পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছিল।
ভারত বনাম নিউজিল্যান্ড: পরবর্তী যুগের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি
২০১৫ এবং ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের পরাজয়ের পর, ২০২৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আবার এই দুই দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বর্তমান সময়ে ভারতের দল আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। গত কয়েক বছর ধরেই ভারতীয় ক্রিকেট দলের উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেখানে নিউজিল্যান্ডও তার আগের পর্যায়ের চেয়ে আরও পরিণত হয়েছে। ফাইনালে ভারত বনাম নিউজিল্যান্ডের এই লড়াই শুধু দুই দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি ক্রিকেট বিশ্বে একটি বড় আলোচনার বিষয়।
আরও পড়ুন
আরো পড়ুন: ২০২৫ সালে মাসে ৫ হাজার ডলার প্যাসিভ ইনকাম অর্জন করার ৭ উপায়


বর্তমান সময়ে ভারত বনাম নিউজিল্যান্ড
চলতি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুই দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স কেমন ছিল? চলুন পরিসংখ্যান দিয়ে তা বিশ্লেষণ করি।
ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ
ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ আজকের দিনে একদম শক্তিশালী। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, শ্রেয়াস আইয়ার, এবং হার্দিক পান্ডিয়ার মতো ক্রিকেটাররা যে কোনো দলকেই ভয় দেখানোর জন্য যথেষ্ট। বিশেষ করে বিরাট কোহলি, যিনি ভারতের সবচেয়ে বড় ব্যাটিং স্তম্ভ, তিনি এই টুর্নামেন্টে খুবই ভালো ফর্মে আছেন। চার ম্যাচে ২১৭ রান সংগ্রহ করেছেন এবং বর্তমানে রান সংগ্রাহকের তালিকায় ৪র্থ স্থানে অবস্থান করছেন। তার সঙ্গে শ্রেয়াস আইয়ারও ১৯৫ রান করেছেন এবং ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপের শক্তি বাড়িয়েছেন।
রোহিত শর্মা, যিনি খুবই অভিজ্ঞ এবং শক্তিশালী ব্যাটার, তার উপরও দৃষ্টি রাখা উচিত। এই টুর্নামেন্টে তিনি ভারতকে অনেক বড় রান সংগ্রহে সহায়তা করেছেন। ভারতীয় ব্যাটিংয়ের শক্তি তাদের ফাইনালে যাওয়ার জন্য একটা বড় উপাদান।


নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ
নিউজিল্যান্ডও তাদের ব্যাটিংয়ে বেশ শক্তিশালী দল গঠন করেছে। রাচিন রবীন্দ্র, যিনি এবারের টুর্নামেন্টে দারুণ পারফরম্যান্স করেছেন, তাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তিনি ৩ ম্যাচে ২২৬ রান সংগ্রহ করেছেন এবং দুটিতে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। রাচিন রবীন্দ্র বর্তমানে রান সংগ্রাহকের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। তার ফর্ম যদি ফাইনালে অব্যাহত থাকে, তাহলে ভারতীয় বোলারদের জন্য তা বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
এছাড়া, কেইন উইলিয়ামসন ও টম ল্যাথামও ভারতের বোলিংয়ের বিরুদ্ধে শক্তিশালী লাইনআপ তৈরি করেছেন। এই দুই ব্যাটারেরও শেয কিছু বড় ইনিংস আছে, যা তাদের দলের হয়ে মঙ্গলজনক হতে পারে।
বোলিং পারফরম্যান্স
বোলিংয়ের ক্ষেত্রে, ভারতীয় দলের অবস্থান কিছুটা পিছিয়ে থাকতে পারে। তবে মোহাম্মদ শামি ও বরুণ চক্রবর্তির মতো অভিজ্ঞ বোলাররা ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। শামি ৮ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে এবং চক্রবর্তি ৭ উইকেট নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন।
নিউজিল্যান্ডের পেসার ম্যাট হেনরি, যিনি গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ভারতীয় দলকে চাপে ফেলেছিলেন, তিনি এখন পর্যন্ত ১০ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট টেকার। তার বোলিং যদি এই ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে একইভাবে সফল হয়, তবে নিউজিল্যান্ডকে এগিয়ে রাখবে। তার সঙ্গে মিচেল স্যান্টনারও ৭ উইকেট নিয়ে বোলিং তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছেন।
ভারতের সুবিধা: এক মাঠে খেলা
এবার আলোচনা করি ফাইনাল ম্যাচের জন্য ভারতের সুবিধা। ভারতীয় দল এই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রতিটি ম্যাচ এক মাঠে খেলেছে। এক জায়গায় খেলার ফলে ভারতীয় দলের জন্য মানসিক সুবিধা পাওয়া সম্ভব হয়েছে। তারা এই মাঠে অভ্যস্ত এবং নিজের দক্ষতা অনুযায়ী খেলতে পেরেছে।
অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ড দলকে টুর্নামেন্টের প্রথম পর্বে লাহোর, করাচি, রাওয়ালপিন্ডি, এবং দুবাই বিভিন্ন মাঠে খেলে আসতে হয়েছে। তাদের জন্য একাধিক মাঠে খেলার ফলে মাঠের সাথে মানিয়ে নেওয়া একটু কঠিন ছিল।
কে হবে চ্যাম্পিয়ন?
সবশেষে, ভারত বনাম নিউজিল্যান্ডের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে কে এগিয়ে থাকবে? পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে নিউজিল্যান্ড কিছুটা এগিয়ে থাকলেও, ভারতীয় দল ফাইনালে ফেবারিট হিসেবে মাঠে নামবে। ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ, এবং এক মাঠে খেলার সুবিধা তাদের জন্য বড় উপকারে আসবে।
অতএব, চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত ভারত ও নিউজিল্যান্ড। এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে, দুই দলের মধ্যে এই ঐতিহাসিক যুদ্ধে শেষ হাসি হাসবে কে, সেটা জানতে অপেক্ষা করতে হবে।
3 thoughts on “ভারত বনাম নিউজিল্যান্ড: পঁচিশ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মহাযুদ্ধে কে এগিয়ে”