উরুগুয়ে বনাম আর্জেন্টিনা: আলমাদার দুর্দান্ত গোলে জয়, বিশ্বকাপে এক পা দিয়ে রাখল চ্যাম্পিয়নরা

দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল—উরুগুয়ে বনাম আর্জেন্টিনা। প্রতিবারই এই লড়াই ঘিরে তৈরি হয় উত্তেজনা, জেগে ওঠে আবেগ, আর মাঠের প্রতিটি মুহূর্তে ধরা দেয় নাটকীয়তা। তবে এবারের লড়াই ছিল আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ—২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের মঞ্চে একেকটি পয়েন্ট মানে বড় অগ্রগতি।

WhatsApp Group Join Now
Telegram Group Join Now

এমন এক লড়াইয়ে, উরুগুয়ের মাটিতে প্রতিপক্ষকে ১-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে আর্জেন্টিনা।

Juger Alo Google Newsযুগের আলো’র সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন

চ্যাম্পিয়নদের নতুন লড়াই

লিওনেল মেসির নেতৃত্বে ২০২২ সালে কাতারে বিশ্বকাপ জয়ের পর আর্জেন্টিনা যেন নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে উরুগুয়ে বনাম আর্জেন্টিনার এই ম্যাচে ছিলেন না বেশ কয়েকজন তারকা—মেসি, লাউতারো মার্তিনেস, পাওলো দিবালারা মাঠে নামেননি। ফলে অনেকেই ভাবছিলেন, আক্রমণভাগে শক্তি হারাবে আর্জেন্টিনা। কিন্তু সত্যিই কি তারা পিছিয়ে ছিল?

উত্তর হলো না। কারণ মাঠে নেমে দলটি প্রমাণ করে দিল—তাদের দলে প্রতিভার কমতি নেই। তরুণ তিয়াগো আলমাদা ঠিক সময়মতো এগিয়ে এসে যেভাবে গোল করলেন, তা শুধু ম্যাচের ফলই নির্ধারণ করেনি, বরং ফুটবলবিশ্বে আর্জেন্টিনার ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবিও তুলে ধরেছে।

উরুগুয়ে বনাম আর্জেন্টিনা
উরুগুয়ে বনাম আর্জেন্টিনা

ম্যাচের শুরুতেই চাপে পড়ে আর্জেন্টিনা

উরুগুয়ে বনাম আর্জেন্টিনা ম্যাচের শুরু থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, ঘরের মাঠে খেলতে নামা উরুগুয়ে কিছুতেই পিছিয়ে থাকতে চায় না। মেসিহীন আর্জেন্টিনাকে চেপে ধরেই শুরু করে তারা। বল দখলে এগিয়ে থাকলেও (৫৫%) শুরুতে পরিষ্কার কোনও সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না স্বাগতিকরা।

তবে খেলার গতি এবং গঠন শুরু থেকেই ছিল তীব্র। আর্জেন্টিনার মিডফিল্ড ও রক্ষণভাগে দেখা যায় দারুণ সংহতি। তরুণ ফরোয়ার্ড আলমাদা পর্যন্ত মাঝমাঠে নেমে রক্ষণে সহায়তা করছিলেন, যা দলের জন্য ছিল বাড়তি প্রাপ্তি।

প্রথমার্ধে হাতছাড়া সুযোগ

১৯তম মিনিটে প্রথম শট নেয় আর্জেন্টিনা। ডি বক্সের বাইরে থেকে লেয়ান্দ্রো পারেদেসের শট লক্ষ্যে রাখতে না পারলেও ম্যাচে গতি এনে দেয়। এরপর এনসো ফার্নান্দেসের দুর্বল বাঁকানো শটও রুখে দেন উরুগুয়ের গোলরক্ষক রোচেত।

উরুগুয়ে বনাম আর্জেন্টিনা ম্যাচের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট ছিল প্রথমার্ধের ৪৩তম মিনিটে। তিয়াগো আলমাদার তীব্র শট ঝাঁপিয়ে ঠেকালেও ফিরতি বল পেয়ে ফের্নান্দেস যেভাবে শট নিয়েছিলেন, সেটি যদি গোল হতো তবে অনেক আগেই এগিয়ে যেত আর্জেন্টিনা। তবে হোসে হিমেনেসের দুর্দান্ত স্লাইডিং ট্যাকলে সেই সম্ভাবনা ধুলিসাৎ হয়।

আরো পড়ুন: সুপারস্টার ও মেগাস্টারের মধ্যে পার্থক্য কি, অনেকেই জানে না

দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ

দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমে যেন আরও উজ্জীবিত হয় আর্জেন্টিনা। প্রতি আক্রমণে বারবার উরুগুয়ের রক্ষণভাগে আঘাত হানতে শুরু করে তারা। ৪৮ মিনিটে আলমাদার চমৎকার শট কর্নারের বিনিময়ে ফেরান রোচেত। এরপর ফেদেরিকো ভালভার্দের ৩৫ গজ দূরের শটও ঠেকিয়ে দেন এমিলিয়ানো মার্তিনেজ।

তবে শেষ পর্যন্ত ৬৮তম মিনিটে ম্যাচের একমাত্র গোলটি আসে আর্জেন্টিনার তরুণ তারকা তিয়াগো আলমাদার পা থেকে। হুলিয়ান আলভারেসের কাটব্যাকে বল পেয়ে ডি বক্সের বাইরে থেকে আলমাদা যে গতিময় শটটি নেন, তা উরুগুয়ের গোলরক্ষকের নাগালের বাইরে দিয়ে জালে জড়িয়ে যায়। এই গোলেই নির্ধারিত হয়ে যায় ম্যাচের ভাগ্য।

রোচেতের দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্স

উরুগুয়ে বনাম আর্জেন্টিনা ম্যাচে উরুগুয়ের পক্ষে অন্যতম উজ্জ্বল পারফরমার ছিলেন গোলরক্ষক সের্হিও রোচেত। প্রথমার্ধে এবং দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে যেভাবে তিনি একের পর এক গোলের সুযোগ ঠেকিয়েছেন, তাতে আর্জেন্টিনার জয় আরও বড় হতে পারত না বললেই চলে।

শেষ মুহূর্তের নাটক ও লাল কার্ড

ম্যাচের যোগ করা সময়ে, যখন সবাই ধরে নিয়েছে আর কোনও নাটকীয়তা নেই, তখন এক অপ্রয়োজনীয় ফাউলের কারণে সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন আর্জেন্টিনার ফরোয়ার্ড নিকো গঞ্জালেস। যদিও এতে ম্যাচের ফলাফলের কোনো পরিবর্তন আসেনি, তবে পরবর্তী ম্যাচে তার অনুপস্থিতি দলকে প্রভাবিত করতে পারে।

পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে আর্জেন্টিনা

এই জয়ের ফলে ১৩ ম্যাচে ৯ জয় ও ১ ড্র নিয়ে ২৮ পয়েন্ট অর্জন করে লাতিন আমেরিকার শীর্ষে রয়েছে আর্জেন্টিনা। উরুগুয়ে বনাম আর্জেন্টিনা ম্যাচের পর পয়েন্ট তালিকার অবস্থান এমন:

  • ১ম: আর্জেন্টিনা – ২৮ পয়েন্ট
  • ২য়: ইকুয়েডর – ২২ পয়েন্ট
  • ৩য়: ব্রাজিল – ২১ পয়েন্ট
  • ৪র্থ: উরুগুয়ে – ২০ পয়েন্ট
  • ৫ম: প্যারাগুয়ে – ২০ পয়েন্ট
  • ৬ষ্ঠ: কলম্বিয়া – ১৯ পয়েন্ট
উরুগুয়ে বনাম আর্জেন্টিনা
উরুগুয়ে বনাম আর্জেন্টিনা

বিশ্বকাপ নিশ্চিত হওয়ার পথে

এখন আর্জেন্টিনার সামনে আর মাত্র একটি ধাপ। আগামী বুধবার ঘরের মাঠে ব্রাজিলের বিপক্ষে ১ পয়েন্ট পেলেই নিশ্চিত হয়ে যাবে ২০২৬ বিশ্বকাপে তাদের খেলা। উরুগুয়ে বনাম আর্জেন্টিনার এই জয় কেবল একটি ম্যাচ জয় নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য আত্মবিশ্বাস ও মনস্তাত্ত্বিক জয়ও।

ভবিষ্যতের তারা আলমাদা

যখন সবাই লিওনেল মেসিকে খুঁজছিল, তখন তিয়াগো আলমাদা নামের এক তরুণ ফুটবলার নিজেকে প্রমাণ করলেন। তার গোলটিই শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনাকে জয় এনে দেয়। এই ম্যাচ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, আর্জেন্টিনার ভবিষ্যৎ পথচলাও উজ্জ্বল।

শেষ কথা

উরুগুয়ে বনাম আর্জেন্টিনা ম্যাচটি আবারও প্রমাণ করল কেন এই দুই দলের লড়াই সবসময় দর্শকদের হৃদয় কাঁপায়। মাঠে দক্ষতা, কৌশল আর আবেগের দারুণ মিশ্রণে এক রুদ্ধশ্বাস ৯০ মিনিট উপহার পেল ফুটবলপ্রেমীরা। আর আর্জেন্টিনা? তারা কেবল ম্যাচই জেতেনি, বরং বিশ্বকাপের মূল মঞ্চে পৌঁছানোর জন্য আরও একধাপ এগিয়ে গেল।

Leave a Comment